৯ বছর আগের সেই দিন, মমতার এক চিঠিতেই মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন দীনেশ
২০১২ সালের ১৪ মার্চ। সকাল থেকেই খোশমেজাজে তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু, বাজেট পেশ করার আগেও বুঝতে পারেননি আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ম্লান হয়ে যাবে তাঁর মুখের হাসি।
কলকাতা: তৃণমূলের তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা নেতা তিনি ছিলেন না ঠিকই। তবে দিল্লির রাজনীতিতে দীনেশ ত্রিবেদীর (Dinesh Trivedi) রাজনৈতিক গুরুত্ব কম ছিল না। দলকে কার্যত চমকে দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন এ দিন। ভোটমুখী রাজ্যে তাঁর এই পদক্ষেপ যে তৃণমূলের (TMC) জন্য ধাক্কা তা নিয়ে রাজনীতির কারবারিদের মনে কোনও সন্দেহ নেই। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্তকে একেবারের ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মনে করছেন না কেউ কেউ। যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আজ থেকে ৯ বছর আগের একটি ঘটনা। যা সম্ভবত সেই দিনই নাড়িয়ে দিয়েছিল দীনেশ ত্রিবেদীর ‘অন্তরাত্মাকে’।
কয়েক ঘণ্টায় ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল দীনেশের হিসেব-নিকেশ
২০১২ সালের ১৪ মার্চ। সকাল থেকেই খোশমেজাজে তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। জীবনে প্রথমবার রেল বাজেট পেশ করবেন তিনি। কিন্তু, বাজেট পেশ করার আগেও বুঝতে পারেননি আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ম্লান হয়ে যাবে তাঁর মুখের হাসি।
আগের কয়েক বছর যাবত রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি। বাজেটে দীনেশ কিলোমিটার পিছু ২-৩০ পয়সা পর্যন্ত যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে বেজায় অসন্তুষ্ট হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এতটাই যে, সোজা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি লিখে দীনেশ ত্রিবেদীকে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের দাবি তোলেন। পরিবর্তে মুকুল রায়ের নাম পরবর্তী রেলমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করেন মমতা।
মমতার সঙ্গে কথা বলে ইস্তফা দিলেন দীনেশ
সেই সময় ডামাডোলের পরিস্থিতি যাতে না তৈরি হয় তার জন্য যাবতীয় চেষ্টা মনমোহন সিং সরকার করেছিল। তবে সুরাহা হয়নি। নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় ছিলেন মমতা। দলীয় সুপ্রিমো সত্যিই তাঁকে সরাতে চেয়েছেন কিনা জানতে নিজেই মমতাকে ফোন করেন দীনেশ। মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, রেলমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে ত্রিবেদীকে। ভারাক্রান্ত মনে বাজেট পেশ করার ৬ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ ত্রিবেদী।
রেল বাজেটের প্রশংসা করেছিলেন মনমোহন সিং
ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও তাঁর রেল বাজেট প্রশংসিত হয়েছিল সকল মহলে। প্রশংসা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মন্ত্রিসভা থেকে দীনেশের পদত্যাগে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি, রেলের পাঁচটি কর্মচারী সংগঠনও সেই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু, রেলমন্ত্রী হিসেবে দীনেশের যাত্রা শেষ হয়ে যায় এক বছরেরও কম সময়ে।
আরও পড়ুন: পদ্ম-প্রাপ্তির জল্পনা বাড়িয়ে শাহ-নাড্ডা সাক্ষাতে দীনেশ! দিল্লি যাচ্ছেন দিব্যেন্দুও
তার পর থেকেই দীনেশের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু
সেই ঘটনার পর থেকেই একাধিকবার দীনেশ ত্রিবেদীর তৃণমূল ছাড়ার জল্পনা রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়েছে। ২০১৫ সালে তিনি বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ থাকাকালীনও জল্পনা তীব্র হয়েছিল। সেই সময়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছিলেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে এ বারও মোদীর বক্তৃতার প্রশংসা তিনি করেছেন।
আরও পড়ুন: ‘দম বন্ধ হয়ে আসছে’, নাটকীয়ভাবে সাংসদ পদ ছাড়লেন দীনেশ ত্রিবেদী