Coromandel Express derailed: রেলযাত্রা নিরাপদ করতেই জোড়া হয়েছিল বিদেশি প্রযুক্তির LHB কোচ, আদৌ কি সুরক্ষা দিতে সক্ষম?
Coromandel Express: জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই ট্রেনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলেও এক কোচের আর একটি কোচের ওপর উঠে যাওয়া বা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
রেল হল ভারতের লাইফলাইন। লোকাল হোক বা দূরপাল্লা, সব ধরনের ট্রেনে প্রতিনিয়ত বহু যাত্রী যাতায়াত করেন। তাই রেলযাত্রীদের সুরক্ষা আর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কম হয়নি। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুরক্ষাবলয় পোক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। তবে শুক্রবারের দুর্ঘটনা সেই সুরক্ষাবলয় নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও একসঙ্গে তিনটি ট্রেন কীভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে তো ছিল এলএইচবি (LHB) কোচ, যা নাকি যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে পারে কয়েকগুন বেশি! তাহলে কেন এই পরিণতি?
কী এই এলএইচবি কোচ?
সুরক্ষা আর স্বাচ্ছন্দ্যে নাকি রেলের এই কোচের জুড়ি মেলা ভার। আগে রেলে ব্যবহার করা হত আইসিএফ (ICF) ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির কোচ। তার থেকে এলএইচবি উন্নততর বলেই দাবি করা হয়। বিশেষত দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম, এই যুক্তিতেই ভারতীয় রেলের একের পর এক ট্রেনে জুড়েছে এলএইচবি।
দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কা কম বলে দাবি করা হয়
পীযূষ গোয়েল রেলমন্ত্রী থাকাকালীন লোকসভায় সংসদে উত্তর দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই ট্রেনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলেও এক কোচের আর একটি কোচের ওপর উঠে যাওয়া বা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। ফলে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেশি হবে না, এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি। তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চেহারাই বলে দিচ্ছে, এলএইচবি কোচও সামলাতে পারেনি আঘাত।
কী কী সুবিধা থাকে এলএইচবি কোচে?
১. এগুলি স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি হয়, আইসিএফ-এর তুলনায় অনেক হালকা। ১৬০ থেকে ২০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ট্রেন দৌড়তে পারে, এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে ওই কোচ।
২. এই কোচে থাকে ডিস্ক ব্রেক। আর একটু সহজ করে বলতে গেলে, এই কোচের ব্রেক অনেক উন্নততর। ট্রেন সহজেই থেমে যেতে পারে।
৩. এই কোচে হাইড্রলিক সাসপেনশন আর সাইড সাসপেনশন থাকার কারণে যাত্রীরা অনেক বেশি আরামে যাতায়াত করতে পারেন।
৪. কোচগুলির মধ্যে সংযোগ থাকে, তা অনেক বেশি পোক্ত বলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে কম।
পুরনো কোচের সঙ্গে কী তফাৎ?
আইসিএফ কোচ ছিল স্টিলের তৈরি আর নতুন এলএইচবি কোচ হল স্টেনলেস স্টিলের তৈরি। পুরনো কোচ থাকলে ট্রেন থামতে অনেক বেশি সময় লাগত। চালক ট্রেন থামানোর পর কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থামত ট্রেন। আর এলএইচবি কোচ থাকলে খুব কম দূরত্বের মধ্যে, কম সময়েই ট্রেন থামাতে পারেন চালক। পুরনো কোচগুলি হত নীল বা হালকা নীল রঙের আর নতুন কোচের রঙ হয় লাল।
জার্মানির ‘লিঙ্ক হফম্যান বুশ’ (Linke Hofmann Busch) সংস্থা এই কোচ তৈরি করেছিল। সুরক্ষা বাড়াতে বিপুল খরচে সেই কোচ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় রেলের বেশিরভাগ ট্রেনে। যাত্রীরা নিরাপদে, নিশ্চিন্তে গন্তব্য পৌঁছতে পারবেন, এটাই তো কাম্য। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনা যেন সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। বালেশ্বরের বাহানাগায় খেলনা ট্রেনের মতো এদিক-ওদিক পড়ে রয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সেই এলএইচবি কোচ। কাগজের মণ্ডের মতো মুচড়ে গিয়েছে কোনও কোনও বগি। পিষে গিয়েছেন যাত্রীরা।