New Parliament Building: কেন তৈরি হল নয়া সংসদ ভবন? বড় বদল আসতে চলেছে দেশে?
New Parliament Building: তৈরি হয়ে গিয়েছে নয়া সংসদ ভবন। আগামী ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় তৈরি এই ভবনে আর বসবে না সংসদের অধিবেশন।
নয়া দিল্লি: শেষ ইটও পোঁতা হয়ে গিয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ নয়া সংসদ ভবনের। রবিবাসরীয় সকালে মোদীর হাতেই উদ্বোধন হবে দেশের নয়া সংসদ ভবনের। ঔপনিবেশকতার শিকল ছিঁড়ে আত্মনির্ভরতার প্রতীক হতে চলেছে এই নয়া সংসদ ভবন। প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিকের ঘাম ঝড়েছে এই ভবন নির্মাণে। তাঁদের সকলকে সম্মান জানেবেন মোদী। নতুন সংসদ ভবন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দূরদৃষ্টিকে তুলে ধরে, তা গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, ৯৬ বছরের পুরনো বর্তমান সংসদ ভবনের পুনর্নির্মাণ না করে একেবারে ঠিকানা কেন বদলে ফেলা হল?
নয়া সংসদ ভবন নির্মাণের কারণ:
১৯২৭ সালে কাজ শেষ হয় পুরনো সংসদ ভবনের। তখন এটি সংসদ ভবন নয়, ছিল ‘কাউন্সিল হাউস’। ৯৬ বছর আগে এই ভবনের উদ্বোধন করেন ভাইসরয় লর্ড আরউইন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই ‘কাউন্সিল হাউস’-কে সংসদ ভবনে রূপান্তরিত করা হয়। ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৭৫ বছর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পুরনো সংসদ ভবনে ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া থেকে গিয়েছে। আর আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে ঔপনিবেশিকতার শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এবার সেই ঔপনিবেশিকতার আরও এক প্রতীক ঝেড়ে ফেলে নয়া সংসদ ভবনেই বসবে লোকসভার অধিবেশন। তাছাড়াও বর্তমান সংসদ ভবনকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কথা ভেবে ডিজাইন করা হয়নি।
১৯৭৬ সাল থেকে লোকসভার সদস্য সংখ্যায় কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৫২। তবে ভবিষ্য়তে লোকসভার সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রতি ১০ লক্ষ ভোটার পিছু একজন লোকসভার সাংসদ থাকতে হয়। তবে ১৯৭৬ সালে দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বর্তমানে তা অনেকটাই বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে আমাদের ভোটার সংখ্যা ৮৮ কোটি। তাই সাংসদ সংখ্যা হওয়া উচিত ৮৮০ জন সাংসদ। ২০২৬ সালে সাংসদ সংখ্যা বাড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সেই বছরে সাংসদ সংখ্যা বাড়তে পারে। আইনসভার সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ২০২৬ সালে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর একটা সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলে সেই সময় সব সদস্যদের সংসদে বসার জায়গা করে দেওয়ার জন্য বৃহত্তর জায়গার প্রয়োজন পড়বে। যা এই বর্তমান সংসদ ভবনে সম্ভব নয়।
বর্তমান সংসদ ভবনে ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর অবস্থা। এই ভবনের কাঠামোটি বিস্তারিতভাবে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, যদি সংসদের ক্ষমতা সম্প্রসারণ করতে হয় তাহলে একটি নতুন সংসদ ভবনেরই প্রয়োজন হবে। আর তাতেই ভূমিকম্পের সময় সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
বর্তমানে সংসদ ভবনে কী কী সমস্যা:
সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, বর্তমান লোকসভার সেন্ট্রাল হলে আর ফাঁকা জায়গা নেই। আর বিস্তৃতও করা যাবে না। লোকসভায় সর্বোচ্চ ৫৫২ জনই বসতে পারেন। আর সেন্ট্রাল হলে বসতে পারেন ৪৩৬ জন।
বিভিন্ন কারণে ইতিমধ্যেই বর্তমান সংসদ ভবনে জায়গা কম হচ্ছে। আর এই সংসদ ভবনের নকশা বিশদে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, যদি সংসদ ভবনে আসন সংখ্যা বাড়াতে হয়, পরিকাঠামোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে এবং ভূমিকম্পরোধী করে তুলতে হয় তাহলে একটি নতুন সংসদ ভবনেরই প্রয়োজন পড়বে। তবে যৌথ অধিবেশনের সময় ধারগুলিতে কমপক্ষে অতিরিক্ত ২০০ টি অস্থায়ী আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা একেবারেই অসম্মানজনক এবং নিরাপদও নয়।
মন্ত্রীদের জন্য অফিস এবং সভাকক্ষ, ডাইনিং সুবিধা, প্রেসরুম ইত্যাদির মতো সুযোগ-সুবিধাগুলি অপর্যাপ্ত। এর জন্য কিছু অস্থায়ী ব্যবস্থার প্রয়োজন। তবে তা সবসময় আরামদায়ক হয় না। আর এই বিষয়টি মর্যাদাপূর্ণও নয়।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং কার্যকরী থাকার জন্য বছরের পর বছর ধরে এই বিল্ডিংয়ে অনেক সংযোজন এবং পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে বিল্ডিংয়ের কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভবনটির বৈদ্যুতিক, যান্ত্রিক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, আলোকসজ্জা, অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল, অ্যাকাউস্টিক, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম এবং নিরাপত্তা পরিকাঠামো একেবারে পুরনো। সেখানে আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে।
এই বর্তমান সংসদ ভবনে পুনর্নির্মাণকাজ ও বিভিন্ন সংযোজনগুলি অসংবেদনশীলভাবে কার্যকর করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৫৬ সালে বিল্ডিংয়ের বাইরের বৃত্তাকার অংশের উপরে দুটি নতুন তল করা হয়। এই দুটি নতুন ফ্লোর সেন্ট্রাল হলের গম্বুজটি ঢেকে দিয়েছিল। ফলে মূল বিল্ডিংয়ের সামনের অংশের গোটা চেহারাই পরিবর্তন হয়ে যায়। এদিকে জালি জানালা ঢেকে দেওয়ায় সংসদের দুই কক্ষের হলগুলোতে খুব কম পরিমাণ বাইরের আলো এসে পৌঁছায়।
৯৩ বছরের পুরনো এই ভবনটি কাঠামোগত দিত থেকে কতটা মজবুত তা স্থাপন করার জন্য যথাযথ ডকুমেন্টেশনের অভাব রয়েছে। তবে এখন সংসদ ভবনের কাঠামো পরীক্ষা করে সেই সম্পর্কে তথ্য় সংগ্রহ করাও অসম্ভব। এতে সংসদের কার্যপ্রণালীর ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই ভূমিকম্পের দিক থেকে এই সংসদ ভবনকে একেবারেই নিরাপদ বলে ঘোষণা করা যেতে পারে না। আর এই বিষয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়। কারণ দিল্লির জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকির কারণটি ভবননির্মাণের সময় সিসমিক জ়োন -২ থেকে সিসমিক জ়োন -৪ এ স্থানান্তরিত হয়েছে। সম্ভবত জ়োন -৫ এ উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই সংসদ ভবনের জন্য অগ্নি নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। কারণ বর্তমানের আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী এই বিল্ডিংয়ের নকশা করা হয়নি। জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ভবন খালি করার ব্যবস্থা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত এবং নিরাপদ নয়।
শেষ পর্যন্ত উপরোক্ত সব বিষয় বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে, সংসদ ভবনের আসন সংখ্যা সম্প্রসারণ, পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ এবং ভূমিকম্পের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান ভবনটি পুনর্নির্মাণ করে তা করা সম্ভব নয়। ফলে এর জন্য দরকার নয়া সংসদ ভবন।