Covid Vaccine: সংক্রমণ রুখতে নয়, হাসপাতাল-যাত্রা ঠেকাতেই ডবল ডোজ়ে জোর, বলছে গবেষণা

Covid Vaccine: বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র বলছে, জোড়া ডোজ় নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করার হার মাত্র ০.৪ শতাংশ। জোড়া ডোজ় নেওয়ার পর করোনা হলেও কারও মৃত্যু হয়নি।

Covid Vaccine: সংক্রমণ রুখতে নয়, হাসপাতাল-যাত্রা ঠেকাতেই ডবল ডোজ়ে জোর, বলছে গবেষণা
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ডোজ় পাননি, এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল । ছবি-PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 09, 2021 | 11:57 PM

কমলেশ চৌধুরী: উদ্বেগের খবর, ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) নেওয়ার পরও করোনা (Coronavirus) হচ্ছে। কিন্তু সঙ্গে স্বস্তির খবর হল, টিকা নেওয়ার পর করোনা হলে গুরুতর অসুস্থতার প্রবণতা কম। দাপট দেখাতে পারছে না কোভিড ১৯ (Covid 19)। একের পর এক গবেষণা থেকে উঠে আসছে এমন তথ্যই। তাই সংক্রমণ রুখতে নয়, ভ্যাকসিনে ভরসা রাখা হচ্ছে গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতেই।

করোনা রুখবে ভ্যাকসিন। ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে এনে কার্যকারিতার হারের অঙ্ক সামনে রেখে এমনই দাবি করেছিল বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু টিকাকরণ শুরুর পর কয়েক মাস কাটতেই ‘গোল পোস্ট’ বদলেছে সংস্থাগুলির। অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে ফাইজ়ার কিংবা মডার্না– সবার মুখেই কার্যকারিতার হারের বদলে ‘সিভিয়ার কোভিড’ রোখার অঙ্কে বেশি জোর শোনা যাচ্ছে। একই পথে হাঁটছে ভারতও। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা নিয়ম করে বলছেন, ভ্যাকসিনে সংক্রমণ আটকানো যাবে না, রোগের দাপট এবং মৃত্যুর হার কমানো যাবে। তাই টিকা নিলেও মাস্ক আবশ্যিক। যেমনটা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘দাওয়াই ভি, আউর কড়াই ভি।’

বস্তুত, একাধিক গবেষণায় এই প্রবণতারই প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে দিল্লির সিএসআইআর প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির (আইজিআইবি) বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছিলেন, ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিনের জোড়া ডোজ় নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন। এ বার বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাতেও উঠে এসেছে প্রায় একই ধরনের প্রবণতার কথা। ১,৬৫০ জনের উপর সমীক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্‍সক-বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জোড়া ডোজ় নিয়েও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৫ শতাংশ প্রাপক। চিকিত্‍সকদের মধ্যে ভ্যাকসিনে তৈরি রক্ষণ ভাঙার প্রবণতা আরও বেশি, ৩৯ শতাংশ। ভ্যাকসিনের রক্ষণ ভাঙার কারণ হিসেবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেই দায়ী করেছে আইজিআইবি। জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্‍সক-বিজ্ঞানীদেরও অভিমত, দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টার দাপটই টিকাকরণের পর সংক্রমণ হওয়ার কারণ।

তবে পুরোটাই হতাশার খবর নয়। বরং, আশার খবরই বেশি। প্রি-প্রিন্ট মেডিক্যাল আর্কাইভে প্রকাশিত আইজিআইবি-র গবেষণাপত্র বলছে, প্রায় ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মীর কেউ-ই গুরুতর অসুস্থ হননি। মূলত উপসর্গহীন সংক্রমণ, মৃত্যুর ঘটনা শূন্য। জার্নাল অফ মেডিক্যাল ভাইরোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রও বলছে, জোড়া ডোজ় নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করার হার মাত্র ০.৪ শতাংশ। জোড়া ডোজ় নেওয়ার পর করোনা হলেও কারও মৃত্যু হয়নি।

অলঙ্ককরণ-অভীক দেবনাথ

সমীক্ষায় যখন এই ধরনের প্রবণতা উঠে আসছে, তখন কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি তুলেছেন গবেষক-বিজ্ঞানীরা। আইজিআইবি-র বিজ্ঞানী শান্তনু সেনগুপ্ত বলছেন, “টিকাকরণের পর মাস্ক পরার উপর জোর দিতে হবে। অসাবধান হওয়ার সুযোগ নেই।” কোভিশিল্ডের জোড়া ডোজ়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমানোর দাবিও তুলেছেন শান্তনুবাবুরা। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-চিকিত্‍সক শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী বলছেন, “ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সংক্রমণ হলে বলা হয়, ব্রেক-থ্রু ইনফেকশন। ট্রায়ালে যতটা দেখা গিয়েছিল, তার চেয়েও বেশি হারে ব্রেক-থ্রু ইনফেকশন হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থতা কম, এটাই আশার খবর।” চিকিত্‍সকরা বেশি আক্রান্ত, তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে সওয়াল করছেন শঙ্খশুভ্রবাবু। ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা, টিকাকরণের সময়সূচি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, অভিমত তাঁর।

টিকাকরণের পর কোভিড হওয়ার প্রবণতা কেমন, বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ‘ভ্যাকসিন ট্র্যাকার’ চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আইসিএমআরের একটি পোর্টালে সেই তথ্য তুলে ধরা হবে। আপাতত দু’টি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে আইসিএমআর। বলা হয়েছে, টিকার এক ডোজ় মৃত্যু রুখতে ৯৬.৬ শতাংশ কার্যকরী। মৃত্যু রুখতে ৯৭.৫ শতাংশ কার্যকরী জোড়া ডোজ়। নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কে পল বলেছেন, “গুরুতর অসুস্থতা, মৃত্যু– টিকাকরণে দুই-ই তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে কমানো যাচ্ছে। তাই ভ্যাকসিন নিতে হবে। একটি নয়, জোড়া ডোজ়ই নিতে হবে।”

সঙ্গে মানতে হবে কোভিড-বিধিও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিত্‍সক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “টিকা নেওয়ার পরও সতর্কতা মেনে চলতে হবে। কারণ, আক্রান্ত করোনা ছড়াতে পারেন। তাছাড়া, টিকা নেওয়ার পর সকলের শরীরে একইরকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। কারও ক্ষেত্রে যদি এই ক্ষমতা কম তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে অনভিপ্রেত কিছুও ঘটতে পারে। করোনা আসলে পোলিও-র মতোই। পোলিও-য় যেমন বলা হয়, একজন শিশুও যদি আক্রান্ত থাকে, তাহলে বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। এক্ষেত্রেও তাই।”