Mumbai: ‘মেরি পূজা মিল গই’, ৯ বছর ধরে নিখোঁজ কিশোরী এবং এক নাছোড় পুলিশ কর্তার বিস্ময়কর কাহিনি

Mumbai girl kidnapped: ২০১৩ সালে হারিয়ে গিয়েছিল মুম্বইয়ের এক ৭ বছর বয়সী কিশোরী। অবসরের পরও তার খোঁজ চালিয়েছিলেন এক পুলিশ কর্তা। দীর্ঘ ৯ বছর পর, কীভাবে পরিবারের সঙ্গে ফের মিলিত হল সেই মেয়ে?

Mumbai: 'মেরি পূজা মিল গই', ৯ বছর ধরে নিখোঁজ কিশোরী এবং এক নাছোড় পুলিশ কর্তার বিস্ময়কর কাহিনি
পূজা গৌড় এবং পুলিশ কর্তা রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোসলে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 07, 2022 | 8:00 PM

মুম্বই: ২০১৩ সালে হারিয়ে গিয়েছিল মুম্বইয়ের ৭ বছর বয়সী কিশোরী পূজা গৌড়। দীর্ঘ ৯ বছর পর, তার নামে প্রকাশিত হওয়াএক নিখোঁজ পোস্টারের ডিজিটাল কপির দৌলতে ফের তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন ওই কিশোরী। আর এতেই এতদিন পর অবশেষে শান্তি পেলেন সেই সময় নিখোঁজ ব্যুরোর দায়িত্বে থাকা, বর্তমানে মুম্বই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোসলে। অবসরের পর একটা দিনও তিনি পূজার খোঁজ করা ছাড়েননি। এমনকি, পূজার ছবির সঙ্গে কথাও বলতেন তিনি।

আসলে, ঘটনাটি ২০১৩ সালে ঘটলেও রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোসলে এর সঙ্গে মানসিকভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন সেই ১৯৮০ সাল থেকেই। ওই সময় ইয়েলো গেট থানার এক কনস্টেবল ছিলেন তিনি। সেই সময় একদিন বাড়ি থেকে আসার এক ফোন কলে তিনি যৌতুকের চাপে তাঁর বোনের নৃশংস মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন। সেই সময় থেকে কোনও ফৌজদারি মামলায় কোনও মহিলা জড়িত থাকলেই সেই মামলার সঙ্গে একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে জড়িয়ে পড়তেন রাজেন্দ্র ভোসলে। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর নিজের বোনের মুখটা ভেসে উঠত। শুধু একটি মামলারই সমাধান করতে পারেননি তিনি। পূজা গৌড়ের অন্তর্ধান রহস্য। আর সেটাই এতদিন তাঁকে কুড়ে কুড়ে খেত। নিজের বোনের ছবির সঙ্গে পূজা গৌড়ের ছবিও তিনি রেখে দিয়েছিলেন নিজের মানিব্যাগে।

কী ঘটেছিল ঘটনাটা? জানা গিয়েছে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি সঙ্গে মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে তার দাদার সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল পূজা। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ডিএন নগর পুলিশ স্টেশনে একটি নিখোঁজ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই সময় সেখানে নিখোঁজ ব্যুরোর দায়িত্বে ছিলেন ভোসলে। পূজাকে খুঁজে বার করার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু, জীবনে শুধুমাত্র এই একটিই মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার সমাধান করতে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপ নিয়েই অবসর নিয়েছিলেন। অবসরের পরও তাঁর সঙ্গে পূজার পরিবারের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। দেশের যে কোনও রাজ্যে কোনও কিশোরী মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে জানলেই তিনি খোঁজ নিতেন, পূজা গৌড় নয় তো?

যাইহোক, গত শুক্রবার (৫ অগস্ট) নিজের বুদ্ধিতেই বর্তমানে ১৬ বছরের কিশোরী পূজা গৌড় তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে। কী ঘটেছিল? পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি স্কুলে যাওয়ার পর হেনরি জোসেফ ডি’সুজা নামে জনৈক ব্যক্তি তাকে আইসক্রিম খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে অপহরণ করেছিল। ডি’সুজার দাবি, সেই সময় তাঁর স্ত্রী নিসন্তান ছিলেন। সন্তানের অভাববোধ মেটাতেই পূজাকে অপহরণ করেছিল সে। অপহরণের পরপরই যাতে পূজাকে কেউ চিনে না ফেলে, তাকে কর্ণাটকের এক হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল অ্যানি ডি’সুজা।

পরে ডি’সুজা দম্পতির নিজেদের সন্তান হয়, আর পূজা ওরফে অ্যানি ডি’সুজার দুঃসময় শুরু হয়েছিল। কর্নাটকের হোস্টেল থেকে তাকে মুম্বই ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, আর সে পরিণত হয়েছিল ডি’সুজা পরিবারের গৃহ পরিচারিকায়। গৌড় পরিবারের বাড়ি থেকে ডি’সুজাদের বাড়ি ছিল মাত্র কয়েকশ মিটার দূরত্বে। পূজার অবশ্য তার আগের পরিবারের কথা কিছু মনেও ছিল না। কিন্তু একদিন হেনরি মত্ত অবস্থায়, তাকে বলে ফেলেছিল, যে সে তার নিজের মেয়ে নয়। এরপরই, নিজের অতীত খোঁজা শুরু করেছিল পূজা।

হারিয়ে যাওয়ার সময় পূজা গৌড় ছিল ৭ বছরের শিশু

এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ইন্টারনেটে নিজের ‘নিখোঁজ’ হওয়া সম্পুর্কে তথ্যের অনুসন্ধান করেছিল পূজা। অবশেষে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি পোস্টার খুঁজে পেয়েছিল। সেই পোস্টারে মোট পাঁচটি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। তার মধ্যে চারটিই এখনও আর কাজ করে না। তবে পঞ্চমটি ছিল গৌড় পরিবারের প্রতিবেশী রফিকের। রফিককে সে ফোন করে নিজের কথা জানিয়েছিল। বিস্মিত রফিক ভিডিও কলে তার সঙ্গে কথা বলেই পূজাকে চিনতে পেরেছিলেন। পূজাকে তার মায়ের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেন। পূজার মাও তাঁর মেয়েকে একবার দেখেই চিনে ফেলেছিলেন। জানা গিয়েছে, মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে একে অপরকে দেখতে পেয়ে মা-মেয়ে দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

এরপর স্থানীয় পুলিশের উপস্থিতিতে ১৬ বছর বয়সী কিশোরী তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়। এই দীর্ঘ বিচ্ছেদকালে মৃত্যু হয়েছে পূজার বাবার। তবে তার মা এবং ভাই এবং অবশ্যই পুলিশ কর্তা রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোসলে। উত্তর মুম্বাইয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাকাকালীন তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে পূজাকে পাওয়া যাওয়ার খবর দিয়েছিলেন পূজার মা। বলেছিলেন “মেরি পূজা মিল গয়ি।” স্ত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে আনন্দে স্ত্রীর গালে চুমু খেয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্তা। মানিব্যাগ খুলে তার বোনের ছবিকে জানান, পূজাকে পাওয়া গিয়েছে। মনে মনে বলেছিলেন “মেরি ভি পূজা মিল গয়ি”।

রেহাই পায়নি হেনরি ডি’সুজা এবং তার স্ত্রী। মুম্বই পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, হেনরিকে অপহরণ ও বেআইনিভাবে শিশুকে শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলায় তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে।