‘রাগ আর হতাশা থেকে করা মন্তব্য তেতো ওষুধের মতো কাজ করে’, নির্বাচন কমিশনের মামলায় রায় সংরক্ষিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট

'খুনের অভিযোগ আনা যায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে।' কোভিডের জন্য কমিশনকে (Election Commission) এই ভাষাতেই দায়ী করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট (Madras Highcourt)।

'রাগ আর হতাশা থেকে করা মন্তব্য তেতো ওষুধের মতো কাজ করে', নির্বাচন কমিশনের মামলায় রায় সংরক্ষিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 03, 2021 | 1:31 PM

নয়া দিল্লি: আদালতে বিচারপতিদের কথোপকথন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া‌ই উচিৎ। জনস্বার্থে বিচারপতিদের মন্তব্যের বিশেষ তাৎপর্য আছে। নির্বাচন কমিশনকে এই ভাষাতেই আদালতের পর্যেবক্ষণের গুরুত্ব বোঝাল সুপ্রিম কোর্ট। ‘নির্বাচন কমিশনকে খুনের দায়ে গ্রেফতার করা যেতে পারে’, এমনই মন্তব্য করেছিলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি। আর সেই মন্তব্যের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে কমিশন। সোমবার ছিল সেই আবেদনের শুনানি। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও এমআর শাহের বেঞ্চে ছিল এই মামলার শুনানি। শুনানি শেষে রায় সংরক্ষিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। সামঞ্জস্য রেখে রায় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

‘কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা অনায্য

কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী এ দিন বলেন, ‘কমিশনের কী কাজ, তা না জেনে মাদ্রাজ কোর্ট আমাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিল। এই মন্তব্যের সঙ্গে মামলার কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরা কেবল এই মন্তব্য সম্পর্কে কথা বলছি।’ তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশনকে মানুষ হত্যা করার অভিযোগ দায়ের করা অন্যায্য। জনসভায় কম লোক থাকার আবেদন কেন আগে জানাল না কমিশন? আদালতের এই প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২ লক্ষ লোকের সমাবেশ করে থাকেন, তবে কমিশন জনতার দিকে গুলি চালাতে বা লাঠিপেটা করতে পারেন না। এটি দেখা বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটির কাজ।’ মূল রায়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও কেন এই ধরনের মন্তব্য করা হল, সেটাই ছিল নির্বাচন কমিশনের মূল অভিযোগ। বিচারপতিদের করা এই ধরনের মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয় বলেও দাবি করে কমিশন।

‘আদালতের পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত সংবাদমাধ্যমে’

এ দিন শীর্ষ আদালত সাফ জানায় যে, যে আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা থেকে সংবাদমাধ্যমকে বিরত করা যায় না। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘আদালতে যে কোনও আলোচনাই জনস্বার্থে করা হয়, তাই সেই আলোচনা মানুষের জানা উচিত। কীভাবে বিচরপতি ও আবেদনকারীর মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে, সে কথাও সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার।’ বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘আমি বা বিচারপতি শাহ কেউই হয়ত এ ধরনের মন্তব্য করব না। তবে, আমরা চাই আদালতে কী হচ্ছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ হোক সংবাদমাধ্যমে। এতে বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।’

‘রাগ আর হতাশা থেকে করা মন্তব্য তেতো ওষুধের মতো কাজ করে’

বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘আমরা হাই কোর্টকে নিরুৎসাহ করতে চাই না। কোভিড পরিস্থিতিতে নিরন্তর কাজ করছে হাই কোর্টগুলি। তারা অনেক কাছ থেকে জানে যে ঠিক কী হচ্ছে।’ বিচারপতিদের মতে খুনের অভিযোগ হয়ট সঠিক নয়, কিন্তু হতাশ হয়েই এরকম মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। বিচারপতি এমআর শাহ বলেন, ‘সাধারণত এই ধরনের মন্তব্য রাগ আর হতাশা থেকেই বেরিয়ে আসে। আর এই মন্তব্য অনেক সময় তিতো ওষুধের মতো কাজ করে।’

কী বলেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট?

গত ২৬ এপ্রিল তামিলনাড়ুর কোভিড সংক্রমণ নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টে। শুনানি চলাকালীন এই মন্তব্য করতে শোনা যায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। যদিও তামিলনাড়ুতে এক দফায় বিধানসভা ভোট শেষ করা হয়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পরও কেন কমিনশ প্রচার বা জমায়েতে রাশ টানল না, সেই প্রশ্ন তুলে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য এককভাবে দায়ী নির্বাচন কমিশন। আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও করা যায়।”