‘এত পড়লে লড়াই করব কখন?’ সিলেবাসের চাপে বেজায় অখুশি মাও-গেরিলারা

পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করতে এবার সিলেবাস প্রকাশ করল সিপিআই (মাওবাদী) (Communist Party of India-Maoist) সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু, এই সিলেবাস নিয়ে বেজায় অখুশি দলের কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, ‘এত পড়াশোনা করলে পুলিশ-সিআরপিএফের সঙ্গে লড়াই করব কখন?’

‘এত পড়লে লড়াই করব কখন?’ সিলেবাসের চাপে বেজায় অখুশি মাও-গেরিলারা
Follow Us:
| Updated on: Dec 05, 2020 | 4:44 PM

সিজার মণ্ডল: দলের অন্দরে লেখাপড়ার বড্ড অভাব। তাই সব পর্যায়ের কর্মীদের পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করতে এবার সিলেবাস প্রকাশ করল সিপিআই (মাওবাদী) (Communist Party of India-Maoist) সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু, এই সিলেবাস নিয়ে বেজায় অখুশি দলের কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, ‘এত পড়াশোনা করলে পুলিশ-সিআরপিএফের সঙ্গে লড়াই করব কখন?’

মাওবাদী সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তর কেন্দ্রীয় কমিটি। সম্প্রতি ওই কমিটি থেকে দলের জন্য অভ্যন্তরীণ একটি সার্কুলার প্রকাশ করা হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের দলীয় কমিটি থেকে শুরু করে পলিটব্যুরোর সদস্যদেরও পড়াশোনায় মন দিতে হবে! হাজির থাকতে হবে দলের রাজনৈতিক পাঠশালায়। তার জন্য বিভিন্ন স্তর-ভিত্তিক পাঠক্রম বা সিলেবাসও তৈরি করে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সূত্রের খবর, গণপতির হাত থেকে দল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পরই লেখাপড়ায় জোর দেওয়ার পরিকল্পনা করেন সিপিআই (মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজ।

ওই সার্কুলারে ৬টি আলাদা আলাদা পাঠক্রমের উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর, আঞ্চলিক কমিটি, জেলা কমিটি, শহর কমিটি, রাজ্য কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য তৈরি করে পাঠানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সিলেবাস। এমনকী দলের ক্যাডাররা কী কী বই পড়বেন, সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে নতুন সার্কুলারে।

গ্রাম পঞ্চায়েত বা দলের প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তর এবং সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় কমিউনিস্টদের ভূমিকা সম্পর্কে। নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে চারু মজুমদারের লেখা এবং কানাই চট্টোপাধ্যায়ের লেখাও পড়তে বলা হয়েছে সকল পর্যায়ের কর্মীদের।

এভাবেই ধাপে ধাপে আঞ্চলিক, জেলা কমিটি এবং তার উপরের কমিটিগুলির পাঠক্রমে যুক্ত করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট আন্দোলনের ইতিহাস, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ। একই সঙ্গে পড়তে বলা হয়েছে ভারতের শাসন কাঠামো এবং সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কেও। সুনির্দিষ্টভাবে, চিন বিপ্লব থেকে শুরু করে জেল কমিউন কীভাবে তৈরি করা হবে, তার শিক্ষাও নিতে বলা হয়েছে ওই পাঠক্রমে।

আরও পড়ুন: মোদী-মমতাকে বিস্ফোরক চিঠি সুদীপ্ত সেনের, কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু-সুজন-অধীর-বিমানরা

দলের রাজ্য এবং জেলা কমিটি গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত গ্রাম কমিটি এবং আঞ্চলিক কমিটির কাছে ওই পাঠক্রম পৌঁছে দিতে। তৈরি করতে বলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ রাজনৈতিক পাঠশালার। এখন পর্যন্ত দণ্ডকারণ্য ছাড়া এ রকম ভ্রাম্যমাণ পাঠশালা কোথাও তৈরি করতে পারেনি মাওবাদী সংগঠন।

তবে এই পাঠক্রম সংগঠনের সদস্যদের একটা বড় অংশের বেজায় অখুশির কারণ হয়ে উঠেছে। জানা গিয়েছে, ওই সার্কুলারের পাল্টা দলের পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিহার-ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এরিয়া কমিটির নেতারা। তাঁদের দাবি, এ রকম পাঠশালা তখনই তৈরি করা সম্ভব যেখানে অন্তত কয়েকঘণ্টা গেরিলা সদস্যরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। অথচ বিহার-ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতি মুহূর্তে গেরিলারা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন। সেই পরিস্থিতিতে এত লেখাপড়া করা আদৌ কতটা সম্ভব? তাঁদের সাফ কথা, দলের নির্দেশ মেনে এত পড়াশোনা করতে গেলে তো পুলিশ-সিআরপিএফের গুলি খেয়ে মরতে হবে। কারণ পাহাড়ে জঙ্গলে তাঁরা প্রতিদিন যে ঝুঁকি নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন, সেখানে লেখাপড়া করাটাই বিলাসিতার সমান তাঁদের কাছে। তাই পড়াশোনার নির্দেশ আদৌ কতটা কার্যকর করা সম্ভব, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছে বাসবরাজের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি।