‘আন্দোলন থেকে আন্দোলনে লাফ দেওয়াই ওদের কাজ’, প্রধানমন্ত্রীর মুখে নতুন শব্দ ‘আন্দোলনজীবী’

গণতন্ত্রের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমাদের দেশের গণতন্ত্র কেবল বৃহত্তম গণতন্ত্রই নয়, বরং গণতন্ত্রের পীঠস্থান। দেশের গণতন্ত্রকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।"

'আন্দোলন থেকে আন্দোলনে লাফ দেওয়াই ওদের কাজ', প্রধানমন্ত্রীর মুখে নতুন শব্দ 'আন্দোলনজীবী'
রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। সৌ: রাজ্যসভা টিভি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 08, 2021 | 7:31 PM

নয়া দিল্লি:  শ্রমজীবী বা বুদ্ধিজীবীর কথা আমরা সকলেই শুনেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখে আজ শোনা গেল নতুন শব্দ, ‘আন্দোলনজীবী’। কারা এরা, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বললেন, “এদের কাজই হল এক আন্দোলন থেকে আর এক আন্দোলনে লাফ দেওয়া। যে কোনও আন্দোলনই দেখুন, এদের সেখানে দেখা যাবে।”

কৃষক আন্দোলন নিয়ে রাজ্যসভায় কেন্দ্র বনাম বিরোধীদের মধ্যে বিতর্ক আলোচনা হলেও প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন সকলে। অবশেষে সোমবার রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা মোকাবিলায় দেশের প্রশংসার পাশাপাশি কৃষক আন্দোলন নিয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরোধীদের বিরত থাকার অনুরোধ করলেন তিনি। রাজ্যের কৃষকরাও কৃষকনিধি সম্মান থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দোষারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকল সাংসদকেও ধন্যবাদ জানান। শুরুতেই তিনি বলেন, “ভারত অসংখ্য সুযোগের দেশ। আমাদের জন্য এখনও অনেক সুযোগ অপেক্ষা করে রয়েছে। সুতরাং দেশের যুব সম্প্রদায়, যাঁরা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, তাঁরা এই সুযোগকে হাতছাড়া করবে না। দেশের তরফেও তাঁদের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যদি সমগ্র বিশ্বের দিকে তাকাই এবং আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুলনা করি, দেখা যাবে সমগ্র বিশ্বেরই নজর আমাদের উপর রয়েছে। সকলেই বিশ্বাস করেন যে বিশ্বের উন্নয়নে ভারত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।”

ভ্যাকসিন উৎপাদন থেকে টিকাকরণ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ আরও একবার করোনা টিকাকরণ কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, “আমরা বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। করোনাকালে আমরা ১৫০টি দেশে ওষুধ পাঠিয়েছি। সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষায় আমরা নতুন রাস্তা খুঁজে বের করার পাশাপাশি নতুন রাস্তাও তৈরি করেছি। গোটা দেশই এই কঠিন সময়ে দারুণ কাজ করেছে এবং বিশ্বও করোনা মোকাবিলায় ভারতের অবদান মেনে নিয়েছে।”

দেশের গণতন্ত্রের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গণতন্ত্র কেবল বৃহত্তম গণতন্ত্রই নয়, বরং গণতন্ত্রের পীঠস্থান। দেশের গণতন্ত্রকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ভারত নিজের ক্ষমতাতেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সার্জিকাল স্ট্রাইকের পরই ভারতের ক্ষমতা দেখেছিল গোটা বিশ্ব।”

আরও পড়ুন: তিকরি সীমান্তে গাছে ঝুলছে অন্নদাতার দেহ, চিঠিতে লেখা…

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মূল আকর্ষণ ছিল কৃষি আইন ও কৃষক আন্দোলন নিয়ে তাঁর বক্তব্য। দেশের সামগ্রিক উন্নতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারতের কৃষিপণ্যের রেকর্ড উৎপাদন হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিশ্বের তালিকায় আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি এবং প্রতি মাসেই আমরা ইউপিআইয়ের মাধ্যমে চার লাখ কোটি টাকার লেনদেন করি।” কৃষকদের সুবিধার জন্য যে সরকারি প্রকল্পগুলি আনা হয়েছে, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগে ক্ষুদ্র কৃষকরা সেচের কোনও সুবিধা পেত না, এমনকি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ছিল না। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। সেই কারণেই ফসল বীমা যোজনার সূচনা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমেও উপকৃত হয়েছেন কৃষকরা। এই সড়কপথ ধরেই এখন গ্রামের ছোট কৃষকরাও মুম্বইয়ের মতো বড় শহরে নিজেদের উৎপাদিত ফসল পাঠাতে পারছেন।”

প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি যোজনায় কৃষকরা কতটা উপকৃত হয়েছেন, তার খতিয়ান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “এই যোজনায় যেই রাজ্যগুলি অংশ নিয়েছে, সেখানে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিমাণটি আরও বাড়ত, যদি বাংলার কৃষকরাও এই প্রকল্পের অংশ হত। বাংলার কৃষকরা রাজনীতির শিকার।”

কৃষক আন্দোলন নিয়েও তিনি বলেন, “সবাই কৃষক আন্দোলন নিয়ে কথা বলছেন কিন্তু কৃষকরা কীসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, সেই বিষয়ে কেউ কথা বলছেন না। আগের সব সরকারই কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার আনার বিষয়ে কথা বলেছিল। কৃষক আন্দোলন নিয়ে আপনারা (বিরোধী) সরকারকে আক্রমণ করছেন, তা নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাদের এও বলা উচিত যে কৃষকদের উন্নয়নে কী পরিবর্তন আনা উচিত।”

কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মোদী। তিনি বলেন, “আপনাদের গর্বিত হওয়া উচিত যে মনমোহন সিং যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা মোদী করে দেখিয়েছে। আমরা জানি পরিবর্তন মেনে নেওয়া সহজ নয়। শাস্ত্রীজির সময়েও কেউ কৃষিমন্ত্রী হতে চাননি কারণ কেউই কৃষকদের চটাতে চাইছিলেন না। আমরা সময় অনুযায়ী আইনের পরিবর্তন আনছি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পরামর্শ গ্রহণ করে আমাদের এগিয়ে চলাই উচিত। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে, পিছনে নয়। আইনগুলিতে সংস্কার আনা প্রয়োজন।”

কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছেন আমাদের কৃষিমন্ত্রী। আন্দোলনকারীদের বলছি, প্রতিবাদ করুন, কিন্তু আন্দোলনে বহু বয়স্ক ব্যক্তিও অংশ নিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সেটা উচিত নয়। আমাদের পঞ্জাবের কথা ভুললে চলবে না। তাঁদের দেশভাগের বেদনা ও ৮৪ সালের হিংসাও সহ্য করতে হয়েছিল। শিখ ভাইয়েরা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু বর্তমানে কিছু মানুষ তাদের উসকানোর চেষ্টা করছে।”

আন্দোলনকারী কৃষকদের অন্যতম দাবি,ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি। এমএসপি তুলে নেওয়ার গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমএসপি ছিল, আছে এবং থাকবেও। গরিবদের জন্য স্বল্প মূল্যে রেশন ব্যবস্থাও জারি থাকবে। একইসঙ্গে মান্ডিগুলিকে আধুনিক করে তোলা হবে।”

আন্দোলন সমর্থককারীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “দেশে এক ধরনের নতুন শ্রেণির মানুষ তৈরি হয়েছে– আন্দোলনজীবী। যে কোনও আন্দোলনেই তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাবে। এক আন্দোলন থেকে আরেক আন্দোলনে লাফ দিয়ে অংশ নেওয়া– এটাই তাঁদের একমাত্র কাজ। এরাই আমাদের দেশকে ভুলপথে চালিত করছে এবং উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে।”

বিরোধীদের একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আসুন আমরা একসঙ্গে চলি, আলোচনা করি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটবে। একসঙ্গে কাজ করলেই সাফল্য আসবে।”

আরও পড়ুন: Uttarakhand Joshimath Dam Disaster Live: উদ্ধার ১৪ মৃতদেহ, চিন্তা বাড়াচ্ছে ধৌলিগঙ্গার জলস্তর