বিরোধের বিড়ম্বনা

কৃষি আন্দোলন নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর খোঁজারও প্রয়োজন রয়েছে।

বিরোধের বিড়ম্বনা
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 08, 2021 | 10:01 PM

জ্যোতির্ময় রায়: এ বিড়ম্বনা নয় তো কী! তুমি বিরোধ করবে, আমি ক্ষতিপূরণ দেব। তুমি রাজনীতি করবে, আমি রাজস্ব গুনব! কৃষক আন্দোলন নিয়ে সাধারণ জনগণের মনে সংশয়। বিরোধিতার নামে কৃষককুল কুরুক্ষেত্রে ব্যস্ত। কৃষক আন্দোলনে সাধারণ জনগণ যেন মহাভারতের সঞ্জয়ের মতো। যেভাবে সঞ্জয়ের চোখ দিয়ে কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধ দেখেছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। কিন্তু যুদ্ধের বর্ণনা ছাড়া সঞ্জয়ের আর করার কিছু ছিল না। তেমনই সাধারণ মানুষ সঞ্জয়ের মতোই, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েই তারা ক্ষান্ত। কিন্তু আত্মপ্রেমী অন্নদাতাদের বিরোধিতায় স্থানীয় জনগণ অর্থাৎ সঞ্জয়দেরই অন্ন আজ সঙ্কটে।

নয়া কৃষি আইন প্রত্যাখ্যানের দাবি নিয়ে ২৬ জানুয়ারি দিল্লির লাল কেল্লার বুকে যা ঘটে গেল তাতে সমগ্র দেশবাসী স্তম্ভিত। যারা নিজের দেশকে সম্মান করতে জানেন না তাঁদের এ দেশের কৃষক বলি কেমন করে! এটা ভুললে চলবে না, নয়া কৃষি আইন নিয়ে কৃষক সংগঠনের বিরোধ করার অধিকার থাকলেও, তাণ্ডব করবার অধিকার কিন্তু সংবিধান তাঁদের দেয়নি। এই কৃষক আন্দোলন নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর খোঁজারও প্রয়োজন রয়েছে।

* ২৬ জানুয়ারির মতো ঐতিহাসিক দিনে ট্রাক্টর র‍্যালির প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? ট্রাক্টর র‍্যালি অন্য কোনও দিন হতে পারত না কি?

* ট্রাক্টর র‍্যালি নিয়ে ভারতের প্রতিচ্ছবি বিশ্ব দরবারের খাটো করার জন্যই কি ২৬ জানুয়ারির দিন ধার্য করা হয়েছিল?

* ২৬ জানুয়ারির পূর্বে গোয়েন্দা বিভাগ সতর্ক করলেও কৃষক নেতারা ওই দিন ট্র্যাক্টর র‍্যালি করতে জোর দিয়েছিলেন কেন?

* সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে কৃষক নেতাদের বারবার ঘোষণা, “তিন নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।” এটা কি কৃষক নেতাদের হটকারিতা নয়? এতে কি স্পষ্ট হচ্ছে না যে কৃষক নেতারা সমাধানের পথে না গিয়ে রাজনীতি করছেন?

*এতে কি স্পষ্ট নয়, এই আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক দলের হাত রয়েছে?

* দেশের শীর্ষ আদালত নয়া কৃষি আইন সংক্রান্ত অভিযোগ শোনার জন্য একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছে। এই কমিটি ইতিমধ্যে দেশজুড়ে সংবাদপত্রে বিভিন্ন ভাষায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে নয়া কৃষি আইন সংক্রান্ত অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে। এই বিষয়ে কৃষক নেতারা চুপ কেন?

*সরকার ইতিমধ্যে এই নয়া কৃষি আইন দেড় বছর অবধি বলবৎ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা সত্ত্বেও আন্দোলনরত কৃষকদের নেতারা আলোচনায় বসছেন না কেন?

*প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আলোচনার জন্য কৃষকদের আহ্বান করেছেন। তা সত্ত্বেও কৃষক নেতারা মৌন কেন?

*সরকারে বিশ্বাস নেই, শীর্ষ আদালতে আস্থা নেই। এটাই কি কৃষক আন্দোলনের শেষ কথা?

আরও পড়ুন: খালিস্তানি ও পাকিস্তানি উস্কানির অভিযোগ, হাজারের বেশি টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লকের নির্দেশ

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুসারে এই আন্দলনের পিছনে রাজনৈতিক ও বিদেশি কারসাজি থাকার সম্ভবনাকে অস্বীকার করা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদেশি কন্যাদের মায়া কান্নায় আপ্লুত কৃষককূল আত্মতৃপ্তি পেলেও দিন শেষে তাদের ভারতের সংবিধানেই আশ্রয় নিতে হবে। কৃষকদের বুঝতে হবে আন্দোলনের সমাধান আলোচনার মাধমেই সম্ভব। তাঁদের বুঝতে হবে বিশ্বের সকল যুদ্ধের সমাপ্তি কিন্তু আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। বুঝতে হবে, কৃষক আন্দোলন সাধারণ কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে ভারতের আর্থিক স্থিতাবস্থাকে কমজোর করার বিদেশি ষড়যন্ত্র নয় তো!