Rajnath Singh: সেনার জন্য যুদ্ধ জয়ের থেকেও বড় আর কী হতে পারে? কোন টার্গেট দিলেন রাজনাথ?
Rajnath Singh in Jammu-Kashmir: রাজৌরিতে সেনার হেফাজতে অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে, জম্মু-কাশ্মীরে এলেন রাজনাথ সিং। সেনা সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তারপর, নিহতদের পরিবারবর্গের সঙ্গেও কথা বলেন। সেনার জন্য তিনি যুদ্ধ জয়ের থেকেও বড় লক্ষ্য বেঁধে দিলেন।
শ্রীনগর: ২০০৪ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী, সেই সময়ের ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘দিল জিতকে আনা’। অর্থাৎ, শুধু খেলার মাঠে জয় নয়, আম পাকিস্তানিদের মন জয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। ১৯ বছর পর ফের শোনা গেল ‘দিল জেতা’ বা মন জয়ের কথা। স্থান, কাল, পাত্র, পরিস্থিতি সবই আলাদা। তাও, কোথাও যেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর সেই দিনের বলা কথার সুরই ধরা পড়ল বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কন্ঠে। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে এদিন তিনি ভারতীয় সেনা সদস্যদের তিনি বললেন, যুদ্ধ জিততে হবে ঠিকই, তবে তার থেকেও বড় লক্ষ্য মানুষের মন জয় করা।
গত সপ্তাহেই রাজৌরিতে সেনাবাহিবীর এক কনভয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনায় ৪ সেনাকর্মীর মৃত্যু হয়েচিল, আরও দুই জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এরপরই, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনাবাহিনী বেশ কয়েকজন অসামরিক নাগরিককে আটক করেছিল। পরে, রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই নিয়ে তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও হাওয়া গরম জম্মু-কাশ্মীরে। সেনা হেফাজতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের পরিবারবর্গ। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য এক ব্রিগেডিয়ার স্তরের সেনা কর্তাকে তদন্তে যুক্ত করেছে সেনা। এই পরিস্থিতিতে, এদিন জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে গিয়েছেন রাজনাথ সিং।
শ্রীনগরেল নেমেই তিনি রওনা দেন রাজৌরির উদ্দেশে। সেখানে সেনাকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আপনারা দেশের রক্ষক। কিন্তু আমি আপনাদের বলব, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, মানুষের মন জয় করার দায়িত্বও আছে আপনাদের। এমন কোনও ভুল করা উচিত নয়, যাতে কোনও ভারতীয় নাগরিকের ক্ষতি হয়। আমাদের যুদ্ধে জিততে হবে ঠিকই, সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে হবে। কিন্তু, তার থেকেও বড় উদ্দেশ্য হল মানুষের মন জয় করা। আমরা যুদ্ধ জিতব, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হৃদয়ও জয় করতে হবে। আমি জানি আপনি এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় নাগরিকরা প্রত্যেক সেনা সদস্যকে তাঁদের পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ভারতীয় এটা অনুভব করে। কেউ যদি আপনাদের দিকে খারাপ দৃষ্টি দেয়, তা কোনও ভারতীয় সহ্য যায় না। এই ধরনের হামলা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। নজরদারি বাড়াতে যত রকমের সমর্থন প্রয়োজন, আমাদের সরকার তা দেবে। আমাদের কোষাগারের দরজা আপনাদের জন্য সব সময় খোলা। আমি জানি আপনারা সবাই সজাগ থাকেন। কিন্তু আমার মতে, আরও সতর্কতা প্রয়োজন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে। আপনাদের কল্যাণ এবং নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় সবার আগে আছে।”
সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর, সম্ভবত রাজৌরির স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। নিহত অসামরিকদের নাগরিকতদের পরিবারবর্গের সঙ্গেও তিনি কথা বলতে পারেন। তারপর, বিকেলে জম্মুর রাজভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন তিনি। সেনার উপর একের পর এক হামলার প্রেক্ষিতে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জম্মু জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি আসার আগে, সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে নিজে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।