পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, দ্রুত অক্সিজেনের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টায় কেন্দ্র
সরকার অবশ্যই নিশ্চিত করবে যেন চিকিৎসার অক্সিজেনের অপচয় না হয়।
জ্যোতির্ময় রায়: করোনা (COVID) মহামারীর জন্য বিশ্বের কোন দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে সঙ্গে উন্নত দেশগুলিও এই মহামারীতে গুরুতর প্রভাবিত। ভারত করোনার প্রথম ঢেউ সামলে নিলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে চিকিৎসার সকল পরিকাঠামো তছনছ হয়ে গিয়েছে। দেশে করোনাকালে অক্সিজেনের হাহাকার সর্বত্র। অক্সিজেনের অভাবে চোখের সামনে চলে যাচ্ছে প্রিয়জনের প্রাণ। হাসপাতালে একের পরে এক প্রাণ ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। তখন বুলেট ট্রেন বা মঙ্গল গ্রহ জয়, সবই বেমানান মনে হয়। মহামারীর এই মৃত্যু তাণ্ডব কি ঈশ্বরের ইচ্ছায়, না আমাদের রাজনৈতিক নেতা আর নীতি নির্ধারণকারী বিশেষজ্ঞদের দূরদর্শিতার অভাব?
দেশে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন উৎপাদন সত্ত্বেও কেন এই অভাব, কেন অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে? মূলত দূরত্বের কারণে উত্তর পশ্চিম ভারত অক্সিজেনের অভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দূষণের কারণে অনেক অক্সিজেন উৎপাদনকারী কারখানা আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এ জাতীয় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্য উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে এবং রাজ্যগুলিকেও এর জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। পরিস্থিতি আসতে আসতে পরিবর্তিত হচ্ছে।
প্রথম প্রথম সরবরাহের ক্ষেত্রে আসা বাঁধাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। তাই, শীঘ্রই কয়েকটি রাজ্যের অক্সিজেন বরাদ্দ বাড়বে এবং কিছু রাজ্যের বরাদ্দ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার প্রকোপ কী পরিমাণ বাড়বে তা নিয়ে এখনও গবেষকরা সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের বরাদ্দ কেবলমাত্র বর্তমান অনুমানের ভিত্তিতেই করা যেতে পারে। সূত্র অনুযায়ী বর্তমানে করোনার শিকার ১৭ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪.৫ শতাংশের জন্য প্রতিদিন ১০ লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন এবং তিন শতাংশ রোগীর প্রতিদিন ২৪ লিটারের প্রয়োজন।
অক্সিজেন সরবরাহের বিষয় এখন সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা গঠিত টাস্কফোর্স খতিয়ে দেখবে। তবে সরকার এ বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করবে যেন চিকিৎসার অক্সিজেনের অপচয় না হয়। কারণ, প্রাণ বাঁচাতে এর ভুমিকা অপরিসীম। তাই অপচয় বন্ধ করতে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটাচ্ছে সরকার। যাতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় রোখা যাবে।
উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থানের মতো রাজ্য, যেখানে অক্সিজেন উৎপাদনের কোনও ক্ষমতা নেই, সেখানে নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অক্সিজেন ট্যাঙ্কারগুলি পর্যাপ্ত হলেও পূর্ব ভারত থেকে দিল্লি এবং পাঞ্জাবে আনতে এটি অনেক সময় সাপেক্ষ কারণ এই ট্যাঙ্কারগুলি সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ কিমি প্রতি ঘণ্টার বেগে চলতে পারে। সুতরাং, দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে অক্সিজেনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন: ভারতে এসে তাইল্যান্ডের মহিলার করোনায় মৃত্যু ঘিরে রহস্য, নাম জড়াল বিজেপি নেতার ছেলেরও