‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’! পূণ্য অর্জনের ঠেলায় সুপার স্প্রেডারে পরিণত কুম্ভ ফেরত দর্শনার্থীরা

কুম্ভ থেকে আগত দর্শনার্থীরা করোনা ছড়াবে, এই ভয়ে বহু রাজ্যের তরফেই কুম্ভ ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম চালু করা হয়েছিল। তবুও রোখা যায়নি সংক্রমণ।

'হিমশৈলের চূড়ামাত্র'! পূণ্য অর্জনের ঠেলায় সুপার স্প্রেডারে পরিণত কুম্ভ ফেরত দর্শনার্থীরা
মেলা চলাকালীন হর-কি-পৌরি ঘাটের চিত্র। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 11, 2021 | 10:59 AM

নয়া দিল্লি: আশঙ্কা আগেই ছিল। এ বার সত্যিই সুপার স্প্রেডারের আকার ধারণ করছে কু্ম্ভমেলা থেকে আগত পুণ্যার্থীরা। গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে হরিদ্বারের হর-কি-পৌরি ঘাটে কুম্ভমেলার শাহি যোগে স্নান করতে যে লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের রাজ্যে ফিরতেই করোনা আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও রিপোর্ট পজে়টিভ হতে শুরু করেছে।

বহু মানুষ কুম্ভ মেলায় পৌঁছনোর পরই করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তবে আইসোলেশনে থাকার বদলে তাঁরা ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ি রওনা দেন। ফিরতেই নিজে যেমন করোনা আক্রান্ত হন, তেমনই পরিবারের বাকি সদস্য ও আশেপাশের এলাকার মানুষও করোনা আক্রান্ত হতে থাকেন।

এই বিষয়ে মহামারী বিশেষজ্ঞ ডঃ ললিত কান্ত বলেন, “গঙ্গার পাড়ে মাস্ক ছাড়া হাজার হাজার মানুষের বসে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনেই একসঙ্গে স্নান করা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। আমরা আগেই জানতাম যে মন্দির-মসজিদের মতো ধর্মীয় স্থানে জমায়েত করে কোরাস সঙ্গীতও সহজেই বায়ু বাহিত হয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।”

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, একমাস ধরে চলা কুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণেই ২৬৪২ জন দর্শনার্থীর করোনা রিপোর্ট মেলে। এরমধ্যে নেতামন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তি, কেউই বাদ যাননি। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ য়াদব, নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ করোনা আক্রান্ত হন কুম্ভ থেকে ফেরার পরই। বলিউডের বিখ্যাত সুরকার শ্রবণ রাঠোরও কুম্ভমেলা থেকে ফেরার পরই করোনা আক্রান্ত হন ও মারা যান।

শাহি স্নান করতে পুণ্যার্থীদের ভিড়। ছবি:PTI

কুম্ভ থেকে আগত দর্শনার্থীরা করোনা ছড়াবে, এই ভয়ে বহু রাজ্যের তরফেই কুম্ভ ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম চালু করা হয়েছিল। এছাড়াও বাধ্যতামূলক আরটি-পিসিআরের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়মও চালু করা হয়েছিল। এত বিধিনিষেধের পরও বিগত ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তার জন্য কুম্ভ ফেরত যাত্রীদেরই দায়ী করা হয়েছে।

রাজস্থান সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে সংক্রমণের আচমকা বৃদ্ধির পিছনে দায়ী কুম্ভ ফেরত দর্শনার্থীরাই। একইভাবে ওড়িশায় কমপক্ষে ২৪ জন কুম্ভ ফেরত যাত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গুজরাটে একটি ট্রেনেই ৩১৩ জন যাত্রীর মধ্যে কমপক্ষে ৩৪ জন করোনা পজেটিভ ধরা পড়েন। মধ্য প্রদেশে ৬১ জনের মধ্যে ৬০ জন কুম্ভ ফেরত যাত্রীই করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েন। এদের মধ্যে ২২ জন আবার পলাতক।

তবে বৈজ্ঞানিক- গবেষকদের মতে, “এটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র”। কুম্ভ ফেরত যে সমস্ত যাত্রীরা ভিড় বাস-ট্রেনে ফিরেছেন, তাঁরা কয়েকগুণ বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছেন। দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এই কুম্ভ মেলা, তা বলাই যায়।

১২ এপ্রিল কুম্ভে শাহি স্নান করেন প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। সেইদিন দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৬৮ হাজার। বর্তমানে তা চার লাখের গণ্ডি পার করেছে। তবে এক ধর্মগুরুর মৃত্যু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতীকী স্নানের আবেদনের পর মেলা প্রাসঙ্গ বেশ কিছুটা ফাঁকা হয়। কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে গিয়েছে।

মেলা বাতিলের প্রসঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত বলেছিলেন, “মা গঙ্গার আশর্বাদে কোনও করোনাই হবে না।” তবে উল্টো সুর ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের গলায়। তিনি জানিয়েঠিলেন, যেহেতু এই প্যানডেমিক শেষ হওয়ার নামগন্ধ নেই, তাই স্লল্প আকারে প্রতীকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা উচিত। নয়তো সুস্থ মানুষরাও এসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ফিরবে।

হরিদ্বারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও জানিয়েছিলেন, এত ভিড়ের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব পালন করানো সম্ভব নয়। কুম্ভে আগতরা প্রসাদের মতো করোনা বিলি করার কথা বলেছিলেন মুম্বইয়ের মেয়র। সেই কথাই সত্যি হয়েছে বলে মনে করেন ডঃ তান্ত।