দেশ জুড়ে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন, কড়া ব্যবস্থার পথে কেন্দ্র
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের (Health Ministry) রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১০ টি রাজ্যে সর্বাধিক ভ্যাকসিনের (COVID Vaccine) ডোজ নষ্ট হচ্ছে।
জ্যোতির্ময় রায় : করোনার তাণ্ডবে বাড়ছে হাহাকার। বাঁচার একমাত্র আশার আলো হিসেবে করোনা ভ্যাকসিনকেই (COVID Vaccine) দেখছে মানুষ। অথচ এই করোনা ভ্যাকসিনের অভাব বিশ্ব জুড়ে। ভ্যাকসিন উৎপাদনের শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও ভারত তার বিপুল জনসংখ্যার জন্য ভ্যাকসিন জোগাতে পারছে না। চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের গতি আশানুরূপ নয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজণীয় কাঁচামালের অভাব। আর সব থেকে বড় বাধা পেটেন্ট আইন।
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমেরিকা ভারতকে ভ্যাকসিনের জন্য কাঁচামাল দিতে প্রস্তুত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পেটেন্ট আইনকে অস্থায়ী ভাবে তুলে দেওয়ার ভারতের প্রস্তাবকেও সমর্থন জানিয়েছে। যদি পেটেন্ট আইন অস্থায়ী ভাবে তুলে দেওয়া যায় এবং ভ্যাকসিনের জন্য কাঁচামালের সরবরাহ সঠিক ভাবে করা যায়, তাহলে অনেক ওষুধ কোম্পানি এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে। সব ঠিক থাকলে আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে।
এই মুল্যবান ভ্যাকসিনের অভাবের মাঝে ভ্যাকসিনের অপচয় ভারতে কম নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার বার বার রাজ্যগুলিকে ভ্যাকসিনের অপচয় সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে, কিন্তু তারপরেও কিছু রাজ্যে এই বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে না। হরিয়ানায় এখন ভ্যাকসিন সুরক্ষা অবহেলিত এবং নিয়মিত ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। গত দু’দিনেই হরিয়ানায় ভ্যাকসিনের এক শতাংশ ডোজ নষ্ট হয়েছে। হরিয়ানার মতো, পাঞ্জাব এবং বিহারেও একই অবস্থা, তবে প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের পর তামিলনাড়ুতে অনেক উন্নতি করেছে। রাজস্থানেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১০ টি রাজ্যে সর্বাধিক ভ্যাকসিনের ডোজ নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে লাক্ষাদ্বীপ, হরিয়ানা, আসাম, রাজস্থান, বিহার, পাঞ্জাব, দাদরা নগর হাভেলি, মেঘালয়, মণিপুর এবং তামিলনাড়ু রয়েছে। ভ্যাকসিন নষ্টের দিক থেকে হরিয়ানা পঞ্চম স্থানে থাকলেও শুক্রবার এটি দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের পরে হরিয়ানায় ৬.৫৪ শতাংশ ডোজের অপচয় হয়েছে। যদিও মে মাসে হরিয়ানায় এই পরিসংখ্যান ছিল ৫.৭২ শতাংশ। কর্মকর্তাদের মতে, এই অমূল্য ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। অনেক রাজ্য এটি প্রমাণ করে দেখিয়েছে, তবে কিছু রাজ্য সুব্যবস্থাপনার অভাবে এখনও ভুগছে। তাই এই সব রাজ্যগুলির জাতীয় রেটিং খুব খারাপ এবং এই সব রাজ্যগুলিকে নতুন ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না। এই রাজ্যগুলির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নতুন ভ্যাকসিন সরবরাহ সীমিত পরিমাণে উপলব্ধ থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভ্যাকসিন ডোজগুলির অপচয় রোধের ওপর আরও বেশি জোর দিয়েছিলেন। এই বৈঠকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। একটিও ডোজ নষ্ট না করায় প্রধানমন্ত্রী মোদী কেরলকেও অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, কিন্তু এখনও কিছু রাজ্য রয়েছে যেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তামিলনাড়ু একমাত্র রাজ্য যেখানে ৫ থেকে ৭ মে-র মধ্যে ভ্যাকসিনের অপচয়ের হার ৮.৮৩ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৯৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিহারও ক্রমশ অসতর্ক হয়ে পড়েছে। ৫ মে অবধি বিহারে ৪.৯৫ শতাংশ ডোজ নষ্ট হয়, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.১৩ শতাংশে। পাঞ্জাবে ৪.৯৮ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে।
কেন্দ্র জানিয়েছে যে শুক্রবার পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপে ডোজগুলির ২১.৯৩ শতাংশ অপচয় হয়েছে। হরিয়ানায় ৬.৫৪ শতাংশ, আসামে ৬.০৪ শতাংশ, রাজস্থানে ৫.৩৬ শতাংশ, বিহারে ৫.১৩ শতাংশ, পাঞ্জাবে ৪.৯৮ শতাংশ, দাদার নগর হাভেলিতে ৪.৯৭ শতাংশ, মেঘালয়ে ৪.৮৩ শতাংশ, মণিপুরে ৪.১৮ শতাংশ এবং তামিলনাড়ুতে ৩.৯৮ শতাংশ ডোজ নষ্ট হয়েছে।
হরিয়ানায় এখন পর্যন্ত ৪৮.০২ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে ৪১.৯১ লক্ষ টিকা মানুষকে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে, এই রাজ্যে ৬.১০ লক্ষ ডোজ বাকি রয়েছে। আগামী তিন দিন হরিয়ানায় ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে না। একইভাবে, বিহারকে ৮৪ লক্ষ, রাজস্থানে ১.৪২ কোটি এবং পাঞ্জাবকে ৪০.৬১ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়েছিল। এই তিনটি রাজ্যে আর কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না আপাতত।
ভ্যাকসিনের রাজনীতি বন্ধ করে রাজ্য সরকার ও রাজনৈতিক দলের উচিত অপচয় বন্ধ করা। ভ্যাকসিনের অপচয়ের দায় ভার রাজ্য সরকারের, কেন্দ্রের নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের অপচয় জাতীয় অপরাধ বলে গণ্য করা উচিত।