বিশ্লেষণ: হাতের তালুতে আফগানিস্তান, ৬ মাসের মধ্যেই ইতিহাস পাল্টে দেবে তালিবান!

তালিবানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে চায় না। সেনাবাহিনীর যারা ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছেন, তারা যেন সাধারণ বাসিন্দাদেরও তালিবান কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার বার্তা পৌছে দেন।

বিশ্লেষণ: হাতের তালুতে আফগানিস্তান, ৬ মাসের মধ্যেই ইতিহাস পাল্টে দেবে তালিবান!
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।
Follow Us:
| Updated on: Jul 15, 2021 | 8:43 PM

কাবুল: লক্ষ্য গোটা দেশেই ফের একবার দখল নেওয়া। সেই উদ্দেশ্যেই মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হতেই ফের একবার আসল রূপ ধারণ করছে তালিবান (Taliban)। আফগানিস্তানে (Afghanistan) ফের একবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। তালিবান দখল করছে একের পর এক জেলা। সাধারণ মানুষদের গৃহবন্দি বানিয়ে সেখানেই ঘাঁটি গাড়ছে তারা। জারি হচ্ছে নানা ফতেয়া। ইতিমধ্যেই পার্বত্য অঞ্চল টপকে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। দখল হয়েছে কান্দাহার, গজনির মতো শহর। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতেই বায়ুসেনার জরুরি বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ভারতের প্রায় ৫০ জন কূটনীতিবিদ ও দূতাবাসের কর্মীদের। এ দিকে, মার্কিন সেনাবাহিনীও আফগান সেনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়েছে। দু’দশক ধরে আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্বভার আর নিজেদের হাতে নেবে না মার্কিন বাহিনী। তালিবান অভ্যুত্থানের সময়ই মার্কিন সেনার সাহায্য হারানোয় বিপাকে পড়েছে আফগান সেনা।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি:

তালিবানি আগ্রাসনের কারণে ইতিমধ্যেই ২ লক্ষাধিক আফগানিস্তানের মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। ৩৭৫টি জেলার মধ্যে ২০০ জেলাতেই তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে আফগান বাহিনী। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরানের মতো বেশ কয়েকটি দেশের ১৮টি সীমান্তবর্তী জেলাতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তালিবানের একটি উগ্রপন্থী দলের দাবি, বর্তমানে আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশই তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কান্দাহারের পর এ বার গজনিতেও প্রবেশ করেছে তালিবান ও লস্কর-ই-তৈবা গোষ্ঠী। তারা সাধারণ মানুষদের গৃহবন্দি বানাচ্ছে।

তালিবানের দাবি:

তালিবানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে চায় না। সেনাবাহিনীর যারা ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছেন, তারা যেন সাধারণ বাসিন্দাদেরও তালিবান কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার বার্তা পৌছে দেন। অন্যদিকে, ফের একবার তালিবানি জঙ্গিদের দাপট বাড়তেই মহিলাদের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে বিধিনিষেধের ফতেয়া। নারীদের শিক্ষা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা, পোশাকের উপর জারি করা হয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ। একাধিক অঞ্চলে নারীদের সর্বক্ষণ বোরখা পড়ে থাকার ফতেয়াও জারি করা হয়েছে। ঘোর অঞ্চলে তালিবানরা মেয়েদের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করিয়েছে। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমনকি পশুপালনের কাজেও মহিলারা হাত লাগাতে পারবেন না বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: আমজনতাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ‘হাড় জ্বালানি’ তেল? কোন পথে সমাধান?

পথে মহিলারা:

তালিবানের এই দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের সেন্ট্রাল ঘোর অঞ্চলে শতাধিক মহিলা হাতে অস্ত্র নিয়ে পথে নেমেছেন এবং তালিবানবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের দাবি, যুদ্ধক্ষেত্রেই হোক কিংবা পথেঘাটে, আফগান সেনার মনোবল বাড়াতে এবং ফের একবার তালিবান শাসন শুরু হওয়া থেকে রুখতে তাঁরাও প্রতিবাদের আসরে অংশগ্রহণ করতে চান। গত মাসেই ঘোর অঞ্চলের একাধিক আন্দোলনকারী রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মহিলাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।

মাথা চাড়া দিচ্ছে পাক তালিবান:

তালিবান দখল নিচ্ছে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের । মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্ট বলছে, আর ৬ মাস । তার পর তালিবান পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে । ঠিক পাশেই পাকিস্তানে তেহরিক-এ-তালিবান জানান দিচ্ছে তাদের শক্তি । ২,৬১১ কিলোমিটারের পাক-আফগান পাহাড়ি সীমান্তে ফের অস্থিরতা। ২০১৭ থেকে পাকিস্তানে স্তিমিত হয় তালিবানের প্রভাব । পুলিশ ও সেনার সাঁড়াশি আক্রমণ থামিয়ে দিয়েছিল পাক তালিবানকে । সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ সংখ্যায় কমে এলেও মনে করা হচ্ছিল, পুরোপুরি শেষ হয়নি তালিবান জঙ্গিরা । ২০২১ -এ ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি কমে যাওয়ার পর আবার ডানা মেলতে শুরু করেছে হিন্দুকুশের এপারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী।

afghan

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।

খতম হয়নি পাক তালিবান। মার্কিন সরকারের এক রিপোর্ট বলছে, এখনও ২,৫০০ থেকে ৬,০০০ সদস্য আছে তাদের । আমেরিকার পর ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তারা আফগানিস্তান সরিয়ে নিচ্ছে তাদের বাহিনী। চিন্তা বেড়েছে চিনেরও। ইতিমধ্যেই তারা পাকিস্তানকে জানিয়েছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি কমানোর। দুশ্চিন্তার কারণ খাইবার-পাখতুনখোয়ায় চিনের তৈরি নানা পরিকাঠামো তৈরি ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ভারতেই ৪টে ভ্যাকসিন, লাইনে আরও…অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে না তো?