বিশ্লেষণ: ভারতেই ৪টে ভ্যাকসিন, লাইনে আরও…অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে না তো?

সরকার দ্রুত একাধিক ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিয়ে চাহিদা মেটাতে চাইছে।

বিশ্লেষণ: ভারতেই ৪টে ভ্যাকসিন, লাইনে আরও...অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে না তো?
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 14, 2021 | 8:08 PM

কলকাতা: আজ ডেল্টা তো কাল ডেল্টা প্লাস। মুহূর্মুহ রূপ পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস (COVID 19)। তাকে রুখতে ভারতে এখন পর্যন্ত ৪টে ভ্যাকসিন কাজ করছে। আরও ৪টে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অনুমোদন পাওয়ার জন্য। কিন্তু সবাই যে করোনার নানা অবতারকে তাড়াতে সক্ষম এমনটা নয়। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে একসঙ্গে একাধিক ভ্যাকসিন প্রয়োগে করোনাভাইরাসকে আদৌ রোখা যাবে তো? বিশ্বের একাধিক উন্নত দেশ একটা বা দু্’টি টিকাতেই টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালিয়েছে। চিন নিজেদের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাকরণ করেছে। আমেরিকাও ফাইজ়ার ও জনসনে জোর দিয়েছে। ব্রিটেনও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ও মডার্নার মাধ্যমে টিকাকরণ করেছে। সেখানে ভারতে ইতিমধ্যেই অনুমোদিত ভ্যাকসিনের সংখ্যা ৪। আগামিদিনে আরও অনুমোদন পাওয়ার কথা। তাহলে এই একাধিক ভ্যাকসিনের দাপটে করোনা ঠেকাতে গিয়ে অন্য কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না তো? এ বিষয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, সমস্যা তো একটা আছেই, আবার কেউ বলছেন না এটাই প্রয়োজনীয়। তাহলে ঠিক কোনটা?

ভ্যাকসিনের তালিকা

দেশে এখনও পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড, স্পুটনিক ভি ও মডার্না। অনুমোদন পাওয়ার তালিকায় আছে, ফাইজ়ার, বায়োলজিক্যাল ই, কোর্বেভ্যাক্স ও জনসন। সাধারণ মানুষ কোন ভ্যাকসিন পাবে? তা বেছে নেওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। কারণ এই ভ্যাকসিন সঙ্কটে যে কোনও ভ্যাকসিনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই যখন যেটা উপলব্ধ হচ্ছে, সেটাই নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দেশের কত সংখ্যক মানুষ কোন ভ্যাকসিন পাবেন, তা নিয়ে কেন্দ্র কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানায়নি। অর্থাৎ পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে ভ্যাকসিনে জোগানের ওপর।

গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ

একাধিক ভ্যাকসিনে বিভ্রান্তি?

একাধিক অনুমোদিত ভ্যাকসিনের মধ্যে কোনও একটি টিকা যদি নির্দিষ্ট কোনও স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কাজ না করে, তাহলে কী হবে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একটি নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি সারা দেশে টিকাকরণ হত, তাহলে তখন সকলের জন্য একই পদ্ধতিতে হাঁটতে পারত সরকার। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক টিকা দেশের মানুষ পাচ্ছেন। এতে কি লাভ হচ্ছে না ক্ষতি? এ বিষয়ে একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিভি নাইন বাংলা। সেখানে মোটের ওপর উঠে আসছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

পরিস্থিতি সামলানোই লক্ষ্য!

একটা বিষয় পরিষ্কার, ১৩০ কোটির দেশে যেনতেন প্রকারেণ দ্রুত টিকাকরণ প্রয়োজন। তাই সরকার দ্রুত একাধিক ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিয়ে সেই চাহিদা মেটাতে চাইছে। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুই বলেন, “একরকম ভ্যাকসিন সবাইকে দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হত। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ, জোগানের থেকে চাহিদা অনেক বেশি।” তাঁর মতে, কোন ভ্যাকসিন কোন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তা দেখার সময় বা সুযোগ কোনওটাই এখন নেই। এখন যত দ্রুত সম্ভব সকলকে টিকা দেওয়াই মূল লক্ষ্য। তাই অধিক ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিয়ে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। আমেরিকা বা ব্রিটেন যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, তা অধিক জনঘনত্বের ভারতে খাটে না বলেই মত তাঁর। চিনের কৌশলেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে বলে জানান তিনি।

ব্যর্থ হলে তথ্য নেই!

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার অবশ্য একটু ভিন্ন মত পোষন করেন। অতি ভ্যাকসিনে টিকাকরণে গাফিলতি থেকে যাচ্ছে এ কথা মানতে নারাজ তিনি। তবে এ বিষয়ে রেগুলেটরি বডির সঠিক নজরদারি আবশ্যক বলে মত তাঁর। দ্রুত সাধারণ মানুষকে টিকা দিতে গিয়ে ট্রায়ালের নিয়ম না মানলে সমস্যা বাড়বে বলে জানান তিনি। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “একাধিক ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়ার আগে উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। তবে একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার থেকে অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে চাহিদা পূরণ করা উচিত। বিজ্ঞানে এর মধ্যে কোনও ভুল নেই।” একটি ভ্যাকসিন যদি নির্দিষ্ট কোনও স্ট্রেনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে অধিক নজরদারি প্রয়োজন। এবং ভবিষ্যতে আবার কোনও ডোজ় দিতে হবে কি না তা নিয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত বলে মত তাঁর। হার্ড ইমিউনিটির জন্য দেশে দ্রুত অধিকাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু একাধিক ভ্যাকসিনের মধ্যে যদি একটি ভ্যাকসিন ব্যর্থ হয়, তাহলে কী হবে? সে বিষয়ে কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। তাই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে কোন পরিকল্পনা হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

একার পক্ষে অসম্ভব!

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক অবশ্য একাধিক ভ্যাকসিনে অনুমোদনের পক্ষেই সওয়াল করেন। অধিক ভ্যাকসিনে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান তিনি। তাঁর মতে, ১০০ কোটি ভ্যাকসিন এক বা দুই ভ্যাকসিন নির্মাতার পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “বলা যেতে পারে ভারতের মধ্যে ২৮টি ইউরোপের দেশ আছে। তাই আমেরিকার সঙ্গে আমাদের তুলনা করে লাভ নেই। চিন নিজেদের ভ্যাকসিনকে গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব দেশের জনসংখ্যা বেশি তাদের একাধিক ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়েই টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালাতে হবে। একদমই একাধিক ভ্যাকসিনে টিকাকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না।” তিনি জানান, কোথাও বলা নেই ভ্যাকসিন নিলে কোভিড হবে না। কোনও ভ্যাকসিনই ১০০ শতাংশ করোনা রুখতে পারে না, মৃত্যুহারটা কমাতে পারে। তাই মৃত্যু কমানোর জন্য দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কোন ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

অর্থাৎ ভ্যাকসিন প্রয়োজন। সেটা যে কোনও অনুমোদিত ভ্যাকসিনই হোক না কেন। তাই বিশ্লেষণমূলক আলোচনার থেকে এখন বেশি প্রয়োজনীয় অধিক সংখ্যক টিকাকরণ। সংখ্যাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মত চিকিৎসকদের। স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকরিতা এখন প্রাথমিক মাপকাঠি হতে পারে না। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: আমজনতাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ‘হাড় জ্বালানি’ তেল? কোন পথে সমাধান?

TV9 EXCLUSIVE

১০ লক্ষ টাকার ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ কারা পাবেন? কী ভাবে করবেন আবেদন?

ডায়েরির পাতার ভাঁজে আডবাণী, যশবন্তদের নাম, কী সেই ‘হাওয়ালা-জৈন’ মামলা?

সরষের ভেতরেই ভূত! ১ বছরে রান্নার তেলের দাম বাড়ল ৬৩ টাকা, কীভাবে?

কোভ্যাক্সিন তৈরিতে বাছুরের প্লাজমা? আসল সত্যিটা জানুন

ভেনেজুয়েলায় ১ টাকায় পেট্রল, ভারতে ১০২! নেপথ্যে কার কারসাজি?