School Reopening: সহপাঠীদের বন্ধুতা মায়ের পক্ষে পূরণ সম্ভব নয়, এ ক’দিনে বুঝলাম…

School reopen: "এই লকডাউন দেখাল, সব সুবিধা পেলেও বন্ধুত্বের উপযোগিতা কী। টিফিন থেকে নিজের মনের কথা ভাগ করে নেওয়া, হাসিঠাট্টা, একসঙ্গে ক্লাস করা, অনলাইন সে স্বাদ দিতে পারেনা।''

School Reopening: সহপাঠীদের বন্ধুতা মায়ের পক্ষে পূরণ সম্ভব নয়, এ ক'দিনে বুঝলাম...
অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 9:44 PM

অ নি ন্দি তা দ ত্ত: দীর্ঘ ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল। অনলাইনে পড়াশোনা চলছে ঠিকই, তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু পড়ুয়া। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেই তথ্য। তাই এবার সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই স্কুল খোলার (School Reopening) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন অভিভাবক হিসাবে এই দুই বছর আমার প্রথম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা শিশুদের মন খারাপ। আমি একজন মা। আমার স্বামী সরকারি চাকরি করেন। সেই চাকরি সূত্রে বাড়িতে তাঁর সময় কাটে খুব কম। এই সময়ে মেয়ের সঙ্গে সারাদিন কেটেছে আমার।

মেয়ের খুব ভাল বন্ধু আমি। অন্তত বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সহপাঠী বা সমবয়সীর সঙ্গে যে বন্ধুত্ব, সেই শূন্যস্থান পূরণ যে মায়েদের দ্বারা সম্ভব নয়, তা এই ক’দিনে বেশ ভালই বুঝেছি। আমি দেখেছি, ও হয়তো মুখে বলছে না, কিন্তু বন্ধু বান্ধব, সমবয়সীদের সঙ্গে দেখা না হওয়াটা ওর মনের পক্ষে বড় চাপ হয়ে উঠেছে। স্কুল মানে তো শুধু লেখাপড়া নয়। স্কুল মানে ক্লাসরুম। সেখানে ইট-কাঠ-পাথরের সঙ্গেও একটা রিলেশনশিপ। আমার মেয়ের স্কুল পাঠভবন ডানকুনি তেমন একটা স্কুল।

স্কুলের চারদিকে গাছগাছালি, তার মধ্যে স্কুলটা। স্কুলটা দেখলেই আলাদা একটা টান অনুভব হয়। সেই ভালবাসার সঙ্গে ওরাও যুক্ত। আর শিক্ষকদের সঙ্গে ওদের সম্পর্কটা ভীষণ ভাল। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমার শিক্ষকদের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সেখান থেকে বলছি, আমার মেয়ে তার শিক্ষকদের সঙ্গে ভালবাসায় আবদ্ধ। সেগুলো হঠাৎ কেমন যেন বন্ধ হয়ে গেল! শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই না-দেখা একটা মানসিক চাপ হয়েছে ওর।

যদি পরীক্ষার নম্বরের খাতিরে ধরি, আমার মেয়ে খুব ভাল ছাত্রী। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পরীক্ষায় খুব ভাল নম্বর পেত ও। তবে ক্লাস এইটে সেই নম্বরটা কীভাবে কমে গেল! কিন্তু বাড়িতে থেকে ও পড়াশোনাটা বেশিই করেছে। এই যে মানসিক আনন্দটা থাকছে না, সেখান থেকে যে কী কী ক্ষতি হতে পারে, আমার মনে হয়, সবচেয়ে ভাল উদাহরণ এটাই। এই লকডাউন দেখাল, সব সুবিধা পেলেও বন্ধুত্বের উপযোগিতা কী। টিফিন থেকে নিজের মনের কথা ভাগ করে নেওয়া, হাসিঠাট্টা, একসঙ্গে ক্লাস করা, অনলাইন সে স্বাদ দিতে পারেনা।

আর এই লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে আরও একটা ব্যাপার ঘটেছে। সেটা হল আমাদের প্রত্যেকের রুটিনে হেরফের। খাওয়া-দাওয়া-ঘুম এসবের রুটিন যেন বাড়িতে থাকতে থাকতে পাল্টে গিয়েছে। রাতে কোনও কারণ ছাড়া বেশিক্ষণ আমরা জেগে থাকছি। বেলা করেও উঠলেও হবে। এই চিন্তা ভাবনাটাও তো খারাপ। যেন কোন প্রাগতৈহাসিক যুগে চলে গিয়েছিলাম। সময় যেন কাটতই না।

আবার আমি নিজেও মেয়ের বন্ধুদের মিস করেছি। মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর বন্ধুদের জন্যও এটা সেটা রান্না করে পাঠাতাম। ওরা ফোন করলেই বলত, “আন্টি তোমার হাতে এটা কতদিন খাইনা বলো’। এসব শুনে আমারও মন খারাপ হত।

আর এতগুলো জিনিস যদি না করতে পারে, একটা বাচ্চার মানসিক ক্ষেত্রে যে কতটা ক্ষতিকর তা অনুধাবন করেছি। এবার অবশ্য মেয়ের জ্বরের জন্য অনলাইনেই পরীক্ষা দেবে ও। কিন্তু আমি নিজেই এবার ভীষণ ভাবে চাইছিলাম যে স্কুলটা খুলে যাক।

একদিন মেয়ের খাতা জমা দিতে গিয়েছিলাম স্কুলে। ও সঙ্গেই ছিল। আমরা অভিভাবকরা মিলে স্কুলে ফোন করে মেয়েদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওইটুকু সময়ের মধ্যে সে যে কী আনন্দ করেছে ওরা… একদিনের সেই ভালো লাগার সেই রেশ ছিল প্রায় ১৫ দিন। তাই ওদের সঙ্গে আমরাও চাই স্কুল খুলুক। পরীক্ষা হোক। কারও কাছে নয়, নিজের কাছে নিজেরা কতটা যোগ্য সেটা পরীক্ষা দিয়ে বুঝুক ওরা। আমি পারি, সেই কনফিডেন্সটা তৈরি করতে হলে স্কুল খোলা জরুরি। তবে এতসব নেগিটিভিটির মধ্যে ভাল কিছু যদি হয়েছে, সেটা হল গত কয়েক মাসে মা-মেয়ের বন্ডিং-টা আরও দারুণ হয়েছে। আরও ভাল করে একে অন্যকে বুঝেছি আমরা।

আপাতত স্কুল খোলার পক্ষে আমি। শুধু কোভিড পরিস্থিতিতে চাই বাচ্চার শারীরিক নিরাপত্তার দিকটা দেখার জন্য স্কুলের সেই পরিকাঠামোটা থাকুক। আর পরীক্ষাগুলো ঠিকঠাক হোক। এক্সিলেন্সের দিকে নজর দিক স্কুল কর্তৃপক্ষও। তবে এত দিন পরে যখন মেয়ে আবার স্কুলে যাচ্ছে, ওকে স্কুলে দিয়ে আসার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছে। সেই তিন বছরের মেয়েকে যেদিন প্রথম স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম…

(লেখিকা একজন অভিভাবক। মতামত ব্যক্তিগত)।

আরও পড়ুন: Nandigram Case in High Court: ফের পিছল নন্দীগ্রাম মামলা, শুভেন্দুর আইনজীবীকে লিখিত বয়ান দেওয়ার নির্দেশ