Calcutta High Court: আদালতের হস্তক্ষেপে মিলেছে পাকা বাড়ি, মাধ্যমিক পাশ করেছে সমীর, রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বিচারপতির
Justice Abhijit Ganguly: আবারও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন সমীরের সৎ মা পিঙ্কি। তাঁকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
কলকাতা : মায়ের মৃত্যু, তারপর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। সব মিলিয়ে জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল কিশোরের। বাবার চাকরিটা সৎ মা পেলেও, ক্রমে সংসার ছেড়ে চলে যান তিনিও। উপার্জন প্রায় ছিল না বললেই চলে। পজডাশোনা তো দূরের কথা, মাথার ওপর আচ্ছাদন বলতে ছিল এক টুকরো ত্রিপল। আদালতের হস্তক্ষেপে ক্রমে ছন্দে ফিরেছে পূর্ব মেদিনীপুরের সেই টিঙ্গুয়া পরিবার। কিন্তু আবারও আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। বৃদ্ধ ও তাঁর নাতিকে। সেই মামলায় ওই কিশোরের সৎ মাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে ওই সাঁতাল পরিবার রাজ্যের তরফ থেকে কেন কোনও সাহায্য পেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরের এক সাঁওতাল কিশোর সমীর টিঙ্গুয়া। বছর কয়েক আগে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১২ সালে তাঁর বাবা পিঙ্কি নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। স্কুলের গ্রুপ ডি পদে কর্মরত ছিলেন সমীরের বাবা। ২০১৫ সালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। আর নিয়ম মাফিক বাবার সেই চাকরি পান সমীরের সৎ মা পিঙ্কি। কথা ছিল, চাকরি পেয়ে স্বামীর পরিবারের দেখভাল করবেন তিনি। কিন্তু কোথায় কি! সমীর আর তার দাদু দয়ানাথকে রেখেই নিজের মেয়েকে নিয়ে সংসার ছেড়ে চলে যান পিঙ্কি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বৃদ্ধ দয়ানাথকে। এরপরই আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন তিনি।
গত বছর ডিসেম্বরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের বেঞ্চে ওঠে সেই মামলা। বিচারপতি সব শুনে জানতে চেয়েছিলেন সমীররা কোথায় থাকেন? ছবিতে দেখেন কোনও বাড়ি নয়, ছত্রী নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে একটি বটগাছের তলায় ত্রিপল খাটিয়ে থাকেন তাঁরা। দেখে অবাক হয়ে যান বিচারপতি। সাঁওতাল গোষ্ঠীর মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। সে কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা জানান, তাঁরা তেমন কিছু পান না।
এরপরই জেলাশাসককে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রকল্প অনুযায়ী বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে পাকা বাড়ি পেয়েছে ওই পরিবার। সমীরকে স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থাও করে দেন বিচারপতি। মাধ্যমিকে এ বছর ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সমীর।
কিন্তু আবারও মুখ ফিরিয়েছেন সৎ মা। আদালতে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও গত চার মাস ধরে পিঙ্কি টাকা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে টিঙ্গুয়া পরিবার। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে আগামী ৩০ অগস্ট আদালতে হাজিরা দেন পিঙ্কি। এ দিন আদালতে মামলা চলাকালীন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকেও সাঁওতালদের সরকারি সুবিধার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আইনজীবীও উল্লেখ করেন, সমাজে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য রাজ্যের কর্তব্য সংবিধানে নির্দিষ্ট করা আছে। যদিও রাজ্য এ ক্ষেত্রে তা পালন করেনি। আদালত তার কাজ করেছে।