Howrah Bridge: বেড়েছে যানবাহনের চাপ, দীর্ঘ ২০ বছর পর হাওড়া ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত
Howrah Bridge: কলকাতা পোর্ট সূত্রে খবর, ২০০২-০৩ সালে শেষ বারের মতো হাওড়া ব্রিজের স্টাডিস রিপোর্ট তৈরি করে ২০০৪ সালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। সেই সময় এই ব্রিজের তেমন কোন খুঁত পাওয়া যায়নি।

কলকাতা: দীর্ঘ দু’দশক পর হাওড়া ব্রিজের (Howrah Bridge) স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা হেলথ অডিট করার সিদ্ধান্ত নিল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্ট তথা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (Kolkata Port Trust)। যদিও এই কাজের জন্য হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু কোনোভাবেই বন্ধ রাখা হবে না, সেই বিষয়টিও পরিষ্কার করে দিয়েছে পোর্ট কর্তৃপক্ষ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্ট, কলকাতা চেয়ারম্যান রথীন্দ্র রমন বলেন, দু’দশক আগে শেষবারের মতো নিখুঁতভাবে হাওড়া ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। তারপর আর হয়নি। অবশেষে ফের শুরু হতে চলেছে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা। আইআইটি চেন্নাই এবং জাহাজ মন্ত্রকের অধীনস্থ এনটিসিপিডব্লিউসি যুগ্মভাবে হাওড়া ব্রিজের স্টাডিস রিপোর্ট তৈরি করছে। সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরই হেলথ অডিট শুরু করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু হাওড়া ব্রিজ নয়, খিদিরপুরের বাস্কেল ব্রিজ যেভাবে মাঝেমধ্যেই সমস্যা তৈরি করে তার জন্য পরিকাঠামো বদলে মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের তরফে।
এদিন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বাস্কেল ব্রিজ নিয়ে স্টাডিজ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা হাতে পেলেই বোঝা সম্ভব হবে নতুন করে ভেঙে নির্মাণ করতে হবে নাকি দুর্বল অংশগুলিকে ভেঙে সংস্কার করতে হবে। সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে ওই বাস্কেল ব্রিজ তৈরি করতে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা যাচ্ছে। দুর্বল অংশ ভেঙে সংস্কার করতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি হাওড়া থেকে কলকাতা গঙ্গার নীচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির ব্যাপারেও ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে পোর্ট কর্তৃপক্ষ।
শেষ কবে হয়েছিল স্বাস্থ্য পরীক্ষা?
কলকাতা পোর্ট সূত্রে খবর, ২০০২-০৩ সালে শেষ বারের মতো হাওড়া ব্রিজের স্টাডিস রিপোর্ট তৈরি করে ২০০৪ সালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। সেই সময় এই ব্রিজের তেমন কোন খুঁত পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছোটখাটো যানবাহন থেকে শুরু করে ভারী যানবাহনের যাতায়াতের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে লোহার কাঠামো এবং হাওড়া ব্রিজ যে স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে আছে তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের হিসাব বলছে, হাওড়া সেতুর ওপর দিয়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মিনিটে ৫৫০ টি গাড়ি যায়। তাই এটার গুরুত্ব অন্যান্য সেতুর তুলনায় সর্বাধিক। বর্তমানে গাড়ির চাপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। যে কারণে শতাব্দী প্রাচীন এই হাওড়া ব্রিজের অবস্থা কি রকম রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এর নব চেয়ারম্যান।
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট সূত্রে খবর, মূলত হাওড়া ব্রিজের লোহার কাঠামোকে প্রতিটি কোনা এবং অন্যান্য অংশ বিশেষকে পরীক্ষা করাই এই স্বাস্থ্য অডিটের মূল উদ্দেশ্য। আইআইটি চেন্নাই দেশের বিভিন্ন বৃহত্তম সেতুগুলির স্বাস্থ্য অডিট করে থাকে। তাই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদেরই এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই হাওড়া ব্রিজের ভার কমাতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেতুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পুরনো ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের স্তর সম্পূর্ণ ভাবে তুলে ফেলে ২৫ মিলিমিটার পুরু একটি আস্তরণ দেওয়া হবে। প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৩ মিটার চওড়া হাওড়া সেতুর প্রস্থের গোটা অংশ জুড়েই এই কাজ হবে। এর আগে রাইটস ২০০৩ সালে এই হেলথ অডিটের কাজ করেছিল।
কবে চালু হয়েছিল হাওড়া ব্রিজ?
১৯৪৩ সালে চালু হওয়া হাওড়া সেতু ‘ব্যালান্সড ক্যান্টিলিভার ব্রিজ’-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ১৮৭০ সালে কলকাতা বন্দর তৈরি হওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ ওই সেতু নির্মাণের কথা ভাবলেও গঙ্গার মতো নদীতে স্তম্ভ ছাড়া সেতু নির্মাণের বিশেষ প্রযুক্তি খুঁজতেই দীর্ঘ সময় লেগেছে। সেতুর পরিকল্পনা এবং নকশা তৈরি করেছিল সেই সময়ের ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সংস্থা ‘র্যান্ডেল, পালমের এবং ট্রিটন’।
ইতিহাস বলছে, হাওড়া সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৫০০ টন ইস্পাত। যার বেশির ভাগ জোগান দিয়েছিল টাটা স্টিল। সেতুর বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়েছিল ব্রেথওয়েট, বার্ন এবং জেসপ কারখানায়। সেতুর দু’পাশে থাকা স্তম্ভের মতো অংশ ছাড়িয়ে নদীর পাড়ের দিকে থাকা অংশই আসলে সেটির মূল ভার বহনকারী অংশ। ওই অংশকে বলা হয় ‘অ্যাঙ্কর আর্ম’।





