সারদা-রোজভ্যালির মাঝেই ২ হাজার কোটির চিটফান্ড প্রতারণা, ‘নিষ্ক্রিয়’ পুলিস, তদন্তে ইডি

প্রতারিত হয়ে ওই সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে কলকাতার বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতারিতরা। অভিযোগ, কোনও মামলার তদন্ত হয়নি। গ্রেফতার হননি একজনও প্রতারক। শেষে মামলা শুরু হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) দিল্লির সদর দফতরে।

সারদা-রোজভ্যালির মাঝেই ২ হাজার কোটির চিটফান্ড প্রতারণা, 'নিষ্ক্রিয়' পুলিস, তদন্তে ইডি
অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Dec 18, 2020 | 7:45 PM

সিজ়ার মণ্ডল, কলকাতা: সারদা, রোজভ্যালি, আইকোর সহ প্রায় ৫০টি চিটফান্ড (Chit Fund) সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই-ইডি। জেলে অনেক সংস্থার কর্তারা। কিন্তু তার মধ্যেই গত পাঁচ বছরে নিঃশব্দে বাজার থেকে একই কায়দায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা তুলে নিল কলকাতার একটি সংস্থা। প্রতারিত হয়ে ওই সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে কলকাতার বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতারিতরা। অভিযোগ, কোনও মামলার তদন্ত হয়নি। গ্রেফতার হননি একজনও প্রতারক। শেষে মামলা শুরু হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) দিল্লির সদর দফতরে।

পেশায় ব্যবসায়ী বিশাল আগরওয়াল। সল্টলেকের বাসিন্দা বিশাল ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে বড়বাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন সুরানা গোষ্ঠীর সিইও শান্তি সুরানা, তাঁর স্ত্রী প্রভা এবং সংস্থার একাধিক কর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন, ওই গোষ্ঠী “সুরানা গ্রুপ ফান্ড স্কিম” নামে একটি স্কিম বাজারে আনে। সেখানে বলা হয় ৪ বছরে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে এবং সেই সঙ্গে ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড। মোটা লাভের আশায় তিনি দু’দফায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লগ্নি করেন ওই সংস্থায়। কিন্তু ৪ বছর পর ২০১৮ সালে যখন পুরো টাকা দ্বিগুণ হয়ে ফেরত পাওয়ার কথা, তখনই বন্ধ হয়ে যায় সংস্থার বিবাদিবাগের অফিস। শেক্সপিয়ার সরণিতে সংস্থার সদর দফতরে বার বার যাওয়ার পরও ফেরত পাননি টাকা। এরপর বিশাল তপসিয়া থানাতেও একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, বড়বাজার, কড়েয়া, তপসিয়া-সহ কলকাতার একাধিক থানায় প্রায় ১ ডজন অভিযোগ জমা পড়েছে সুরানা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গত ১ বছরে। কিন্তু তারপরও কোনও মামলাতেই কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ প্রতারিতদের। গ্রেফতারও হননি সুরানা গোষ্ঠীর কোনও কর্তা।

প্রতারিতদের দাবি, সুরানা গোষ্ঠী তাঁদের জানিয়েছিল, নির্মাণ ক্ষেত্রে সংস্থা বিনিয়োগ করে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সুরানা গোষ্ঠীর নির্মাণ চলছে এবং সেই ব্যবসারই একটা লাভ্যাংশ তাঁরা লগ্নিকারীদের দেয় লগ্নির বিনিময়ে। সুরানা গোষ্ঠীর এই ফান্ড স্কিমের একটি নথি রয়েথে টিভি নাইন ডিজিটালের কাছে। ২০১৭ সালের ওই নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ৪ বছরে ২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হবে লগ্নিকারীকে। ওই নথিতে সংস্থা নিজেই জানাচ্ছে, তাঁরা বাজার থেকে ১৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ তুলেছে।

সাধারণভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনুমোদিত কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে টাকা দ্বিগুণ ফেরত পেতে সময় লাগে অন্তত ৮ বছর। সেখানে তার অর্ধেক সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার টোপ দিয়ে এ রাজ্যের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা তুলেছে সুরানা গোষ্ঠী। প্রতারিতদের একটা বড় অংশ সিনিয়র সিটিজেন। অনেকেই তাঁদের জীবনের সমস্ত সঞ্চয় বিনিয়োগ করে কার্যত কপর্দকশূন্য। থানায় অভিযোগ জানানোর পর কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রতারিতদের অনেকেই কলকাতা পুলিসের উর্ধ্বতন আধিকারিকদের কাছেও অভিযোগ জানান। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ।

সূত্রের খবর, এরপরই প্রতারিতদের একটি অংশ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সদর দফতরে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ জানান। তারপরই এ বছরের অগস্ট মাসে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

আরও পড়ুন: বিজেপির বড় পদক্ষেপ, বাংলায় আসছেন ৫ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

কলকাতা পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ সুরানা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাঁদের দাবি, ইডি তদন্তের বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। যদিও ইডি কলকাতা পুলিসের কমিশনার অনুজ শর্মাকে চিঠি দিয়ে (মেমো নম্বর- ইসিআইআর/এইচকিউ/১১/২০) বড়বাজার, কড়েয়া, ভবানিপুর তপসিয়া থানায় ৭টি এফআইআরের কপি চেয়ে পাঠিয়েছে। কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, কড়েয়া এবং তপসিয়ার দুটি এফআইআরের কপি কলকাতা পুলিস ইডিকে দিলেও বাকিগুলো দেয়নি। সারদা বা রোজভ্যালির মতো এ ক্ষেত্রেও ইডির অভিযোগ, তদন্তে সহযোগিতা করছে না কলকাতা পুলিস। যদিও কলকাতা পুলিসের কর্তারা সে কথা অস্বীকার করেছেন।

কিন্তু গোটা ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন প্রতারিতরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন এ ধরনের এত বড় অর্থনৈতিক অপরাধের পরও বিশেষ তদন্ত দল তৈরি করে তদন্ত করল না কলকাতা পুলিস। রাজ্য পুলিস ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্স বলে একটি আলাদা দফতর করেছে পনজি প্রতারণার তদন্ত করতে। তাঁরাও এই মামলার তদন্ত করলেন না কেন? প্রতারিতদের প্রশ্ন, তা হলে কি এই প্রতারণার টাকা থেকেও লাভবান হয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা? আর তাই ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এই মামলা!

আরও পড়ুন: স্বামীজীর বাড়ি হয়েই ‘শাহি’ সফর শুরু