Anti-Narcotics Task Force: মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স কবে? ভবিষ্যত নিয়ে অন্ধকারে পরিকল্পনার মাথারাই!

Anti-Narcotics Task Force: সাম্প্রতিক অতীতে মাদক পাচার রোধে সাফল্য মিললেও, পরবর্তীতে চক্রের মাথা পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য যে দীর্ঘ তদন্ত প্রয়োজন তাতে বারে বারে খামতি লক্ষ্য করা গিয়েছে লোকবলের অভাবে। অনেক ক্ষেত্রে সিআইডির হাতে থাকা একাধিক মামলায়, মূল মাথা পর্যন্ত পৌঁছনর আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত

Anti-Narcotics Task Force: মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স কবে? ভবিষ্যত নিয়ে অন্ধকারে পরিকল্পনার মাথারাই!
কলকাতা পুলিশ (ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2023 | 12:00 PM

কলকাতা:  নবান্নের সবুজ সঙ্কেত রয়েছে। কিন্তু তার পরেও লোকবল এবং পরিকাঠামোর অভাবে সংশয় রাজ্যের প্রথম বিশেষ মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স গঠন। গত কয়েক বছরে এ রাজ্য আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ট্রানসিট পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সিআইডি-র মাদক বিরোধী শাখা থাকলেও, বাস্তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক অফিসার এবং কর্মীর অভাবে অনেকাংশই নিষ্ক্রিয়।

কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বর্তমানে বড় মাপের মাদক বিরোধী চালায়। গত এক বছরে গাঁজা, ব্রাউন সুগার থেকে শুরু করে নিষিদ্ধ কফ সিরাপ এবং ইয়াবার মতো মাদক পাচার রোধে বেশ কয়েকটি বড় সাফল্য পেয়েছেন রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, দু-ভাবে এ রাজ্যকে মাদক পাচারের করিডর হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এক, ইয়াবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইকোট্রপিক ড্রাগ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং পশ্চিমী বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। সেই ড্রাগের কাঁচামাল উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিকাল সংস্থা থেকে চোরাপথে এ রাজ্য ঘুরে পৌঁছে যায় মণিপুর এবং নাগাল্যান্ড সংলগ্ন মায়ানমার সীমান্তে। সেখানে কুটির শিল্পের মতো গ্রামে গ্রামে তৈরি হয় এই মাদক। তৈরি হওয়া মাদক ফের মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের মাদক পাচারকারীদের হাত ঘুরে চলে আসে এই রাজ্যের পথে। সেই মাদকের একটা অংশ পাচার হয় পড়শি বাংলাদেশে, বাকিটা ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

দ্বিতীয় রুট হচ্ছে ব্রাউন সুগার বা হেরোইনের। মায়ানমার এবং উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় মদতে যে আফিম চাষ হয় মায়ানমার সীমান্তের প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায়, সেই আফিম থেকে একদম প্রাথমিক-নিম্ন মানের ব্রাউন সুগার তৈরি হয়ে চলে আসে এই রাজ্যের পথে।

অন্যদিকে পঞ্জাব এবং রাজস্থান সংলগ্ন পাকিস্তান সীমান্ত ধরে যে উচ্চ মানের হেরোইন চোরাপথে ভারতে ঢোকে তার একটা বড় অংশ এই মায়ানমারের নিম্ন মানের হেরোইনের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারজাত করা হয়। সেই ব্যবসার ক্ষেত্রে এই রাজ্যকে মাদক পাচারকারীদের একটা বড় অংশ ট্রানসিট হাব হিসাব ব্যবহার করার চেষ্টা করছে তার একাধিক উদাহরণ মিলেছে সাম্প্রতিক অতীতে।

খাস বর্ধমান শহরে বসে নিম্নমানের মরফিন থেকে হেরোইন তৈরির ল্যাবরটরিরও হদিশ মিলেছে এসটিএফের অভিযানে। গত এক বছরে প্রায় ৪০ টি বড় অভিযানে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের মাদক বাজেয়াপ্ত করেছেন স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স সাফল্য পেলেও,  জঙ্গি-নাশকতা বিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে জাল নোট এবং অর্গানাইজড ক্রাইমের বিরুদ্ধে অভিযানের দায়িত্ব রয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অনেক সময় সাপেক্ষ এবং পর্যাপ্ত লোকবলও প্রয়োজন চক্রের মাখা পর্যন্ত পৌঁছতে।”

সেই কারণেই কেন্দ্রের নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর আদলে কেবলমাত্র মাদক বিরোধী বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। নারকো টেররিসম অর্থাৎ মাদক বিক্রির টাকা জঙ্গি কার্যকলাপে লগ্নি হচ্ছে না এই কথাও জোর গলায় বলতে পারছেন না গোয়েন্দারা। তাই একজন পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার আধিকারিকের নেতৃত্বে দুজন ডেপুটি পুলিশ সুপার, দুজন ইনস্পেক্টর, ১৬ জন সাব ইনস্পেক্টর এবং দেড়শ জন কনস্টেবলকে নিয়ে নতুন বাহিনী তৈরির খসড়া পাঠানো হয়েছে নবান্নে।

সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক অতীতে মাদক পাচার রোধে সাফল্য মিললেও, পরবর্তীতে চক্রের মাথা পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য যে দীর্ঘ তদন্ত প্রয়োজন তাতে বারে বারে খামতি লক্ষ্য করা গিয়েছে লোকবলের অভাবে। অনেক ক্ষেত্রে সিআইডির হাতে থাকা একাধিক মামলায়, মূল মাথা পর্যন্ত পৌঁছনর আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে একটি মামলার তদন্তে উঠে আসে শাসক দলের এক যুবনেতার নাম। তাঁকে ভবানীভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও অন্য মামলার চাপে সেই মামলা চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। এই সমস্ত কারণেই বিশেষ বাহিনী তৈরির ক্ষেত্রে নবান্ন থেকে নীতিগতভাবে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বলে দাবি রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের। কিন্তু তার পরেও সেই বাহিনী কবে তৈরি করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার একাধিক কারণ।

এক, প্রয়োজনীয় আধিকারিক এবং পুলিশ কর্মীর অভাব দুই, মাদক বিরোধী অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো তিন,  প্রয়োজন মাদক চিহ্নিত করতে পারদর্শী বিশেষ কুকুর বাহিনী চার, সেই সঙ্গে দরকার রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরটরির সহায়তা

এই সমস্ত কিছু কবে আদৌ মিলবে তা নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ কর্তারা। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “নবান্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও এখনও ভাঙর কলকাতা পুলিশ পুরোপুরি হাতে নিতে পারেনি। অন্যদিকে সম্প্রতি রাজ্য সিআইডির অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা এবং ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্সকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারপরে মাদক বিরোধী অভিযান কবে প্রায়োরিটির তালিকায় জায়গা পাবে তা নিয়ে সংশয়ে পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ডরাই।