Anubrata Mondal: কখনও খোশমেজাজে, কখনও চিন্তিত, অনুব্রতর দিনভর
Anubrata Mondal: বর্ধমান শহর পেরিয়ে আসানসোল আদালত চত্বরে ঢুকল সিবিআইয়ের কনভয়। চারদিকে ভিড়। শাঁখও বাজল। কেষ্টর জামিনের আশায় এসেছেন অনেকে।
সুমন মহাপাত্র
শাসকদলের জেলার নেতা হলেও রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব কম নয়। তাঁর ‘কেষ্ট-উবাচ’ নিয়ে রাজ্যজুড়ে আলোচনা চলে। গত কয়েকদিনে রাজ্য রাজনীতির আলোচনা মূলত তাঁকে ঘিরে। সিবিআই হেফাজতে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। তৃণমূলের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল আজ দিনভর নানা ‘রূপে’ ধরা দিলেন। কখনও খোশমেজাজে। কখনও হালকা চিন্তিত। দিনশেষে বিষণ্ণ।
ভোর সাড়ে পাঁচটা। নিজাম প্যালেসে ওই কাকভোরেই তৎপরতা শুরু হল। নেমে এলেন এক অফিসার। আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। কনভয়ের কোন গাড়িতে কে যাবেন, তা ঠিক হল। বেশ কিছুক্ষণ পর এলেন অনুব্রত। দেখে মনে হল, হালকা মেজাজে রয়েছেন। অন্যদিনের মতো সাংবাদিকরা তাঁর দিকে বুম বাড়িয়ে দিলেন। এর আগে কোনওদিন মুখ খুলেছেন। কোনওদিন কিছু বলতে চাননি। আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যেন তৈরি ছিলেন কেষ্ট।
সিবিআই তাঁকে প্রভাবশালী বলছে। এই প্রশ্নের উত্তরে কেষ্টর জবাব, ওটা সিবিআইয়ের তোতাবুলি। একইসঙ্গে গাড়িতে ওঠার সময় জানিয়ে দিলেন, বিচারককে হুমকি চিঠি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাবেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মমতা তাঁর জন্য যা করেছেন তা যথেষ্ট মন্তব্য করলেন।
অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে কনভয় রওনা দিল আসানসোল। মাঝে ডানকুনিতে যানজটে আটকে যায় কনভয়। সেসময়ও সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাব স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দেন অনুব্রত। শক্তিগড়ে একটি ধাবার সামনে গিয়ে থামল কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে ধাবায় ঢুকলেন কেষ্ট। ল্যাংচা খেলেন? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অনুব্রতর জবাব, “না, না পুরি খেয়েছি। জানো না আমার মিষ্টি খাওয়া বারণ।” অনুব্রতকে দেখতে ধাবার সামনে ভিড় করেন অনেকে। সেখানে কেউ কেউ কেষ্টকে কটাক্ষ করে মন্তব্যও করতে থাকেন।
শক্তিগড় থেকে রওনা দিল কনভয়। বর্ধমান শহরে কনভয় পাশ করার সময় তৃণমূলের পতাকা হাতে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কংগ্রেসের সমর্থকরা আবার গরু চোর বলে চিৎকার করেন।
বর্ধমান শহর পেরিয়ে আসানসোল আদালত চত্বরে ঢুকল সিবিআইয়ের কনভয়। চারদিকে ভিড়। শাঁখও বাজল। কেষ্টর জামিনের আশায় এসেছেন অনেকে। পুলিশ মানুষকে সরানোর চেষ্টা করল। তবে তা সম্পূর্ণ সফল হল না। আদালত চত্বরের দোকানদাররাও আজ সকাল সকাল দোকান খোলেন। তাঁদের আশা, আজ বিক্রিবাটা বেশি হবে।
জামিন পাবেন কি না, তা নিয়ে একটা চিন্তা সকাল থেকেই ছিল অনুব্রতর। আদালত চত্বরে সেই আলোচনা যেন আরো কয়েকগুণ। জামিন পাবেন কি? নাকি জেল হেফাজত? উৎসাহিত মানুষের আলোচনা যেন থামতেই চায় না। শেষ পর্যন্ত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজত হল তাঁর।
আদালত থেকে বেরনোর সময়ও কিছুটা হালকা মেজাজেই দেখা গেল অনুব্রতকে। নিজের বিষণ্ণতা ঢাকার চেষ্টা? সে যাই হোক, উৎসাহী মানুষের আলোচনা যেন থামে না। সাত তারিখে উপস্থিত থাকার কথাও বললেন অনেকে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত চত্বরে ফের আসবেন, একথা বলতে বলতেই অনেকে বাড়ির পথে রওনা হলেন। দিনভর অনুব্রতকে নিয়ে জল্পনাতেও ততক্ষণে ইতি পড়ে গিয়েছে।