Condom: বাঙালি কবে থেকে কন্ডোম ব্যবহার করছে, জানেন!
Condom Usage: জন্ম নিয়ন্ত্রণে মালা ডি-র বিজ্ঞাপন দেখেছে। কিন্তু চকোলেট-ভ্যানিলা-পাইন অ্যাপেল স্বাদের যৌন-উদ্বেলিত দেশি-বিদেশি কন্ডোমের বিজ্ঞাপনের চল গত এক দশক আগে সেভাবে দেখেনি বাঙালি। আলোচনা তো দূর কন্ডোমের ব্যবহার একটা শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
১০৯৭। মনে আছে নম্বরটি! উম্ হুম্ বেলা বোস নয়। বুলাদির। এই বুলাদিই বাঙালিকে নাবালক থেকে সাবালক করে তুলেছিলেন বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। এমনটা নয় যে যৌনতা নিয়ে বাঙালি এর আগে সাবালক ছিল না। তবে, অনেকটাই ঢাক গুরগুর ব্যাপার। প্রকাশ্যে যৌনতার সচেতনতা নিয়ে সেভাবে কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। বা শহরে শহরে পোস্টার, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখা যায়নি। সময়টা ২০০৫-০৬। ‘বুলাদি’ যাঁর কোনও পদবী নেই, ছোটখাট মানুষি কাঠপুতুল, পরনে কাপড়, কপালে বড় টিপ, টেলিভিশন বা ফোনে এইডস নিয়ে খুল্লামখুল্লা পরামর্শ দিতেন। কন্ডোম ব্যবহারে দিতেন জোর। টেলিভিশনে এভাবে হয়তো কন্ডোম-শিক্ষা বাঙালি এর আগে কখনও পায়নি।
জন্ম নিয়ন্ত্রণে মালা ডি-র বিজ্ঞাপন দেখেছে। কিন্তু চকোলেট-ভ্যানিলা-পাইন অ্যাপেল স্বাদের যৌন-উদ্বেলিত দেশি-বিদেশি কন্ডোমের বিজ্ঞাপনের চল গত এক দশক আগে সেভাবে দেখেনি বাঙালি। আলোচনা তো দূর কন্ডোমের ব্যবহার একটা শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, এমনটা নয় সরকারের তরফ থেকে কন্ডোম দেওয়া হত না। পঞ্চায়েতের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি থেকে কন্ডোম দেওয়া হত। অনেকক্ষেত্রে নিম্নমানের কন্ডোম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠত। তবে, কন্ডোম ব্যবহারকে ট্যাবু হিসাবে দেখত সমাজ। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায়। তার চেয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি বা পিল মহিলাদের মধ্যে বিতরণ সেভাবে ছুৎমার্গ ছিল না।
১৯৬৩ সালে ভারতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কন্ডোম। তবে, নিরোধ নামে পরিচিতি পায় বেশি। কংগ্রেস জমানায় জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারের মাধ্যমে এই কন্ডোম দেওয়া হত। ১৯৬৮ সালের আগে পর্যন্ত অধিকাংশ কন্ডোম আসত জাপান এবং আমেরিকা থেকে। ১৯৬৯ সালে প্রথম সরকার পোষিত সংস্থা হিন্দুস্তান ল্যাটেক্স লিমিটেড কন্ডোম তৈরি করে। যৌনকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হত কন্ডোম। জন্ম নিয়ন্ত্রণ থেকে এইচআইভি রুখতে কন্ডোমের ব্যবহারে বেশি জোর দেওয়া হত।
ভারতে কন্ডোম আসতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই। সেনাবাহিনীতে সবথেকে বেশি কন্ডোম ব্যবহারের চল ছিল। সে সময় যে বাঙালিরাও কন্ডোম ব্যবহার করত না এমনটা নয়। খবরের কাগজে খুব ছোট করে বেরত কন্ডোমের বিজ্ঞাপন। তবে, কন্ডোম শব্দটি লেখা থাকত বলে মনে হয় না। ১৯৩৭ সালে যুগান্তর পত্রিকায় দু’য়ের পাতায় ছোট্ট বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যেখানে লেখা রয়েছে “জন্মনিরোধ ইচ্ছানুযায়ী করিতে হইলে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানসম্মত রবারের যন্ত্রাদি ও ঔষধের বাঙ্গালা ক্যাটালগ নিন। ফ্রেঞ্চ ক্যাপ রেজিনা ১||০ ডজন। ভট্টাচার্য এন্ড কোং, ২৯/১, তেলিপাড়া লেন, কলকাতা।”
এর থেকেই বোঝা যায় বাঙালিদের একটা শ্রেণি কন্ডোম ব্যবহার করতেন। তবে, প্রচলন খুবই কম ছিল। একান্নবর্তী পরিবারে এক একজন দম্পতির কম করে দশ-বারোটি সন্তান অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপারই ছিল সে সময়। আর এখন ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। কন্ডোম আসায় আরও মাইক্রো হতে শুরু করেছে বাঙালির জীবন।