Buddhadeb Bhattachaerjee’s Flat: নীল রঙা রেডিয়ো, হাজারও বই, চে-রবি-মৃণালের ছবি, ওষুধের কৌটো! বুদ্ধহীন পাম অ্যাভিনিউর অন্দরমহল দেখুন
Buddhadeb Bhattachaerjee: ঘরের মেইন দরজা দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে ছোট্ট একটা ড্রয়িং রুম। তারপর পাশাপাশি দুটো ঘর। তার মধ্যে একটি ঘরে বুদ্ধবাবুর যাবতীয় সরঞ্জাম। দেওয়াল জুড়ে চে-র ছবি। ১৯৬২ সালের ক্যাবিনটের ছবি। ওই ঘরের কোণায় নীল রঙা বেড।
কলকাতা: পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরা ফ্ল্যাট। রোদ সে অর্থে ঢোকার উপায় নেই সেই ফ্ল্যাটে। দরজা জানালা বন্ধই থাকত দিনের বেশিরভাগ সময়ে। সেই ফ্ল্যাটের দশ বাই দশ ঘরে থাকতেন বুদ্ধবাবু। পাম অ্যাভিনিউ থেকে রাইটার্স, বিধানসভা আবার ব্যাক টু পাম অ্যাভিনিউয়ের এই ঘর। এই ঘর থেকে কখনই বেরোতে চাননি বুদ্ধবাবু। অসুস্থতা, চরম জটিলতা, এসবের মধ্যেও বারবার হাসপাতাল থেকে ফেরত চলে আসতে চেয়েছিলেন তাঁর সাধের ঘরে। আসলে যে সে ঘরের পরতে পরতে জড়িয়ে নস্ট্যালজিয়া! বুদ্ধবাবু যে আজকের জেনারেশনের জন্যও একজন ‘আইকন’, তা বোঝা যায়, বৃহস্পতিবার যখন তাঁর মরদেহ পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে শেষবারের মতো বেরিয়ে পৌঁছয় পিস ওয়ার্ল্ডে। রাস্তার ধারে অগণিত জনতার ভিড়। আর সেই ভিড়ে মিশে স্কুলপড়ুয়া, কলেজছাত্ররাও। পাম অ্যাভিনিউয়ের এই ছোট্ট ঘর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।
ঘরের মেইন দরজা দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে ছোট্ট একটা ড্রয়িং রুম। তারপর পাশাপাশি দুটো ঘর। তার মধ্যে একটি ঘরে বুদ্ধবাবুর যাবতীয় সরঞ্জাম। দেওয়াল জুড়ে চে-র ছবি। ১৯৬২ সালের ক্যাবিনটের ছবি। সঙ্গে নিজের মায়ের ছবিও।
ওই ঘরের কোণায় নীল রঙা বেড। সেই বেডের পাশেই অক্সিজেন সিলিন্ডার। আর সামনে রাখা একটি রেডিও। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে ভীষণ ভালবাসতেন তিনি। শেষের চারদিন শরীরটা ভীষণ খারাপ হয়। তার আগে পর্যন্তও গান শুনেছেন তিনি। খাটের পাশে একটা ছোট্ট কাঠের র্যাক। সেখানে সন্তানকোলে বুদ্ধবাবুর ছবি। সুচেতন তখন অনেক ছোট। মীরা ভট্টাচার্যের অল্প বয়সের ফ্রেম করা ছবি পাশে। সে ছবি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হলদেটে হয়েছে।
সামনে সারি দিয়ে রাখা প্রচুর ওষুধের কৌটো। দিনে প্রচুর ওষুধ খেতে হত বুদ্ধবাবুকে। পাশে দেওয়াল জুড়ে কাঠের আলমারি। ঠাসা বইয়ের ভিড়। আলমারির হ্যান্ডেলে ঝুলছে বেসরকারি হাসপাতালের প্লাস্টিক, তাতে গুচ্ছ গুচ্ছ এক্স-রে, রিপোর্ট।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওষুধের পাতার স্ট্রিপ। প্রেশার মাপার যন্ত্র, সুগার মাপার যন্ত্র সব রাখা হাতের কাছে। এসবের মাঝে বেডের ওপর কবি গুরুর ছবি টাঙানো দেওয়ালে।
একটা ঘরের তিনটে দেওয়াল জুড়েই বইয়ের আলমারি। বাংলা-ইংরাজিতে বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে ঠাসা। অনেকগুলো বছর ধরেই নিজেকে ঘরে গুটিয়ে নিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। কিছুটা শারীরিক অসুস্থতার কারণেই। সারাটা দিন বই পড়তেন। তবে শেষের কয়েকটা বছরে তাঁর চোখেরও সমস্যা হয় মারাত্মক। তাঁকে বই পড়িয়ে শোনাতে হয়। আর সেটা বেশিরভাগ সময়েই করতেন তাঁর সঙ্গী স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। বাড়িতে দেখা করতে আসা পার্টিকর্মীরাও তাঁকে বই পড়িয়ে শোনাতেন।
ছোট্ট ফ্ল্যাটের টেবিলে রাখা মুড়ির কৌটো, বিস্কুটের কৌটো। আর পাঁচ নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ পরিবারের থেকে বিন্দুমাত্র আলাদা করা যাবে না বুদ্ধবাবুর ডাইনিং-ড্রয়িং রুম। বাড়ির দেওয়াল জুড়ে হাজারও স্মৃতি।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ সেই ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মরদেহ বেরল শেষ বারের মতো। পিছু পিছু বেরিয়ে এলেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। হাত জোড় করে প্রণাম করলেন স্বামীকে। স্লোগান উঠল। উপস্থিত জনতা সুর চড়ালেন ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’।