Cyclone Sitrang: পশ্চিমী অক্ষরেখার হ্যাঁচকা টানে ঘূর্ণিঝড় যাবে বাংলাদেশে? দুর্যোগ শুধু উপকূলে?

Cyclone Sitrang: শুধু এ বারই নয়, জলবায়ুগত ভাবেই দেখা গিয়েছে, একবার পশ্চিমী বায়ুপ্রবাহের পাল্লায় পড়ে গেলে ঘূর্ণিঝড়ের উত্তর-পূর্ব অভিমুখে অভিমুখে যাওয়ার ঝোঁক বেড়ে যায়। সেই কারণেই বাংলার চেয়ে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার প্রবণতাও বেশি।

Cyclone Sitrang: পশ্চিমী অক্ষরেখার হ্যাঁচকা টানে ঘূর্ণিঝড় যাবে বাংলাদেশে? দুর্যোগ শুধু উপকূলে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 21, 2022 | 5:39 PM

কমলেশ চৌধুরী

কলকাতা: বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় (Cyclone Sitrang) সৃষ্টি হতে চলেছে ঠিক কালীপুজোর (Kalipuja 2022) দিন। পরে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়েও পরিণত হতে পারে। কালীপুজোর পর দিন ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) চলে আসবে বাংলা-বাংলাদেশ উপকূলের কাছে। প্রতিটি পূর্বাভাস নিয়েই মোটামুটি নিশ্চিত আবহাওয়া দফতর (Weather Office)। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে কোথায়? বাংলায় না বাংলাদেশে? পুরোপুরি উত্তর না মিললেও ইঙ্গিত দিচ্ছেন আবহবিদরা। এবং যা ইঙ্গিত, তাতে বাংলার জন্য কিছুটা হলেও সুখবর। আর কপাল পুড়তে চলেছে বাংলাদেশের। সোজা কথায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আছড়ে পড়তে পারে পড়শি দেশেই। 

ঘূর্ণিঝড়কে দূরে সরিয়ে বঙ্গ-বন্ধু হয়ে উঠছে কে?

উত্তর খুঁজতে নজর রাখতে হবে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে। সাগরে গভীর নিম্নচাপই হোক বা ঘূর্ণিঝড়, তার টিকি বাঁধা থাকে ‘উপরমহল’-এর হাতেই। অর্থাৎ, কোন পথে যাবে, সেটা ঠিক করে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের বায়ুপ্রবাহ। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হওয়ার নয়। হচ্ছেও না। রবিবারের মধ্যে নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। দুপুর পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম অভিমুখেই এগোবে। সেই পথে সোজা এগিয়ে গেলে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে পৌঁছত। কিন্তু তা হবে না। অন্ধ্র লাগোয়া পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ডান হাতি অর্থাৎ, উত্তর-উত্তরপূর্ব অভিমুখে বাঁক নেবে নিম্নচাপ। শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারায় এগিয়ে যাবে বাংলা-বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। তবে চূড়ান্ত গন্তব্য বাংলাদেশের সুন্দরবন হওয়ারই জোর সম্ভাবনা। 

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘প্রথমে একটি উচ্চচাপ বলয় ঘূর্ণিঝড়কে উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই উচ্চচাপের ঘেরাটোপ থেকে বেরোলেই পশ্চিমী অক্ষরেখা ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবে। ফলে সমুদ্রেই বাঁক নিয়ে ঘূর্ণিঝড় এগোবে বাংলা-বাংলাদেশের দিকে। বাঁক আগে নিয়ে ফেললে বাংলার বদলে বাংলাদেশের দিকেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে। শনিবার ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে।’ অর্থাৎ, বঙ্গ-বন্ধু আর কেউ না, পশ্চিমী অক্ষরেখা আর তার মোক্ষম হ্যাঁচকা টান।

শুধু এ বারই নয়, জলবায়ুগত ভাবেই দেখা গিয়েছে, একবার পশ্চিমী বায়ুপ্রবাহের পাল্লায় পড়ে গেলে ঘূর্ণিঝড়ের উত্তর-পূর্ব অভিমুখে অভিমুখে যাওয়ার ঝোঁক বেড়ে যায়। সেই কারণেই বাংলার চেয়ে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার প্রবণতাও বেশি। দুই বাংলার উপকূলের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য তো আছেই। বাংলায় উপকূল দিঘা থেকে সুন্দরবন, বড়জোর দেড়শো কিলোমিটার। বাংলাদেশে সুন্দরবন থেকে টেকনাফ, অন্তত চারশো কিলোমিটার লম্বা উপকূল। অর্থাৎ, সদর দরজা বড়। তথ্য বলছে, ১৩২ বছরে অক্টোবর মাসে বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আছড়ে পড়েছে ২৫টি ঘূর্ণিঝড়। বাংলায় মাত্র ৮টি। শেষটি আছড়ে পড়েছিল ২২ বছর আগে। সেটিও সুন্দরবন ছুঁয়ে সরে যায় বাংলাদেশের দিকেই। ওড়িশায় আছড়ে পড়েছে ২৩টি ঘূর্ণিঝড়, যার মধ্যে একটি ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোন। তবে এই তালিকায় সবার উপরে অন্ধ্রপ্রদেশ (৩৫টি)।

এক্ষেত্রে গন্তব্য অন্ধ্রপ্রদেশ বা ওড়িশা হল না কেন? 

পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এখনও দেশের সব জায়গা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়নি। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতে ফিরতি বর্ষাও শুরু হয়নি। সেটা শুরু হয়ে গেলে অভিমুখ অন্যরকম হতে পারত।’ পার্থবাবু বলছেন, ‘এই ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাংলা অনেকটাই রেহাই পাবে। পশ্চিমী অক্ষরেখা বেশ শক্তিশালী। সেই ঘূর্ণিঝড়কে টেনে বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবে।’

ঝড়ের গতিবেগ নিয়ে কী বলছে হাওয়া অফিস ?

তবে যেহেতু তীব্র ঘূর্ণিঝড় রূপে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে, বাংলাদেশে গেলেও তার প্রভাব পড়বে এপার বাংলার উপকূলে। বিশেষ করে সুন্দরবনে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর, এই ৩ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা থাকছে। সোমবার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ কিলোমিটার বেগে, মঙ্গলবার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ৩ জেলার উপকূলে। বিশেষ চিন্তা অমাবস্যার কটাল। ভরা কটালের সময় ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছে থাকলে সুন্দরবনের বাঁধ আবার ভাঙতে পারে। তবে কলকাতা সহ বাকি দক্ষিণবঙ্গে আকাশ মেঘলা থাকবে, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। বইতে পারে দমকা বাতাস। অর্থাৎ, বাংলাজুড়ে পুজো মাটি হবে, এরকম আশঙ্কা একেবারেই নেই। তবে উদ্বেগে রাখবে উপকূল। তাই প্রস্তুতিতে ঢিলে দেওয়ারও উপায় নেই।