AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Elephant Psychology : মৃত সন্তানের সামনে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে মা-হাতি, কারণ কী?

Elephant Psychology : সম্প্রতি ডুয়ার্সের রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে হস্তিশাবকের মৃত্যুতে মা-হাতির করুণ আকুতি বুঝিয়ে দিল- শুধুই মানুষের মধ্যেই মাতৃত্ব বাহিত হয় না, সব প্রাণীর কাছে সমানভাবে সেই মাতৃত্ব বিদ্যমান। ডুয়ার্সের এই ঘটনায় কিছু অবাক করা প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে যে, হাতির মধ্যে এমন কী কাজ করে, যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সন্তান-শোক পালনের ক্ষমতা পায়।

Elephant Psychology : মৃত সন্তানের সামনে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে মা-হাতি, কারণ কী?
ছবি সৌজন্যে : গুগল
| Updated on: Jun 07, 2022 | 3:17 PM
Share

মাতৃত্ব। শব্দটি ছোটো। তবে তার তাৎপর্য অত্যন্ত গহীন। তা যে কোনও প্রজাতির মাতৃত্ব হোক না কেন! সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে ভূমিষ্ঠ করা তারপর অক্লান্ত লালন-পালন। সব নিয়েই মাতৃত্ব। আর সেই সন্তানের যদি অকালে মৃত্যু হয়, তাহলে মায়ের উপর যে কী ঝড় বয়, সম্প্রতি ডুয়ার্সের রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে হস্তিশাবকের মৃত্যুতে মা-হাতির করুণ আকুতি বুঝিয়ে দিল- শুধুই মানুষের মধ্যেই মাতৃত্ব বাহিত হয় না, সব প্রাণীর কাছে সমানভাবে সেই মাতৃত্ব বিদ্যমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ বেশি তো কম নয়। যেমন হাতি।

ডুয়ার্সের রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে এক হস্তিশাবকের মৃত্যু হয়। ছবিতে ধরা পড়ে, সন্তান শোকে মা-হাতির চোখে জল। তাকে ছেড়ে যাওয়া তো দুরস্ত, শাবককে শুঁড়ে করে চা-বাগানের এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করতে শুরু করে মা-হাতি। সঙ্গে ছিল আরও ২৫ থেকে ৩০ টি হাতি। একদিন, দু’দিন পেরিয়ে যায়। মৃত হস্তিশাবকের দেহে পচন শুরু হয়। তখনও তাকে কাছ ছাড়া করার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি হাতির দলের। টানা চারদিন রোদ-জল মাথায় করে দাঁড়িয়েছিল হাতির দল। চারদিনের পর মৃত হাতির শাবকের দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। ডুয়ার্সের এই ঘটনায় কিছু অবাক করা প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। সন্তানের মৃত্যু হয় তো সব প্রজাতির মধ্যেই। কিন্তু হাতির মধ্যে এমন কী কাজ করে, যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সন্তান-শোক পালনের ক্ষমতা পায়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য হাতিরাও সেই শোক মিছিলে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। গোষ্ঠীর মধ্যে কী এমন বোঝাপড়া থাকলে এই অভূতপূর্ব মুহূর্ত তৈরি হয়? এ বিষয়ে জুওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী তথা হস্তি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শান্তনু ঘোষ জানাচ্ছেন,’এমনিতে হাতির মনস্তত্ত্ব ও মানুষের মনস্তত্ত্বের মধ্যে অনেকটা মিল রয়েছে। হাতিরাও মমতাময়ী। তারা দলগতভাবে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের এই আবেদন মানুষকেও হার মানায়।’

ডুয়ার্সের এই ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শান্তনুবাবু বলেন,’এর দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, এই হস্তিশাবকটি মায়ের প্রথম সন্তান হতে পারে। যদিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রথম সন্তান হারানোর ক্ষেত্রে মা হাতিদের যন্ত্রণা অনেক বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, হাতিদের গর্ভকাল অনেক বেশি। পুরুষ হাতির জন্ম হলে তার ক্ষেত্রে গর্ভকাল ২০ থেকে ২২ মাস এবং স্ত্রী হাতির ক্ষেত্রে তা ১৮ থেকে ২০ মাস হয়। ফলে হাতির ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি বাচ্চা হতে সময় লাগতে পারে ৩.৫ থেকে ৪ বছর। সেই কারণেই সম্ভবত এই হাতিটি এতটা মমতাময়ী হয়ে নিজের বাচ্চাকে কাছছাড়া করতে চাইছিল না।’ শান্তনুবাবুর কথায়, “হাতিরা খুব দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে এক হাতি তার নিজের মায়ের দুধ না খেয়ে সেই দলের অন্য কোনও মা হাতির দুধ খেয়েও আসে, এরকম ঘটনাও দেখা গিয়েছে। হাতিদের ক্ষেত্রে মা ও সন্তানের বাঁধনও অনেকটা বেশি থাকে।” তবে এরকম ঘটনা নতুন নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। গোয়ালতোড়ের একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে শান্তনুবাবু জানান, সেখানেও একটি হস্তিশাবক রাতের অন্ধকারে ক্ষেতের মধ্যে একটি জলাধারে পড়ে যায়। ঠায় দাঁড়িয়েছিল তার মা হাতি। বনকর্মীরা কোনওভাবে উদ্ধার করতে পারছিলেন না সেই হস্তিশাবককে।

তবে জলপাইগুড়ির এক পরিবেশবিদ সায়ন মণ্ডলের কথায়, ‘হাতিরা অবশ্যই খুব দলবদ্ধ জীব। তাদের মধ্যে মমতা, সম্পর্কের বাঁধন অনেক বেশি। তবে সম্পূর্ণ এক ধরনের বিপরীত ছবিও দেখা গিয়েছে। দলের স্বার্থে সন্তানকে ত্যাগ করতে দেখা গিয়েছে মা হাতিকে।’ তাঁর কথায়, ‘যদি কোনও মা হাতি বুঝতে পারে তার সন্তানের কঠিন অসুখ হয়েছে, বেশিদিন বাঁচবে না ও হাঁটতে চলতেও অক্ষম হয়ে পড়ছে। তখন দলের স্বার্থে সেই হাতিকে পরিত্যাগ করতে দেখা গিয়েছে।’

এদিকে হাতির যে মানবিক আবেদনের ছবি ডুয়ার্সের জঙ্গলে ধরা পড়েছে সেখানে কিন্তু মানুষের প্রসঙ্গ বারবার উঠেই আসছে। ‘মানবিক আবেদন’। কথাটাতেই মানুষ জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মনস্তত্ত্ব কোথায় দাঁড়িয়ে! এই বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্ত কুমার রায় বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যেও এরকম আচরণ আগেও দেখা গিয়েছে। এখনও দেখা যায়।’ কিন্তু কিছুটা হলেও মানবিক আবেদনের অবক্ষয় হয়েছে কি! এই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘গ্লোবালাইজেশন এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর। এর কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। মানুষ নিজের জন্যও সেই অর্থে সময় বের করতে পারছেন না। সমাজে ধীরে ধীরে জটিলতা বাড়ছে।’ তাঁর কথায়, ‘সমাজে জটিলতা যত বাড়ছে মানুষ মানবিকতার সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে।’