শহরে বিষ-জলপানে মৃত্যু? ভোটের আগে কার স্বার্থে এমন প্রচার, অভিযোগ উড়িয়ে তোপ ফিরহাদের

জলে বিষক্রিয়ায় শহরে একের পর এক মৃত্যু? অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী বললেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)

শহরে বিষ-জলপানে মৃত্যু? ভোটের আগে কার স্বার্থে এমন প্রচার, অভিযোগ উড়িয়ে তোপ ফিরহাদের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 17, 2021 | 5:33 PM

কলকাতা: “কলকাতায় যতজনের মৃত্যু হচ্ছে সবই কি জলপান করে? ইচ্ছে করে কনফিউশন (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি করা হচ্ছে। রেনাল ফেলিওরের মৃত্যুতেও হুজুগ তৈরি হচ্ছে।” এভাবেই শহরে বিষ জলপান করে মৃত্যু ও অসুস্থতার বিষয়টি কার্যত উড়িয়ে দিলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।

সোমবারের পর ফের ভবানীপুর বিধানসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে মঙ্গলবারে এক শিশু মৃত্যুতেও শহরে জলে বিষক্রিয়ার দিকে আঙুল উঠেছে। পাঁচ বছরের শিশুটির ডায়েরিয়া হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল। পরিবারের দাবি, দূষিত জল খেয়েই অসুস্থ হয় পরিবারের সদস্যরা। মৃত শিশুর নাম আয়ুষী কুমারী। এলাকার অনেকেই গত কয়েক দিন ধরে পেটের সমস্যায় ভুগছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই দাবি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ।

পরপর মৃত্যু

পাশাপাশি দুটি ওয়ার্ডে মোট তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজনের মৃত্যু হয়। পাশের ওয়ার্ড ৭৪ নম্বরে জেলের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয় সোমবারই। প্রত্যেকেরই দূষিত জল খেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে আরও মর্মান্তিক ঘটনা ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে। মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।

কী বলছেন এলাকার মানুষ?

ঘটনার সূত্রপাত শিবরাত্রির দিন থেকেই। এলাকার মানুষের দাবি, শিবরাত্রির দিন ভোগ রান্না হয়েছিল ওই জলে। এর পরের দিন সকালেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা বমি ও পেট খারাপে ভুগছেন এলাকার অনেকে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাত জন। এ ছাড়াও অনেকেই বাড়িতে রয়েছেন এই অবস্থায়। বিশেষ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে শিশুদের নিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, জল পরিষ্কার করা হোক। ৮০ টাকা দিয়ে জল কিনে খাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। জল থেকে গন্ধ বোরচ্ছে বলেও অভিযোগ।

কী বলছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা?

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন পোদ্দার বলেন, বিষাক্ত জলে থাকতে পারে কোনও রাসায়নিক। জল থেকে ইনফেকশন ছড়িয়েও মৃত্যু হতে পারে। অনেক সময় ডায়েরিয়া এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যাতে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। এই পরিস্থিতি থেকে আপাতত মুক্তি পেতে জল ফুটিয়ে খেতে হবে। স্নানের জল যাতে পেটে না যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, জল দূষিত হল কোথা থেকে তার সূত্র খুঁজে বের করতে হবে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা করতে হবে। ওআরএস মিশিয়ে জল খেতে হবে। নির্দিষ্ট চিকিৎসা করাতে হবে বলেও জানান তিনি।

৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী জনপ্রতিনিধি রতন মালাকার

মঙ্গলবার এলাকায় যান রতন মালাকার। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার থেকে জলের দূষণ হয়েছে। ডিএল খান রোডের ২৪ ইঞ্চি পাইপ থেকে জল আসছিল। শনিবার তা খুঁজে বের করে বন্ধ করা হয়। তাঁর দাবি, শনিবারের পর থেকে আর গন্ধ জল আসেনি।

ফিরহাদের মন্তব্য:

“কলকাতায় যতজনের মৃত্যু হচ্ছে সবই কি জলপান করে? ইচ্ছে করে কনফিউশন (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি করা হচ্ছে। রেনাল ফেলিওরের মৃত্যুতেও হুজুগ তৈরি হচ্ছে।” এভাবেই শহরে বিষ জলপানে মৃত্যুর কথা উড়িয়ে দিলেন ফিরহাদ। তাঁর দাবি, কিছু পাইপলাইনে সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা সমাধানও করা হচ্ছে। পাশাপাশি জলের গুণমান যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু জলপান করে মৃত্য়ুর খবর সর্বাংশে অস্বীকার করে ফিরহাদের তোপ, ভোটের আগে এই বিভ্রান্তি কার স্বার্থে ছড়ানো হচ্ছে? তিনি যোগ করেন, খারাপ জলপানে আন্ত্রিকের মতো অসুখ হলেও হতে পারে। কিন্তু লিভারের অসুখে মৃত্যুর ঘটার মতো বিষাক্ত পানীয় জল কলকাতায় সরবরাহ হয় না বলেই দাবি করেছেন শহরের পুর প্রশাসক।