এক্সক্লুসিভ: ‘বুঝেছিলাম, বামশূন্য হতে চলেছে বাংলার বিধানসভা,’ অকপট সুশান্ত ঘোষ
Sushanta Ghosh: আমি যাই হই, চলে যাওয়ার এক দশক পরেও লালঝাণ্ডা হাতে কেন হাজার হাজার মানুষ সুশান্ত ঘোষের জন্য হাজির হয়, ভয় থেকে নাকি ভালবাসা থেকে?
কলকাতা: তাঁর নামে একসময় নাকি বাঘে গরু একঘাটে জল খেত। ২০১১ সালে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে নাম জড়ায় সুশান্ত ঘোষের। সেই মামলায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছেন গড়বেতা বিধানসভার ছ’বারের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের আগে ওই মামলা থেকে জামিন পেয়ে নিজের জেলায় ফেরার অনুমতি পান সুশান্ত। ভোটে লড়ার টিকিটও পেয়েছিলেন। রাজ্য জুড়ে বামের ভরাডুবির মধ্য তিনিও অন্যথা হননি। সেইই সুশান্ত ঘোষ খোলামেলা সাক্ষাৎকারে জানালেন, আগেই বুঝেছিলেন যে, এবার বামশূন্য হতে চলেছে বাংলার বিধানসভা। ঠোঁটকাটা সুশান্ত ঘোষ এও জানালেন, তিনি দলের অনেকের কাছে অপছন্দের। হয়ত সেটা গ্রামের ছেলে বলে!
সত্যিই কি তাঁর নামে বাঘে গরু একঘাটে জল খেত? ‘কথাবার্তা’-র সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন সুশান্ত ঘোষ। তার পর বললেন, ‘তখনও নেতা ছিলাম না, এখনও নেতা হওয়ার বাসনা নেই। আমি একজন সাধারণ বামপন্থী কর্মী মাত্র।’ তাঁর সম্পর্কে যেসব প্রচার বেশি হয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই ‘মিথ’ বলে দাবি করলেন তিনি। তিনি আসল মানুষটা ‘অন্যরকম’ বললেন নিজেই। তাঁর কথায়, ‘রক্তমাংসের মানুষ তো। ব্যথা দিলে ব্যথা তো লাগবে। তবে অনেক ব্যথা হজম করতে হয়।’
সুশান্ত ঘোষ মানেই কেশপুর কাণ্ড, ছোট আঙারিয়া বা তপন-সুকুরের মতো নেতা। শুনলে কেমন লাগে? তাঁর উত্তর, ‘এঁদের একজন স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক। আরেকজন সাধারণ পরিবারের ছেলে। কিন্তু মিডিয়া এমন ভাবে প্রচার করে এঁরা বোধহয় সাঙ্ঘাতিক কিছু।’ যা আদৌ সত্যি নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের আগে আগে সুশান্ত জেলায় ফিরছেন এই খবর পেয়েই গড়বেতা এলাকায় দলীয় পতাকা লাগাতে শুরু করেছিল সিপিএম। তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। আর তারপরেই ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমকে সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। পার্টি অফিসে বসছেন। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, শুনছেন তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা। প্রতিদিন নিয়ম করে জনসংযোগ করছেন প্রায় ১০ বছর পর নিজের জেলায় ফেরা সুশান্ত ঘোষ। তাঁর কথায়,’পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এমন নজির আছে?”
সুশান্ত আরও যোগ করেন, ‘আমি শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যাই। জেলখানাতেও সমস্যা হয়নি, বাড়িতেও না।’ তিনি আরও যোগ করেন, “আমি যাই হই, চলে যাওয়ার এক দশক পরেও লালঝাণ্ডা হাতে কেন হাজার হাজার মানুষ সুশান্ত ঘোষের জন্য হাজির হয়, ভয় থেকে নাকি ভালবাসা থেকে?” বলেন, ‘২০০১ সালে ঠিক হয়ে যায় যে ক্ষমতার পালাবদল হলে সুশান্ত ঘোষকে জেলে যেতে হবেই।’ বামপন্থীদের নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা দিতেই এই প্রচার করা হত। তার জন্য তাঁকে ‘১১ সালে জেলে যেতে হয় দাবি তাঁর।
কিন্তু ভোটের প্রচারে গিয়ে তিনিই বলেছেন ‘তৃণমূলকে প্রেম না, প্যাঁদানি দিন।’ ২০২১-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে সুশান্ত ঘোষের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীদের মনোবল বলে কিছু নেই। তাই নির্বাচনের প্রাক্কালে এরকম কথা বলতে হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, ”আমরা কোথাও ছিলাম না। কর্মীরা আড়ষ্ট। আমি তো জেলাতেই ঢুকতে পারিনি।” রাজ্যের শাসক দলের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেক বাম বিজেপিতে আশ্রয় নেন বলে দাবি প্রাক্তন মন্ত্রীৎরাজ্যের শাসকদলের থেকে বাঁচার জন্য ২০১৬-এর নির্বাচনের পর বহু বামপন্থীরা বিজেপি-তে আশ্রয় নেয়। আর এবারে বিধানসভা যে বামশূন্য হবে তা নাকি আন্দাজ করে ফেলেছিলেন তিনি।
সুশান্ত আক্ষেপ করে বলেন, “আগেও আমার কথা কেউ শোনেনি। সংসার হাল ধরার ক্ষেত্রে যদি যোগ্য গৃহকর্তা হয় তাহলে সুখ-দুঃখের মধ্যে এগিয়ে যায়। সর্বনাশ হতে যাচ্ছে, আমি এমন ব্যাখ্যা করে বলেছিলাম দলের এক শীর্ষ নেতাকে। তা ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরেই টের পাওয়া গিয়েছিল।”
তাহলে সুশান্ত ঘোষ পার্টির কাছে কি ব্রাত্য? কেনই বা বঞ্চনার শিকার? সুশান্ত ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “হয়ত আমি পছন্দের নয়। আমি গ্রামের ছেলে। হায়ার সেকেন্ডারির পর লাঙল ধরেছি। দল করেছি। এই দল থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং সরিয়ে নেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হয়। কিন্তু আদর্শের জন্য সব ত্যাগ করা যায়। যাকে আদর্শগত অপছন্দ করি কিছু পাওয়ার জন্য সেখানে যাব, এই বিচ্যুতি যেন আমার না আসে।”
একইসঙ্গে তাঁর সংযুক্তি, “এখনও আমি বিশ্বাস করি, সারা পৃথিবীতে যত আদর্শ আছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বামপন্থা। এর কোনও বিকল্প নেই। তবে তার জন্য দরকার যোগ্য নেতৃত্বের।” আরও পড়ুন: মমতার ‘চ্যালেঞ্জার’ চয়নে বৈঠকে বিজেপি, ক্ষোভ বাড়ছে কমিশনের সিদ্ধান্তে