SFI: বক্সে গান বাজিয়ে তুমুল নাচ এসএফআইয়ের, করোনা বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উদযাপন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
Covid19: যদিও এসএফআই এর মধ্যে কোনও অন্যায় খুঁজে পায়নি। তারা মনে করছে যা হয়েছে, তাতে কোনও বিপদ হওয়ার ঝুঁকিই নেই।
কলকাতা: বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বই-বাজারের আয়োজন করেছে, করেছে কনসার্ট। করোনা বিধিকে শিকেয় তুলে সেই অনুষ্ঠানেই জমায়েত, হইহুল্লোড় বাদ গেল না কিছু। শুক্রবার সেখানে দেখা গেল মাস্কহীন অরক্ষিত ‘বইপ্রেমী’দের সে কী উল্লাস!
করোনার ভয়কে সরিয়ে সবেমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলেছে। এখনও পরীক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইনেই ভরসা রাখছে প্রতিষ্ঠানগুলি। কোপ পড়ছে সেমেস্টারেও। অথচ বলিউডের ছবি ‘রকস্টার’-এর গান বাজিয়ে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তুমুল উচ্ছ্বাসে মাততে দেখা গেল পড়ুয়াদের। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষও খুব একটা সরব নয়। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে অধ্যাপকদের একাংশের প্রতিক্রিয়া, ‘এমনটা না হলেই ভাল হোত’। অন্যদিকে এসএফআই বলছে, এতদিন পর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। ‘এটুকুতে কী বা ক্ষতি!’
৬ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সপ্তাহ। তারই অংশ এই ‘বইবাজার’, ‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কনসার্ট’। বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠন এসএফআই এর আয়োজক। সেই বইবাজার, কনসার্টকে সামনে রেখেই শুক্রবার সন্ধ্যায় উদযাপনের ছবি ধরা পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড ভিউ চত্বরে। মিউজিক সিস্টেমে বাজছে ইরশাদ কামিলের লেখা গান। তার সঙ্গেই তালে তালে নাচছেন এসএফআইয়ের সদস্যরা। মুখে মাস্ক নেই। শারীরিক দূরত্ব মানার তো কোনও প্রশ্নই নেই!
এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য স্যমন্তক দাস বলেন, “এটা যদি হয়ে থাকে অত্যন্ত দুঃখজনক। করা উচিৎ হয়নি। এখান থেকে সংক্রমণ যদি ছড়ায় তা হলে আরও ক্ষতি হবে পঠনপাঠনের। আমরা কখনওই কঠিন পদক্ষেপের পক্ষে চলি না। আবেদন করে, অনুরোধ করে, সতর্ক করে চলার চেষ্টা করি। এখনও আমি যতগুলি অফলাইন ক্লাস নিয়েছি সকলেই মাস্কও পরে এসেছে। এমনিতেও ওরা মাস্ক পরে থাকে। তবে ক্যাম্পাসের মধ্যে, মাঠে অনেকেই বসে থাকে যাঁরা মাস্ক পরে নেই। এখন এরা তো সকলে অ্যাডাল্ট। নাবালক নাবালিকা তো কেউ নয়। তাদের মধ্যে যদিও সাবধানতা, সতর্কতা না থাকে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংগঠনের বিদ্যার্থী শাখার প্রতিনিধিদের তো আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া দরকার।”
সহ-উপাচার্যের সঙ্গেই সহমত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসও। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “যে কোনও প্রতিষ্ঠান যখন লকডাউন পর্ব পার করে তালা খোলার পথে এগোচ্ছে সতর্ক থেকে এই পরিস্থিতিতে এগোনোই একমাত্র কাজ। একটা প্রাতিষ্ঠানিক জীবনেও তেমনটাই হওয়া দরকার। আমরা এখন অনলাইন অফলাইন মিলিয়ে মিশিয়ে শিক্ষাজগতে এগোচ্ছি। অতিমারির আগে যেভাবে দিন কাটত, এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যক্তি জীবনে যদি আমরা সতর্ক থাকার কথা বলি, সেই সতর্কতা কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন। আমাদের সামাজিক জীবনেও মার্জিত যাপনচিত্র দরকার। এখনও আমরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিনি। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আগে আমরা যা করেছি, তা এখনও করব, সে সময় আসেনি। এটা কাঙ্খিত নয়। আমরা শিক্ষক, ছাত্র সকলে সতর্ক থেকে এই বিপদকে টলাব এটাই তো আমাদের ব্রত হওয়া দরকার।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপিকা জানান “পরীক্ষা অনলাইন গোছা গোছা নম্বরের জন্য, সামনে আসলে তখন রোগ হয়ে যাবে। কই এই বেলা রোগ বাড়ছে না? এটা এসএফআই না আফসু সেটা বিষয় নয়। বিষয়টাই তো আপত্তির। পড়ুয়াদের অভ্যাস খারাপ হয়ে গিয়েছে তো। অনলাইনে পরীক্ষা কেন, তা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই তো ছেলে মেয়েদের।”
যদিও এসএফআই এর মধ্যে কোনও অন্যায় খুঁজে পায়নি। তারা মনে করছে যা হয়েছে, তাতে কোনও বিপদ হওয়ার ঝুঁকিই নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের গবেষক, এসএফআই-এর প্রতিনিধি সুলগ্না পুরকায়স্থের সাফ কথা, “দেড় বছর ধরে যখন লোকাল ট্রেন বন্ধ ছিল, কলেজ স্কুল বন্ধ ছিল সেই সময় তো বার নাইট ক্লাব খোলা ছিল। সেখানে তো লোকজন নাচানাচি করতে পেরেছে। আমার মনে হয় আর দু’বছর পর ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা যদি একটা বইমেলা করে নাচানাচি করে তাতে কিচ্ছু হবে না। করোনা একটুও বাড়বে না।” যদিও এমন দৃশ্যে কিছুটা চিন্তিত সেই সমস্ত মানুষ, করোনা যাঁদের ঘর থেকে প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়ে গিয়েছে! আর ফেরায়নি। কোনও দিনও ফেরাবেও না।