সিবিআই-এর এক্তিয়ার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের ‘আমরা-ওরা’, লালার নিরাপত্তার আবেদন খারিজ

নিজের মামলা নিয়ে চুপ লালা। আর তাঁর হয়ে সওয়াল করছে রাজ্য। মঙ্গলবার আদালতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে খোদ সিবিআইয়ের আইনজীবী এমন মন্তব্য করেছিলেন।

সিবিআই-এর এক্তিয়ার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের 'আমরা-ওরা', লালার নিরাপত্তার আবেদন খারিজ
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 10, 2021 | 8:07 PM

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে কয়লা পাচার (Coal Smuggling) কাণ্ডে সিবিআই-এর তদন্ত করার আদৌ এক্তিয়ার আছে কিনা তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শেষ হল বুধবার। বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এদিন জানিয়েছেন, দ্রুত রায় দেওয়ার চেষ্টা করবে আদালত। এই মামলায় মূল অভিযুক্ত লালা ওরফে অনুপ মাজির আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জন্য নিরাপত্তার আবেদন জানালে হাইকোর্ট (Calutta High Court) বুধবার তা খারিজ করে দেয়। এই তদন্ত করার এক্তিয়ার নিয়েই এদিন জোর সওয়াল-জবাব হয় আদালত কক্ষে।

মঙ্গলবার রাজ্যের অ্যাডভকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছিলেন, বিজ্ঞপ্তি ছাড়া রাজ্য বা ইসিএল-এর কোনও এলাকায় সিবিআই তদন্ত করতে পারবে না। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন বিচারপতি এজিকে প্রশ্ন করেন, রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যের জায়গায় তদন্ত করতে পারবে না রেল। যদি রেলে কোনও অপরাধ হয় আর অপরাধীরা রেলের এলাকার বাইরে পালিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রেলের সম্পত্তি বলে রাজ্য তদন্ত করবে না। আর রেলের এলাকার বাইরে বলে আরপিএফ তদন্ত করতে পারবে না। তা হলে কি অপরাধীরা বাইরে ঘুড়ে বেড়াবে?”

রাজ্যের কৌঁসুলি জবাবে বলেন, “কী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটা অনুমান করে তদন্ত করতে হবে।” পাল্টা বিচারপতি বলেন, “অনুমানের উপরে ভিত্তি করে শুধু তদন্ত হয় না। বহু জিনিস সংগ্রহ করতে হয় অপরাধ প্রমাণ করতে। তাই বহু জায়গায় তদন্ত করতে হয়।” এর পর সুর কিছুটা নরম করে রাজ্যের আইনজীবী জানান, “সিবিআইয়ের আইন অনুযায়ী, আদালত যদি অনুমতি দেয় তা হলে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই।”

এই প্রসঙ্গে লালার আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরার বক্তব্য, রেলের সম্পত্তি রাজ্যের জায়গা। কে তদন্ত করবে এই নিয়ে বিভ্রান্তির জায়গা হলে রাজ্য তদন্ত করবে। তারা ওয়ারেন্ট পর্যন্ত জারি করতে পারে। অপরাধ হলে ধামাচাপা দেওয়া হবে বলা হচ্ছে না। তবে রাজ্য তার তদন্ত করবে। ইসিএল-র মধ্যে রেলের ট্র‍্যাক থাকলে সেটা ইসিএলের, রেলের নয়।

আরও পড়ুন: লালা চুপ, রাজ্যের গরজ কেন বেশি! ডিভিশন বেঞ্চে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সলিসিটর জেনারেলের

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “কেন্দ্র-রাজ্যকে আলাদা করতে কেন্দ্রের জায়গা, রাজ্যের জায়গা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। একজন অপরাধী কি পারে এই সীমানা ব্যবহার করতে? তদন্ত যখন প্রাথমিক পর্যায়ে তখন অপরাধী কি পারে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে? রেলের এলাকা কোনও ভাবে নির্দিষ্ট নয়। ভৌগলিক এলাকা। রাজ্যের ভৌগলিক এলাকায় রেল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই মামলায় অন্য কোনও অপরাধী যদি আদালতে এসে বলে রাজ্যের উপর ভরসা নেই সিবিআই চাই, তখন কী হবে। এই অপরাধ ২০১৮ আগে থেকে চলছে।” তাই জেনারেল কনসেন্ট অর্থাৎ রাজ্যের সাধারণ সম্মতির প্রয়োজন নেই বলেই তিনি দাবি করেন।

এদিকে, নিজের মামলা নিয়ে চুপ লালা। আর তাঁর হয়ে সওয়াল করছে রাজ্য। মঙ্গলবার আদালতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে খোদ সিবিআই-এর আইনজীবী এমন মন্তব্য করেছিলেন। রাজ্যের বক্তব্য ছিল, আগে থেকে না জানিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তদন্ত চালাতে পারে না সিবিআই। তারপরই সিঙ্গল বেঞ্চ এক্তিয়ার বেঁধে দেয় সিবিআই-এর। সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় সিবিআই। সেই মামলায় আজ ফের শুনানি হয়। শুনানির সময় সিবিআই আদালতে খামবন্ধ স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয়। গত তিন মাসে তদন্তের অগ্রগতি কতটা হয়েছে তা উল্লেখ করা রয়েছে। আদালত যদিও তা গ্রহণ করেনি। সিবিআই-এর এক্তিয়ার সম্পর্কিত মামলায় এই রিপোর্টের প্রয়োজন নেই বলেই জানিয়েছে আদালত।