Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

EXPLAINED: কোথায় ‘হারিয়ে’ যাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? কেন কমছে সংখ্যা?

EXPLAINED: ২০১৭ সালের একটি নিয়ম। ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম। শুধু কি এগুলো এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ? কী বলছেন শিক্ষাবিদরা? কী যুক্তি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...

EXPLAINED: কোথায় 'হারিয়ে' যাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? কেন কমছে সংখ্যা?
কেন কমছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 03, 2025 | 10:17 PM

কলকাতা: রেগুলার ভিত্তিতে এবছরই উচ্চমাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা। ২০২৬ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিক হবে সেমেস্টার পদ্ধতিতে। সোমবার (৩ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে এবারের উচ্চমাধ্যমিক। চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চমকে দেওয়ার মতো। মাত্র ৫ লক্ষ ৯ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী এবার উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। এক বছর আগেই যে সংখ্যাটা ছিল ৭ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো। ফলে গতবারের থেকে এবার প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার কম পরীক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিকে এত কম পরীক্ষার্থী হওয়ার কারণ কী? বাংলায় কি পড়াশোনা করতে অনাগ্রহী পড়ুয়ারা? কী বলছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ? কী বলছেন শিক্ষাবিদরা?

উচ্চমাধ্যমিকে এবার কম পরীক্ষার্থী নিয়ে কী যুক্তি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের?

বাংলা বোর্ডে পড়ার আগ্রহ কমছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমের পিছনের ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা বলছেন। ২০২৩ সালে ৬ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক দিয়েছিল। ২০২২ সালের চেয়ে যা প্রায় ৪ লক্ষের মতো কম ছিল।

এই খবরটিও পড়ুন

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির বক্তব্য, ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছিল ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪২৮ জন। তার মধ্যে একাদশের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৫ লক্ষ ৫৪ হাজারের মতো পড়ুয়া। আর এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৫ লক্ষ ৯ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের চেয়ে ৪৫ হাজার কম পরীক্ষার্থী এবার উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৫.৩২ শতাংশ ছেলে এবং ৫৪.৬৮ শতাংশ মেয়ে। ছাত্রীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬৭১ জন বেশি।

উচ্চ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, একাদশে রেজিস্ট্রেশনের সময় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝে অনেকেই চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ে। স্কুলছুটও হয় অনেকে।

২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কম থাকার কারণ কী?

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা বোর্ডের এক আধিকারিক বলেন, ২০২৩ সালে মাধ্যমিকে কম পরীক্ষার্থী হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে যেমন করোনার জেরে স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া রয়েছে। আবার ২০১৭ সালের সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতেও ক্লাস ফাইভে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের কড়াকড়ি করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ বছরের একদিন কম হলেও ক্লাস ফাইভে পড়ুয়াকে ভর্তি করা যাবে না। ফলে আগে যেখানে কয়েকমাস কম হলেও ভর্তি হয়ে যেতে পারত পড়ুয়ারা। সেখানে বয়স কম হওয়ায় ক্লাস ফাইভে অনেকেই ভর্তি হতে পারেনি। সেটাও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

কী বলছে শিক্ষামহল?

২০১৭ সালের নিয়ম। ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম। শুধু কি এগুলোই এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ? প্রধান শিক্ষক সংগঠনের নেতা চন্দন মাইতি বলেন, “ক্রমাগত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বন্ধ। পড়ুয়ারা দেখতে পাচ্ছে, তাদের বাড়িতে দাদা-দিদিরা বসে রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ড্রপ আউট বাড়ছে। নাবালিকার বিয়ে বাড়ছে। নিয়োগ না হলে আগামিদিনে বহু স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতি বছরের দুর্গাপুজোর মতোই নিয়োগ করতে হবে। না হলে বেসরকারি স্কুলের রমরমা বাড়বে। সবুজসাথীর সাইকেল, কন্যাশ্রী, ট্যাব দিয়েও ছাত্রদের স্কুলমুখো করা যাবে না।”

তিনি একটি তথ্য তুলে ধরে দেখান, ২০২৩ সালের মাধ্যমিকে কম পরীক্ষার্থীর কথা বলা হলেও রেজিস্ট্রেশন করেও বহু পরীক্ষার্থী গত কয়েকবছরে উচ্চমাধ্যমিক দেয়নি।

  • ২০২০ সালে একাদশে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৮ লক্ষ ১০ হাজার ৬৯৭ পড়ুয়া। সেখানে ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেয় ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন করেও উচ্চমাধ্যমিক দেয়নি ৬৪ হাজার ৯৬৭ জন।
  • ২০২১ সালে একাদশে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৬২ পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করেছিল। সেখানে ২০২৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেয় ৮ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১২ জন। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন করেও উচ্চমাধ্যমিক দেয়নি ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৩৯ জন।
  • আর ২০২২ সালে একাদশে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৩৫ পড়ুয়া। সেখানে ২০২৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেয় ৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৪১ জন। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন করেও উচ্চমাধ্যমিক দেয়নি ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৯৪ জন।
  • সেখানে ২০২৩ সালে একাদশে রেজিস্ট্রেশন করা পড়ুয়ার সংখ্যার চেয়ে এবার ৪৫ হাজার ৩৮৮ জন কম পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছে।

তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই বলবেন, পলিটেকনিক করতে গিয়েছেন। বৃত্তিমূলক কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু, রেজিস্ট্রেশন করার পর কেউ বৃত্তিমূলক কোর্সে ভর্তি হন না। এগুলো একাদশে রেজিস্ট্রেশনের আগেই হয়ে যায়। হয়তো অল্প কিছু পড়ুয়া যান। কিন্তু, অনেকে তো আবার পরে একাদশে রেজিস্ট্রেশনও করেন। ক্রমাগত পড়ুয়া সংখ্যা যে কমছে, একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।” কেন পড়ুয়াদের স্কুলে ধরে রাখা যাচ্ছে না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানালেন তিনি।