সকলের সামনে দিয়েই আনেন রাকেশকে, কিন্তু দেখতে পারলেন না কেউই! বিশেষ কায়দা লালবাজারের গোয়েন্দাদের
মাদককাণ্ডে গ্রেফতার রাকেশ সিং (Rakesh Singh) এখন লালবাজারের (Lalbazaar) সেন্ট্রাল লক আপে। জেরায় কী কী তথ্য উঠে এল?
তবে রাকেশকে সাংবাদিকদের থেকে আড়াল করতে কার্যত নাটকীয়ভাবে লালবাজারে আনেন গোয়েন্দারা। লালবাজারের মেন গেটের থেকে কয়েক পা ভিতরে দুটো ট্রাভেলার দাঁড় করানো হয়। যাতে বাইরে থেকে ভিতরের জায়গা আড়াল হয়ে যায়। এরপর লালবাজারের আউট গেট দিয়ে রাকেশকে ভিতরে আনা হয়। এরপর দুটো ট্রাভেলারের মাঝখান দিয়ে আড়াল করে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
মঙ্গলবার রাত ৮ টা নাগাদ ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের খানো এলাকায় নাকা চেকিং চলছিল। রাকেশ সিং এর ফোন ট্র্যাক করে কলকাতা পুলিশ জানতে পারে জাতীয় সড়ক ধরে পূর্ব বর্ধমানের দিকে এগোচ্ছেন তিনি। বর্ধমান জেলা পুলিশের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে কলকাতা পুলিশ।
এরপরেই রাকেশকে ধরতে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং শুরু হয়। খানোতে রাকেশকে পাকড়াও করে গলসি থানার পুলিশ। আটক করা হয় রাকেশের গাড়ি চালক ও নিরাপত্তারক্ষীকে। তাঁর গাড়িটিও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ গলসি পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের ছয় সদস্যের একটি দল। রাকেশকে নিয়ে কলকাতায় আনা হয় লালবাজারে।
গ্রেফতার পর রাকেশ সিং বলেন, “এই ভাবে ফাঁসিয়ে, আমাকে ভিতরে ঢুকিয়ে তৃণমূল কখনই ক্ষমতায় আসবে না। আমার বাড়ির ভিতর পুলিশ ঢুকিয়ে, ছেলেদের গ্রেফতার করিয়ে কি তৃণমূল আর ক্ষমতায় আসবে ভাবছে? এটা লজ্জা।”
এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “রাকেশকে কেন অ্যারস্ট করা হল এখনও জানা যায়নি।” তিনি এও বলেন, “রাকেশের দুই ছেলে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন এসেছেন, কী কাগজ রয়েছে আপনাদের হাতে। জিজ্ঞাসা করার জন্য পুলিশ তুলে নিয়ে গেল।” তাঁর বক্তব্য, পুলিশ যদি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এমন কাজ করে, তা হলে তার বিরোধিতা করবে বিজেপি। দরকারে রাস্তায় নামবে দল।
সোমবারই নিউ আলিপুরের মাদক কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেন গোয়েন্দারা। লালবাজারের তরফে জানানো হয়, এই মামলায় ফৌজদারি আইনের ১৬০ ধারায় তাঁকে সাক্ষী হিসাবে জিজ্ঞাসা করতে চান। এর ভিত্তিতে রাকেশ সিংয়ের কাছে নোটিস পাঠান লালবাজারের কর্তারা। আজই বিকাল চারটের মধ্যে লালবাজারে হাজিরা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাকেশ সিংকে। কিন্তু সকালে তিনি ইমেলে করে গোয়েন্দাদের জানান, মঙ্গলবার তিনি দিল্লিতে যাচ্ছেন। দু’দিন সেখানেই থাকবেন। তারপর তাঁর যেতে কোনও অসুবিধা নেই। এছাড়াও রাকেশ সিং লালবাজারের কর্তাদের কাছে বেশ কিছু শর্ত দেন।
রাকেশ গোয়েন্দাদের কাছে শর্ত রাখেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি যখন লালবাজারে যাবেন, তখন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরাও তাঁর সঙ্গে থাকবেন। তাঁর সঙ্গে আইনজীবী থাকবেন বলেও শর্ত রাখেন রাকেশ। সেই মর্মে মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন রাকেশ।
রাকেশের আইনজীবী আদালতে তুলে ধরেন, রাকেশের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সওয়াল করেন, ২৬টি নয়, তার আগে থেকেই রাকেশের বিরুদ্ধে মোট ৫৬ টি মামলা চলছে। যার রায় বেরোলে রাকেশের ১০ বছর জেল হতে পারে। এমন এক ব্যক্তিকে কীভাবে কেবলমাত্র নোটিস পাঠানো যায়? কেন তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন না? সে সব প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের আইনজীবী।
এরপরই রাকেশের আর্জি খারিজ করে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী দত্ত। তাঁর পর্যবেক্ষণ, রাকেশকে এই তদন্তে সহযোগিতা করতেই হবে। এই নোটিসের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেননি বিচারপতি। বিকালেই রাকেশ সিংয়ের বাড়িতে পৌঁছন লালবাজারের গোয়েন্দারা। কিন্তু সেখানেই সিআইএসএফের বাধার মুখে পড়েন তাঁরা।
আরও পড়ুন: পামেলা কাণ্ডে গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিং
প্রয়োজনে রাকেশ সিংয়ের বাড়ির দরজা ভাঙার জন্য হাতুড়ি, শাবল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত হয় পুলিশ। তবে সেরকম কোনও পদক্ষেপ করতে হয়নি। আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাত জন পুলিশকে ভিতরে ঢুকতে দিতে বাধ্য হন তাঁরা। এরপরই সন্ধেবেলা বিজেপি নেতার দুই ছেলেকে আটক করা হয়। তারপরই রাকেশের ফোন নম্বর ট্র্যাক করা শুরু করেন গোয়েন্দারা। অবশেষে গ্রেফতার।