২ শিক্ষিকার শরীরে বিষের মাত্রা বেশি! প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পেশ ফরেনসিক টিমের
kolkata: সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করা, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা ,সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে উত্তর বিধান নগর থানায়।
কলকাতা: বিকাশভবনের সামনে সেদিন কীটনাশক খেয়েছিলেন পাঁচ এসএসকে শিক্ষিকা। প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট জমা করলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ঘটনার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই বিকাশভবনের সামনে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক টিম। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২ শিক্ষিকার শরীরে বিষের মাত্রা বেশি। শরীরে বিষের মাত্রা ঠিক কতটা তা খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রের খবর, আরজিকরে চিকিৎসাধীন তিন জনের মধ্যে একজনের বিষ পাকস্থলীতে চলে গিয়েছিল। তাঁকে আইসিইউয়ে রেখে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকি দু’জন মেডিসিন ওয়ার্ডে রয়েছেন। সকলেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এনআরএসে দু’জনের মধ্যে একজনের রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে তাঁকে। সেখানে দুজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁরও শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আরজিকর সূত্রের খবর, অর্গানোফসফরাস জাতীয় কীটনাশক খেয়েছিলেন আন্দোলধকারীরা।
অন্যায়ভাবে বদলির প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষিকারা। বদলির অস্বচ্ছতার দাবি তুলে রাস্তায় নামে শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। বিকাশ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনার সময় আদৌ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ভিতরে ছিলেন কি না তা এখনও জানা যায়নি। তবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতেই শুরু হয় ঝামেলা। এরই মধ্যে পাঁচজন একটি শিশি বের করে মুখে কিছু একটা ঢেলে দেন। এরপরই তাঁদের মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হতে দেখা যায়। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। উল্টোদিকে, এই ঘটনায় শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় জোড়া মামলা রুজু করল উত্তর বিধান থানার পুলিশ। বুধবারই আরজিকর হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখা করতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এসএসকে শিক্ষিকাদের এই আন্দোলনের রেশ পৌঁছেছে জাতীয় স্তরে।
সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করা, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা ,সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে উত্তর বিধান নগর থানায়।
তবে এসবের মাঝেই ফেসবুক পোস্ট করে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আন্দোলনরত শিক্ষিকাদের বিজেপি ক্যাডার বলে তোপ দাগেন তিনি। ব্রাত্য ফেসবুকে লেখেন, “এত কিছুর পরও যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা শিক্ষক শিক্ষিকা নন, বিজেপি ক্যাডার।”
বিষ পানের ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিরোধীরা এক সুরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী টুইটে লিখেছেন, “আজ বিকাশভবনের সামনে ৫ জন এসএসকে-এমএসকে শিক্ষিকা নিজেদের বাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বদলির প্রতিবাদে বিষ পান করেছেন। তাঁরা যে সামান্য টাকা মাসোহারা পান, তাতে তাঁদের আলাদা থাকার জায়গা জোগাড় করা সম্ভব নয়। প্রতিহিংসাপরায়ণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার শাস্তিমূলক বদলিকে নতুন অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে।”
অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে বলবো, বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষিকাদের আত্মহত্যার চেষ্টা সারা বাংলাকে লজ্জিত ও কলঙ্কিত করছে। আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করছি বিষয়টি দেখার জন্য ও সমাধানের জন্য।” এ সব বিতর্কের মাঝেই ফের ঝাড়গ্রামের তিন এসএসকে শিক্ষিকার বদলির অর্ডার ইস্যু হয়েছে। গত ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছিলেন পুরসভার স্কুলের তিন শিক্ষিকা। তাঁদেরই বদলির নির্দেশ এসেছে। গত এই নির্দেশ মেইল হয়েছে ২৩ তারিখ। বুধবারই এই বদলির অর্ডার হাতে পান শিক্ষিকারা। ফলে নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই হোক উপনির্বাচন! যুক্তি সাজিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূলের প্রতিনিধি দল