HAM Radio: ঘূর্ণির তাণ্ডবে ‘মৃত’ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনল হ্যাম রেডিয়ো, ২৩ বছরের বৃত্ত সম্পূর্ণ সাগর তীরেই

Ham Radio: কথায় আছে রাখে হরি মারে কে। অবিশ্বাস্য ভাবেই ‘মৃত’ কৃতিচন্দ্র ফিরে এলেন তেইশ বছর পরে।

HAM Radio: ঘূর্ণির তাণ্ডবে 'মৃত' ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনল হ্যাম রেডিয়ো, ২৩ বছরের বৃত্ত সম্পূর্ণ সাগর তীরেই
মৃত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনল হ্যাম রেডিও
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 20, 2022 | 8:31 PM

সিজার মণ্ডল

তেইশ বছর আগের সুপার সাইক্লোনের (Super Cyclone) তাণ্ডবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায় পড়শি রাজ্য়ের সৈকত তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষকে। কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঝড়ের তাণ্ডবে, তার স্পষ্ট হিসাব এখনও নেই। সেই ঝড়ের মধ্যেই আরও হাজার মানুষের মত নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পুরী (Puri) জেলার নিমপদা থানা এলাকার বাসিন্দা কৃতি চন্দ্র বরেল। তার পর থেকে নিখোঁজই থেকে গিয়েছিলেন। কেউ তাঁর কোনও হদিশ পায়নি। স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে প্রশাসন ধরে নিয়েছিল সুপার সাইক্লোনের বলি হয়েছেন কৃতিচন্দ্র। সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পরে প্রশাসন কৃতি চন্দ্রকে মৃত বলে ঘোষণাও করে দেয়। কিন্তু কথায় আছে রাখে হরি মারে কে। অবিশ্বাস্য ভাবেই সেই ‘মৃত’ কৃতিচন্দ্র ফিরে এলেন তেইশ বছর পরে।

রবিবার ব্রহ্মপুরে আশি বছরের বাবাকে চিনতে ভুল করেননি কৃতির ছেলে শেষদেবা। কিন্তু তার পরেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না শেষদেবা। তাঁর কথায়, ‘বাবার কোনও খোঁজ না পেয়ে আমরা তিন ভাই ধরে নিয়েছিলাম তুফানের তোড়ে সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছেন।’ বঙ্গোপসাগরের সৈকতে থাকা নিমপদার মতো আরও এলাকার বহু মানুষই ওই তুফানে তলিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কৃতিচন্দ্রের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছিল অন্যদিকে।

পুরী থেকে প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার দূরে সেই বঙ্গোপসাগরের তীরেই বিশাখাপত্তনমের রাস্তায় এক অসুস্থ প্রৌঢ়কে দেখতে পান সেখানকার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির এক সদস্য। তাঁকে নিয়মিত খাবার দিত ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ফুটপাতবাসী ওই প্রৌঢ়র অসুস্থতা বাড়ায় তাঁকে নিজেদের আশ্রয়ে নিয়ে আসে ওই সংস্থা। দেখা যায় ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। নিজের পরিচয়ও বিস্মৃত। সুপার সাইক্লোনের প্রায় তেরো বছর পর থেকে তিনি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে রয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে।

বিশাখাপত্তনমের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম কর্ণধার ফাদার জোসেফের কথায়, তাঁরা আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন যে কোনও ভাবে ওই ব্যক্তি স্মৃতি শক্তি ফিরে পাবেন। এর মধ্য়েই একদিন ওই বৃদ্ধ নিজের মনে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের একটি গ্রামের নাম বলতে থাকেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ধারণা হয় বৃদ্ধ হয়তো ওই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বৃদ্ধ নিজেও জায়গাটা চিনতে পারেন না। এলাকার মানুষও বৃদ্ধতে চিনতে ব্যর্থ হন। ফের বিশাখাপত্তনমে ফিরিয়ে আনা হয় বৃদ্ধকে। সম্প্রতি ওড়িয়া ভাষায় নিজের মনেই কথা বলতে শুরু করেন ওই বৃদ্ধ।

এবার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় হ্যাম রেডিও এবং ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে। তাঁরা ফোনে কথা বলা শুরু করেন ওই বৃদ্ধের সঙ্গে। অসংলগ্ন কথার মধ্যেই বৃদ্ধের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে কয়েকটা জায়গার নাম। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের ওড়িশার সদস্যের মাধ্যমে খোঁজ শুরু করেন ওই গ্রামগুলোতে। শেষ পর্যন্ত বামানালা-পাতিগ্রামের কয়েকজন ওই বৃদ্ধকে শনাক্ত করেন তেইশ বছর আগে মৃত কৃতিচন্দ্র হিসাবে। অম্বরীশ বলেন, ‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে কৃতিচন্দ্রের বাড়িতে যোগাযোগ করি। তাঁর তিন ছেলে। তাঁরাও ছবি দেখে বাবাকে চিনতে পারেন।’

এর পরই বিশাখাপত্তনম থেকে ব্রহ্মপুরে নিয়ে আসা হয় কৃতিকে। সেখানে তুলে দেওয়া হয় ছেলে শেষদেবার হাতে। তেইশ বছর আগের ঘূর্ণি এসে থামে রবিবার সেই বঙ্গোপসাগরের তীরেই। ছেলে বাবাকে চিনতে পারলেও, কৃতি চিনতে পারেননি ছেলেকে। গত তেইশ বছরে খুইয়েছেন তাঁর দৃষ্টিশক্তি। বাবার হাত ধরে দরিয়ার দিকে মুখ করে প্রণাম কর বলেন ‘রাখে জগন্নাথ, মারে কে।’