পরীক্ষা হয়নি মানে, সব মুসলিমকে পাশ করাতে হবে এমন নয়: শিক্ষাবিদ মাসুম আখতার
HS Topper Rumana Sultana: সংসদ সভাপতির পক্ষে অনেকের অভিমত, এই রাজ্যে মুসলিম মেয়েরা অনেক বেশি বাধাপ্রাপ্ত। পাশাপাশি, তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে রয়েছেন। সেখানে রুমানা কেবল ব্যতিক্রম নয় বরং উত্সাহের উদ্দীপনার কেন্দ্র বা আদর্শ হতে পারেন।
কলকাতা: রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary Examination) প্রথম স্থানাধিকারী রুমানা সুলতানা, ‘মুর্শিদাবাদের মুসলিম লেডি’-কে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। কারণ, উচ্চশিক্ষা পর্ষদের সংসদ সভাপতি মহুয়া দাসের মন্তব্য। আপাতত, প্রথম স্থান অধিগ্রহণ করা ছাড়াও সংসদ প্রধানের মন্তব্যের জেরে আলোচনার হটলিস্টে বছর আঠেরোর রুমানা। সেই বিতর্কে মুখ খুললেন শিক্ষাবিদ মাসুম আখতার। জানালেন, আলোচনার যোগ্য কেবল রুমানা নন, তালিকায় থাকা শোয়েব মালিকও। কারণ, তিনিও সংখ্যালঘু।
বৃহস্পতিবার, উচ্চমাধ্যমিকের (Higher Secondary Examination) ফলঘোষণার সময়ে সংসদ প্রধান মহুয়া দাস ‘সংসদের ইতিহাসে প্রথম’ বলে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত পড়ুয়ার নাম না বলে তাঁকে ‘মুসলিম লেডি…গার্ল’ বলে সম্বোধন করেন। ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রথম হয়েছেন রুমানা সুলতানা। সংসদ প্রধানের এই মন্তব্যকে ঘিরেই শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক।
সংসদ সভাপতির পক্ষে অনেকের অভিমত, এই রাজ্যে মুসলিম মেয়েরা অনেক বেশি বাধাপ্রাপ্ত। পাশাপাশি, তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে রয়েছেন। সেখানে রুমানা কেবল ব্যতিক্রম নয় বরং উত্সাহের উদ্দীপনার কেন্দ্র বা আদর্শ হতে পারেন। এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন শিক্ষাবিদ মাসুম আখতার। তিনি স্পষ্টই বলেন, “প্রথমত, সংসদ সভাপতির এই ধরনের মন্তব্যে স্পষ্ট যে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, মুসলিমরা কেন পিছিয়ে এটা না দেখে বরং ভাবতে হবে রুমানা কী করে প্রথম স্থান অধিকার করলেন? কারণ, মাধ্য়মিকেও তিনিও পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। তারমানে, তিনি মুসলিম বলেই তাঁকে ঢালাও নম্বর দেওয়া হয়েছে এমনটা নয়। এই রাজ্যে সাধারণত মুসলিম গরিষ্ঠতা বেশি মালদা মুর্শিদাবাদ আর দিনাজপুরের কিছু জায়গায়। কিন্তু, তাদের জন্য কি পরিপূর্ণ স্কুলের পরিকাঠামো রয়েছে? রুমানার মা এবং বাবা দুজনেই শিক্ষক। তাঁদের বাড়িতে পড়াশোনার চর্চা রয়েছে। রুমানা কোনও অনগ্রসর পরিবারের সন্তান নন। ফলে, তাঁর পক্ষে ভাল ফল করাই স্বাভাবিক।”
এখানেই না থেমে মাসুম আখতার আরও বলেন, “রুমানাকে নিয়ে যখন এত আলোচনা, তখন শোয়েবকে নিয়ে কেন হবে না? শোয়েব মালিক রুমানার থেকে মাত্র এক নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। তাহলে কি মুসলিম বলেই তাঁকে ঢালাও নম্বর দেওয়া হয়েছে? এ বছর, সংখ্যালঘুদের মধ্যে পাশের হার ৯৭.৪৬ শতাংশ। পরীক্ষা হয়নি মানে এটা নিশ্চই নয় যে সকলকে মুসলিম বলে পাশ করিয়ে দিতে হবে! তবে সংসদ সভাপতি যে কথা বলেছেন তাতে স্পষ্ট যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া এই মন্তব্য করা যায় না।”
যদিও, সংসদ প্রধানের এই মন্তব্য বা রুমানা সুলতানার সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তি, কোনও বিষয়েই বিশেষ ‘সদর্থক’ মনোভাব প্রকাশ করেননি বিশিষ্ট সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার। তিনি বলেন, “পরীক্ষা যেখানে হল না, সেখানে ফলাফল প্রকাশ অত্যন্ত হাস্যকর। দ্বিতীয়ত, সংসদ সভাপতি হয়ে মহুয়া দাস যে মন্তব্য করেছেন তা দুর্ভাগ্যজনক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক। বিশেষভাবে দলীয় রাজনীতির সমর্থনেই যে এই মন্তব্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ধরনের মন্তব্য শিক্ষাক্ষেত্রে কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মেধা বা বুদ্ধিবৃত্তি কোনও শ্রেণির নিজস্ব সম্পত্তি নয়।”
শুধু মীরাতুন নন, একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্বও সংসদ প্রধানের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে এসবের থেকে অনেক দূরে রুমানা ও তাঁর পরিবার। রুমানার সহজ কথা, “ভাল ফল হবে জানতাম। এত ভাল হবে আশা করিনি। তবে, পরীক্ষা হলে আরও ভাল হত। আপাতত, ডাক্তারী পড়া ছাড়া আর কোনওকিছু নিয়েই বিশেষ ভাবছি না।” আরও পড়ুন: মহুয়ার ঘোষণায় ৩ বার ‘মুসলিম’, ‘কোনও অঘটন ঘটেছে?’ প্রশ্ন অধীরের, ‘শ্রুতিকটু’ লাগছে শিক্ষক মহলেরও