ভ্যাকসিন এসেছিল বাগড়ি মার্কেট থেকে, দাবি ‘অস্কারে মনোনীত’ দেবাঞ্জনের

যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল তা আদৌ আসল কি না এই বিষয়টি নিয়েই সংশয় দেখা গিয়েছে। নিশ্চিত হতে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।

ভ্যাকসিন এসেছিল বাগড়ি মার্কেট থেকে, দাবি 'অস্কারে মনোনীত' দেবাঞ্জনের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 23, 2021 | 5:35 PM

কলকাতা: পুরসভার নাম ভাঙিয়ে ভুয়ো আইএএস অফিসার পরিচয়ে দিয়ে টিকাকরণ ক্যাম্প চালানো দেবাঞ্জন দেবকে ঘিরে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর নালিশ করার পরই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গোটা ঘটনায় আতঙ্ক তটস্থ হয়ে রয়েছেন ভ্যাকসিন প্রাপকরা। কারণ যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল তা আদৌ আসল কি না এই বিষয়টি নিয়েই সংশয় দেখা গিয়েছে। নিশ্চিত হতে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।

সূত্রের খবর, ধৃত দেবাঞ্জন জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, সে বাগড়ি মার্কেট থেকে এক এজেন্টের মাধ্যমে টিকা কিনেছিল। যদিও শহরের কোনও খোলা বাজারে এই টিকা পাওয়া যায় না। এখানেই একটি বড় চক্রের গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। কারণ, স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভার ছাড়া অনুমোদন ছাড়া কোনওভাবেই টিকা পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে গোটা তদন্ত অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিন দেবাঞ্জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাঁকে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।

দেবাঞ্জনের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ভুয়ো আইএএসের পর্দাফাঁস হওয়ার হওয়ার পর দেবাঞ্জনের প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, দেবাঞ্জনে বাবা তাঁদের কাছে দাবি করতেন, তাঁর ছেলে বাংলাদেশ থেকে সিনেমার অফার পেয়েছে। ভাল স্ক্রিপ্ট লেখা এবং ছোটদের সিনেমা পরিচালনা করায় তাঁকে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল বলে দাবি করতেন তিনি। এমনকী, অস্কারের জন্যও মনোনীত করা হয়েছিল বলে দেবাঞ্জনের বাবা পড়শিদের কাছে দাবি করেছিলেন।

ধৃত দেবাঞ্জনের বাড়ি মাদুরদহে। ২০০৭ সালে যখন এই পরিবার মাদুরদহ আসে, তখন তাঁর বাবা দাবি করেছিলেন, ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ভালো ইংরেজিতে অনুচ্ছেদ লিখেছিল। যে কারণে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যরা পরবর্তীকালেও দাবি করে, তাঁদের ছেলে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় পড়াশুনা এবং প্রশাসনিক কাজ সূত্রে।

২০১৭ সালে দেব পরিবার পড়শিদের জানায়, দেবাঞ্জন আইএএস হয়ে গিয়েছে। দেশজুড়ে ১৬ টি মেগাসিটি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেবাঞ্জনের অধীনেই এই মেগাসিটি প্রকল্পের কাজ হবে। কেন্দ্রের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে দেবাঞ্জন যুক্ত রয়েছে বলেও তাঁর পরিবারের তরফে প্রতিবেশীদের কাছে দাবি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন নিয়ে তথ্য নেই পুরসভা-স্বাস্থ্য দফতরের কাছে, কসবার ভুয়ো ক্যাম্পে কী দেওয়া হল কয়েক’শ লোককে?

সূত্র আরও জানাচ্ছে, প্রতিদিনই কোনও না কোন ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে আসতো। আগে লালবাতি নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলাচল করলেও গত দু’বছর ধরে নীল বাতিতে ঘুরত। যদিও তাঁর আইএস হওয়া নিয়ে পড়শিদের মধ্যে ছিল অসংখ্য সন্দেহ। কারণ, যে ছেলেটি ২০১৬ সালে বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছে, সে কীভাবে এক বছরের মধ্যে আইএএস হয়ে গেল! সেটা নিয়েও একটা বড় সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।

শুধু তাই নয়, দেবাঞ্জন এলাকার একটি ক্লাবকে জানিয়েছিল, সে রাজ্য সরকারের ২ লক্ষ টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করে দেবে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবকটি ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা দিচ্ছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্লাবটি তা পাচ্ছিল না। তখনই দেবাঞ্জন ওই ক্লাবকে বলে, ২ লক্ষ টাকা দিয়ে দেবে। দু’বছর আগে এই টাকা দেবে বলে দাবি করা হলেও এখনও পর্যন্ত সেই টাকা দেয়নি।

আরও পড়ুন: কসবার সেই ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে টিকা নিয়েই খটকা লেগেছিল মিমির! পাকড়াও ‘আইএএস’