Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পাঠক বলছি: দাড়ি-টুপি মানেই জঙ্গি-জেহাদি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক!

অভিজাত বাঙালি একজন টুপি-দাড়ির মেঠো বাংলায় কথা বলা, ‘অসংস্কৃত’ মুসলমানকে মূলধারার রাজনীতিতে দেখতে অভ্যস্ত নন। দাড়ি-টুপি মানেই জঙ্গি-জেহাদি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক এই চেনা ছকের ন্যারেটিভে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা!

পাঠক বলছি: দাড়ি-টুপি মানেই জঙ্গি-জেহাদি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক!
ছবি- পিটিআই
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 11, 2021 | 12:44 PM

বিষয়: আইএসএফ-বাম জোট কতটা ধর্মনিরপেক্ষ? এই জোট কতটা সক্ষম হবে ভোটে দাগ কাটতে?

অগ্নিবেশ রায়, বেলেঘাটা

শুরুতেই বলে নেওয়া যাক, ‘আইএসএফ-বাম জোট’ কথাটা কি খুব ঠিক? কথাটা কি হওয়া উচিৎ নয় ‘বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট’? যার পোশাকি নাম সংযুক্ত মোর্চা। সাধারণভাবেও আসন সংখ্যার নিরিখে যে দল বা গোষ্ঠী এগিয়ে থাকে সেই ক্রমেই দলগুলির নাম লেখা হয়, সে বিচারেও ‘বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট’ লেখাই যুক্তিযুক্ত। আইএফএফের পুরো নাম, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট, ভারতে বোধহয় দেবগৌড়ার জনতা দল (সেকুলার) ছাড়া আর কোনও দলের নামে সরকারিভাবে ‘সেকুলার’ (ধর্মনিরপেক্ষ) শব্দটা জুড়ে নেই। বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, জোটটা যদি শুধু বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে হত, তাহলে সেই জোট ‘কতটা ধর্মনিরপেক্ষ’ সে প্রশ্ন আদৌ উঠত না।

আশ্চর্য আয়রনি, গোল বেধেছে এমন এক দলের সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য, যে দল তার নামেই সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা ধারণ করে। তবে কেন প্রশ্ন উঠছে? বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, এই দলের প্রধান মুখ ও সাংগঠনিকভাবে দলটির পৃষ্ঠপোষক যিনি, তাঁর নাম পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। না, শুধুই তাঁর ধর্মীয় পরিচিতির জন্য এই প্রশ্ন উঠছে, এমনটা নয়। উঠছে কারণ তিনি ধর্মগুরুও। ফুরফুরা শরিফের পীরবংশের বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধি তিনি, ‘আহলে সুন্নাতউল জামাত’-নামক ধর্মীয় সংগঠনটির প্রধানও তিনি। এবং এই সংগঠনটিরই প্রধান হিসেবে মূলত দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় তাঁর অনুগামী বৃত্ত তৈরি করেছেন তিনি।

ধর্মীয় জমায়েতে ‘ধর্মগুরু’ আব্বাসের বিভিন্ন বক্তৃতা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে আছে, নিশ্চিতভাবেই তার সবটুকু গ্রহণযোগ্য নয়। একাধিক বিষয়ে পশ্চাদপদ মানসিকতার নিদর্শন আছে। কিন্তু, ‘ধর্মগুরু’ আব্বাস আর রাজনীতিবিদ আব্বাস যে একই লোক নন, তেমন আভাসও যথেষ্টই আছে। হায়দরাবাদের এআইএমআইএম-এর মতো গোষ্ঠী পরিচিতিকে প্রকট করে তোলা কোনও নাম নয়, তাঁর দলের নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। আব্বাস স্পষ্টই জানিয়েছেন, তাঁর দল শুধুই মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার কথা বলবে না, বলবে আদিবাসী-দলিত-ওবিসি-সংখ্যালঘু সবার অধিকারের এবং এই গোষ্ঠীর মানুষেরা যে দীর্ঘ দিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক অবিচারের, বঞ্চনার, অত্যাচারের শিকার, সে কথা তো অনস্বীকার্য। সে সব মানুষের হয়ে আওয়াজ তুললে তা কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক নয়, বরং ভারতবর্ষের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার যে ধারণা তাকেই উজ্জ্বল করবে।

আসলে, অভিজাত বাঙালি একজন টুপি-দাড়ির মেঠো বাংলায় কথা বলা, ‘অসংস্কৃত’ মুসলমানকে মূলধারার রাজনীতিতে দেখতে অভ্যস্ত নন। দাড়ি-টুপি মানেই জঙ্গি-জেহাদি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক এই চেনা ছকের ন্যারেটিভে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা! কিন্তু, বাস্তব হল, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ শুধু ধর্মনিরপেক্ষই নয়, এই জোট ধর্মনিরপেক্ষতাকে এক অর্থে রিডিফাইন করছে। সেকুলারিজমের মিডিয়াকৃত হিন্দু-মুসলিম বাইনারির বাইরেও জনজাতি, দলিত, ওবিসি, প্রান্তিক জায়গার ভাষিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, তাঁদের সেকুলার রাষ্ট্রে অংশগ্রহণ (ভাগিদারি) জরুরি, তাঁদের আওয়াজও যে পৌঁছনো প্রয়োজন প্রশাসনিক স্তরে, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিকে ধারণ করছে এই জোট। তাই বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর ‘সংযুক্ত মোর্চা’-র ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই।

এই নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি বাইনারিকে জোরালোভাবে আঘাত করেছে এই জোট। জোটের ডাকে ভরা ব্রিগেড নিঃসন্দেহে তারই সাক্ষ্য বহন করছে। এবং তৃণমূল থেকে একের পর এক নেতার বিজেপিতে ঝাঁপ দেওয়ায় মানুষের মনে সিরিয়াস প্রশ্ন উঠছে, ফুল বদলে তাহলে হবে কী? যদি মুখগুলোই এক থাকে? সারদা-নারদা-টেট-সহ একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতামন্ত্রীর পদ্মবনে ঝাঁপ দেওয়ায় তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমহ্রাসমান। তাই বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের ‘নিশ্ছিদ্র’ জোট ভোটের ফলেও প্রভাব ফেলবে, তা বলাই যায়। নবগঠিত দল আইএসএফের কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ তুঙ্গে, পোড়খাওয়া বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের যে তাঁরা বাড়তি অক্সিজেন জোগাবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তাই ভোট প্রচার, ভোটের দিন বুথ ম্যানেজমেন্ট থেকে ভোটের ফল, সবেতেই এই জোট দাগ কাটতে চলেছে।

(পাঠকের মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন- পাঠক বলছি: সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট করলেও ধর্মনিরপেক্ষতা খোয়া যাবে না বামেদের, কেন জানেন?

কেন পাঠক বলছি?

জনতাই সব জানে। আপনিই আসলে বোঝেন কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। কার কী স্বার্থ? তাই ব্রান্ডেড বিশ্লেষক নয়, আপনার মতামতই তুলে ধরতে চায় TV9 বাংলা। এবার ভোটে আপনিই বিশ্লেষক।

লেখা পাঠানোর নিয়ম:

** ন্যূনতম ২৫০ শব্দের লেখা হতে হবে। সর্বোচ্চ ৫০০ শব্দের বেশিও না হয়। ** Unicode- ফরম্যাটে পাঠাতে হবে লেখা। স্টোরি সংক্রান্ত একটি বা একাধিক ছবি পাঠাতে হবে। ** একটি শিরোনাম দিতে হবে ** আপনার ছবি, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর অব্যশই পাঠাবেন।

লেখার বিষয় প্রতি সপ্তাহে জানিয়ে দেওয়া হবে।