Primary Recruitment Case: ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ, কোন যুক্তিতে ছাড় পেলেন সাড়ে ৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক?
Primary Recruitment Case: মূল অভিযোগ হল, অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নিয়েই নিয়োগ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তো সবার ক্ষেত্রে রায় প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ! অন্তত সরল হিসেবে তো সেটাই মনে হয়। কিন্তু কেন সংখ্যাটা ৩৬ হাজার?
কলকাতা: সাম্প্রতিককালে একসঙ্গে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নজির নেই বললেই চলে। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি বা এসএসসি-র নবম-দশমের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ আগেও দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে, ২০১৬-র প্রাথমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই বাতিল হওয়া চাকরির সংখ্যাটা কার্যত অবাক করা। এতগুলো নিয়োগে বেনিয়ম হল কীভাবে? তার থেকেও বড় প্রশ্ন হল, ৩৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হল, আর বাকি সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড় পেলেন কোন যুক্তিতে? উল্লেখ করা দরকার, ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে যে নিয়োগ হয়েছিল, তাতে চাকরি পেয়েছিলেন মোট ৪২ হাজার ৫০০ জন। তার মধ্যে ৩৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
মূল অভিযোগ হল, অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নিয়েই নিয়োগ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তো সবার ক্ষেত্রে রায় প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ! অন্তত সরল হিসেবে তো সেটাই মনে হয়। কিন্তু কেন সংখ্যাটা ৩৬ হাজার, তা স্পষ্ট হবে পরীক্ষার মোট নম্বরের বিভাজন হিসেব করলে। মোট নম্বর ছিল ৫০। তার মধ্যে মাধ্যমিকের জন্য বরাদ্দ ৫, উচ্চমাধ্যমিকের জন্য বরাদ্দ ১০, প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ নম্বর, টেটের জন্য ৫ নম্বর, এক্সট্রা ক্যারিকুলারের জন্য ৫, ইন্টারভিউয়ের জন্য ৫ ও অ্যাপ্টিটিউড টেস্টের জন্য ৫ নম্বর দেওয়া হয়।
ওই অ্যাপ্টিটিউড টেস্টের ৫ নম্বর নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। যাঁরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত (এ ক্ষেত্রে ডিএলএড উত্তীর্ণ) তাঁরা তো ১৫ নম্বরে এগিয়েই থাকছেন। আইনজীবীদের দাবি, সে ক্ষেত্রে অ্যাপ্টিটিউড টেস্টের ৫ নম্বর না পেলেও তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরে খুব বেশি ফারাক পড়বে না। কিন্তু যাঁরা প্রশিক্ষণ নেননি, তাঁদের তো ১৫ নম্বর বাদ যাচ্ছে, সেই সঙ্গে অ্যাপ্টিটিউড টেস্টের ৫ নম্বর নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সে কারণেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেই ব্যাখ্যা আইনজীবীদের। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১৪-র সেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির তিন নম্বর পয়েন্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ডিএলএড ট্রেনিং প্রাপ্তরা ১৫ নম্বর পাবেন।
এখানেই শেষ নয়। রায়ের ছত্রে ছত্রে রয়েছে বেনিয়মের অভিযোগ। জোর করে নম্বর বাড়ানোর প্রমাণ, ইন্টারভিউতে অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছে আদালত। রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ৩০ জন ইন্টারভিয়ারের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ২৫ জনই বলেছিলেন অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়নি। যদি হয়েও থাকে, সে ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি।
যোগ্য নিয়োগপত্র পাওয়া যায়নি নিয়োগের যে প্যানেল প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে সর্বনিম্ন নম্বর যিনি পেয়েছেন, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ১৪.১৯১। অথচ দেখা গিয়েছে, ১৩-র কম পেয়েও চাকরি করছেন ৮২৫ জন।
উল্লেখ্য, পর্ষদের দাবি অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পর্ষদ এও বলছে যে অনেক শিক্ষক বা শিক্ষিকা চাকরি করাকালীন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আদালতের রায়, সেই সব চাকরি-হারারা পুনরায় প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।