মে মাসের বৃষ্টিতে ভাঙল ১২১ বছরের রেকর্ড, কত বৃষ্টি কলকাতায়?

গ্রীষ্মের বৃষ্টি রীতিমতো পাল্লা দিয়েছে বর্ষার সঙ্গে। কলকাতায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। গড় বৃষ্টির পরিমাণ ৩৯৬ মিলিমিটার। প্রায় তার কাছাকাছিই বৃষ্টি হল এ বার।

মে মাসের বৃষ্টিতে ভাঙল ১২১ বছরের রেকর্ড, কত বৃষ্টি কলকাতায়?
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 01, 2021 | 8:50 AM

কমলেশ চৌধুরী: মে মাসের বৃষ্টির সব রেকর্ড ভেঙে দিল একুশের কলকাতা (Kolkata)। সোমবার সকাল পর্যন্ত আলিপুরে গোটা মাসের বৃষ্টির পরিমাণ ৩৮৮ মিলিমিটার। ১২১ বছরের ইতিহাসে মে মাসে এত বৃষ্টি আগে কখনও হয়নি মহানগরে। বস্তুত, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমপানের জন্য সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙেছিল। সবমিলিয়ে বৃষ্টি হয়েছিল ৩৮৩.৭ মিলিমিটার। সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল এ বার। নেপথ্যে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ১১ মে দুপুরের বেলাগাম বর্ষণ।

মে মাসে গড়ে কতটা বৃষ্টি হওয়ার কথা কলকাতায়?

এই প্রশ্নের জবাবেই বোঝা যাবে, ঠিক কতটা অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘকালীন গড় বলছে, মে মাসে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা আলিপুরে। অর্থাত্‍, বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের প্রায় তিন গুণ। এবং এই বৃষ্টির সিংহভাগ হয়েছে হাতে গোনা তিন-চার দিনের মধ্যেই। প্রথম মুষলধারা ১১ মে। ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি, যা গোটা মাসের ৭৫%। ইয়াস আছড়ে পড়ার দিন ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতায়। তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি (৮৯ মিলিমিটার) হয় পর দিন। সবমিলিয়ে ইয়াসকে কেন্দ্র করে প্রাপ্তি ১৯৬ মিলিমিটার। তাতেই চুরমার পুরোনো যাবতীয় রেকর্ড।

শুধু কী মে-র রেকর্ড! গ্রীষ্মের বৃষ্টি রীতিমতো পাল্লা দিয়েছে বর্ষার সঙ্গে। কলকাতায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। গড় বৃষ্টির পরিমাণ ৩৯৬ মিলিমিটার। প্রায় তার কাছাকাছিই বৃষ্টি হল এ বার।

অবশ্য শুধু কলকাতায় নয়, জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের হাত ধরে রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি দেশের অনেক জায়গাতেই। ঘূর্ণিঝড় তাউটের প্রভাবে মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে বৃষ্টি হয়েছিল ২৩০ মিলিমিটার। বাণিজ্যনগরীর ইতিহাসে মে মাসে একদিনে এত বৃষ্টি আগে কখনও হয়নি। তাউটে গুজরাট পেরিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। দুর্বল হতে হতে পৌঁছে গিয়েছিল হিমালয় লাগোয়া উত্তরপ্রদেশে। সেই সময়েই কাশ্মীর হয়ে ঢুকে পড়েছিল একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। তাই দুর্যোগের মুখোমুখি হয় উত্তরাখণ্ডও। রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা নেমে যায় রাজধানীতেও। ২০ মে দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছিল ১১৯.৩ মিলিমিটার। এর আগের রেকর্ড ছিল ১৯৭৬ সালের, তাও পরিমাণ ছিল ঠিক অর্ধেক (৬০ মিলিমিটার)। ফলে, মার্চ থেকে মে– দেশের বিস্তীর্ণ তল্লাটই অতিবৃষ্টির সাক্ষী। গোটা দেশের নিরিখে যার পরিমাণ ১৮% বেশি।

Rain in May

গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ

ঘটনা হল, অল্প সময়ের মধ্যে বেশি বৃষ্টিতে ভালোর চেয়ে মানুষের দুর্ভোগই হচ্ছে বেশি। কলকাতার কথাই ধরা যাক, ফেব্রুয়ারি, মার্চে একটিও কালবৈশাখী হয়নি কলকাতায়। এপ্রিলের শেষবেলায় কালবৈশাখীর দেখা মিললেও আহামরি বৃষ্টি হয়নি। এদিকে মে মাসে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। জলমগ্ন বহু এলাকা।

অর্থাত্‍, একটানা শুখা পর্ব চলার পর অল্প সময়ে তুমুল বৃষ্টি। যেমন ইয়াস স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর দিন মালদায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০৯ মিলিমিটার। সোমবার সকাল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় জামশেদপুরে বৃষ্টি হয়েছে ১৭২ মিলিমিটার। এই ধরনের চরম ঘটনা কি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই? পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির আবহবিজ্ঞানী পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক্সট্রিম ইভেন্ট অর্থাত্‍, চরম ঘটনা বাড়ছে। যখন গরম, তখন প্রবল গরম, যখন খরা, তখন ভয়াবহ খরা আবার যখন বৃষ্টি, তখন অল্প সময়ে ঝেঁপে বৃষ্টি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের অগস্টে পর পর দু’বার প্রবল বৃষ্টি হয়েছে কেরলে। আগে এই ধরনের ঘটনা এত শতাব্দীতে একবার হত। সেখানে পর পর দু’বছর! অথচ, অগস্টের পর সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি খুবই কম। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব গোটা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে। ভারত বা বাংলা বা কলকাতাতেও প্রতিফলন কম-বেশি দেখা যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’

সোমবারের মুষলধারার নেপথ্যে কে?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। রাজ্যের মাঝ বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাও বিস্তৃত। তার উপর সমুদ্র থেকে শক্তিশালী দখিনা-পুবালি বাতাস ঢুকছে। ঘূর্ণাবর্ত-অক্ষরেখার প্রভাবে সেই বাতাসই উপরে উঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি করছে। তাই উপকূল লাগোয়া একাধিক জেলা জুড়েই বৃষ্টি।’ মাঝেমধ্যে এরকম বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। থাকবে ভ্যাপসা গরমও।