School Reopening: ‘ভরা ক্লাসরুমে আবার নতুন নতুন প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসবে স্যরের দিকে, এটাই তো প্রাপ্তি’

School Reopen: এতদিন পর আবার ওরা আসবে, ওদের সঙ্গে দেখা হবে, সামনে থেকে কথা হবে। নতুন নতুন প্রশ্নবাণে আবার জর্জরিত হতে পারব, বললেন কলকাতার জর্জ কলেজের অধ্যাপক সৌমেন নাথ।

School Reopening: 'ভরা ক্লাসরুমে আবার নতুন নতুন প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসবে স্যরের দিকে, এটাই তো প্রাপ্তি'
অধ্যাপক সৌমেন নাথ। অলঙ্করণ অভীক দেবনাথ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 6:23 PM

সৌমেন নাথ, অধ্যাপক, জর্জ কলেজ

এত দিন ছাত্রদের মুখটা মিস করেছি। ওদের যে আবেগ, নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা সেটাকে মিস করেছি। নতুন চিন্তা ভাবনা মানে এ ক্ষেত্রে বোঝাতে চাইছি, আমাদের শিক্ষকদের তো প্রতিটা ব্যাচের সঙ্গে একটা করে চ্যালেঞ্জ আসে। কারণ যখন কোনও ছাত্র বা ছাত্রী একটি বিশেষ কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে আসে। সে ক্ষেত্রে যেটা হয়, নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারাগুলোও নিজেদের সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসে।

চিন্তাধারাগুলোর সঙ্গে যেহেতু আমরা অনেক বছর ধরে পড়াচ্ছি, সেখানে নতুনের সঙ্গে পুরনোর একটা কোথাও কিন্তু সংঘাত বাধে। আর সেটার পরিসমাপ্তি ঘটে একটি নতুন সমাধান সূত্রে। সেই জায়গাটা ভীষণ ভাবে এই এতগুলো মাস মিস করেছি।

ব্যক্তিগত ভাবে বলতে গেলে প্রত্যেকের তো চিন্তাধারা আলাদা আলাদা হয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো করে উত্তর দেওয়া, সেই জায়গাটায় একটা বড় ফাঁক ছিল এতদিন ধরে। ওরা আবার আসবে। সেই খামতি কেটে আবার প্রাপ্তি ঘটবে। সত্যি অত্যন্ত আবেগ কাজ করছে।

এই যে এতদিন ধরে ক্লাস নেওয়া বন্ধ। একটা সময়ের মধ্যে আমাদের ক্লাসে ঢুকতে হয়, ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে এটা কিন্তু মনের মধ্যে একটা সাড়া ফেলছিল এতদিন। আমরা তো মানুষ। শিক্ষক হিসাবে আমাদেরই কর্তব্য ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মানুবর্তিতা শেখানো। সময়ের কাজ সময়ে করত হবে এটা তো স্কুল জীবন থেকেই শিখে আসে।

এর পর কলেজে তা আরও পোক্ত হয়। পরবর্তীকালে কাজের জায়গায় তারা যখন যায়, এই নিয়মানুবর্তিতাই কিন্তু কাজে লাগে। আমরা যেমন শিক্ষকরা সেই নিয়মানুবর্তিতা মেনে এতদিন ধরে পড়াচ্ছি, ওদের মধ্যেও সেই জিনিসটা এসে যায়। ওরা কেউ ক্লাসে না এলে আমরা বকাবকি করি। কিন্তু সেটা ওদের ভালর জন্যই করি।

পরবর্তী কালে ওদের হয়তো সকাল ৯টায় কোথাও যেতে হবে, সেখানে যাতে তারা সাড়ে ৯টায় না যায়। এমনকী ৯টা ১ যেন না হয়। প্রয়োজনে ৯টা বাজতে পাঁচ মিনিট আগে যাতে চলে যায় সেই নিয়মানুবর্তিতা তৈরি করাই তো শিক্ষকের কাজ।

শিক্ষকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের সম্পর্ক কিন্তু শুধু বইয়ের পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের চারপাশে রোজ যা ঘটছে, সে সব নিয়েও শিক্ষক-পড়ুয়াদের কথা হয়। এই যে অনলাইনে এতদিন পড়াশোনা চলল তার ফলে কিন্তু এই সম্যক ধারণাগুলো তৈরি হল না। অনেকেই আছে যারা অন্য জায়গা থেকে এসে পড়াশোনা করে। বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করে। তাদের এমন বহু ব্যক্তিগত সমস্যাও মাস্টারমশাইদের সঙ্গে ওরা শেয়ার করে। গত দু’বছরের মধ্যে যারা পাশ করে বেরিয়ে গেল তারা কিন্তু এই ধারণাগুলো থেকে দূরেই থেকে গেল।

আসলে অফলাইনের বিকল্প কোনওদিনই অনলাইন হতে পারে না। অফলাইনে পঠনপাঠনের সময় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আন্তরিকতাটা তৈরি হয়, গুরু-শিষ্য যে পরম্পরা তৈরি হয় অনলাইনে তা কোনওদিনই তৈরি করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। এই ফাঁকটা চিরকালীন। থেকেই যাবে।

এমনও হয়েছে ক্লাসে ঢুকে দেখছি দু-তিনজন ছাত্র এক জায়গায় বসে কী করছে। জিজ্ঞাসা করতেই বলল, স্যার ও এটা বুঝতে পারেনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। এই জবাবটায় একজন শিক্ষকের যে কী পরিতৃপ্তি বলে বোঝানো যাবে না। এটাই তো শিক্ষার উদ্দেশ্য। নিজে আলোকিত হওয়া, অন্যকে আলোকিত করা। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। অনলাইন ক্লাসে কিন্তু সেটা হল না। এই ফাঁকও রয়েই গেল।

সত্যি কথা বলতে এতদিন ধরে কোনও ছাত্রকে সেই অর্থে সামনে পাইনি। আবার সামনে থেকে দেখব। ওরাও হয়তো কিছুটা বদলে গিয়েছে। এই যে নতুন করে দেখা, সত্যিই আমি খুব আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। অনেক কিছুই আছে যেগুলি অনলাইনে শেখানো যায় না। আচার আচরণ, অন্যের প্রতি ব্যবহার এগুলো অনলাইনে হয় না।

এতদিন পর আবার ওরা আসবে, ওদের সঙ্গে দেখা হবে, সামনে থেকে কথা হবে। নতুন নতুন প্রশ্নবাণে আবার জর্জরিত হতে পারব। আসলে ছাত্র ছাত্রীরাও তো আমাদের তৈরি করে। ওদের নতুন প্রশ্ন, নতুন চিন্তাধারা আমাদেরও তৈরি করে। ছেলে মেয়েগুলোর সঙ্গে আবার দেখা হবে ভেবেই ভাল লাগছে।

আরও পড়ুন: Kolkata Metro: স্বাভাবিক হয়েছে কলকাতা মেট্রো, চলছে টোকেন ফেরানোর ভাবনাচিন্তাও