Durga Puja: রাজ্যের হাল ভাঁড়ে মা ভবানি, পুজোয় ৩০০ কোটির দান-খয়রাতি কীভাবে, উঠছে প্রশ্ন

Mamata Banerjee: রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির অনুদান ১০ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ৬০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। পুলিশ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এবার রাজ্যে অনুদান প্রাপকের তালিকায় রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার পুজো কমিটি। সেক্ষেত্রে সবাইকে 'শারদীয়' অনুদান দিতে গেলে রাজ্যের কোষাগার থেকে খসবে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।

Durga Puja: রাজ্যের হাল ভাঁড়ে মা ভবানি, পুজোয় ৩০০ কোটির দান-খয়রাতি কীভাবে, উঠছে প্রশ্ন
দুর্গাপুজোর অনুদান আরও বাড়ালেন মমতাImage Credit source: টিভি নাইন বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2023 | 8:32 PM

কলকাতা: রাজ্যের ভাঁড়ে মা ভবানি অবস্থা। মঙ্গলবার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সরকারের হাতে ‘একদম টাকা নেই’। তারপরও রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির অনুদান ১০ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ৬০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। পুলিশ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এবার রাজ্যে অনুদান প্রাপকের তালিকায় রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার পুজো কমিটি। সেক্ষেত্রে সবাইকে ‘শারদীয়’ অনুদান দিতে গেলে রাজ্যের কোষাগার থেকে খসবে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।

উল্লেখ্য, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা এর আগেও বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘভাতার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ। সেই নিয়েও মমতা অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যের বর্তমান যা অবস্থা তাতে এর থেকে বেশি ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে পুজোর জন্য এই বিশাল আর্থিক অনুদান… কীভাবে দেখছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ? এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীদের দাবি, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে বলছেন সরকারি কোষাগারে টাকা নেই, তা সর্বৈব মিথ্যা। আমাদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, ফিনান্স কমিশন থেকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ যে টাকা পাওয়া যায়, তার পুরোটাই এ রাজ্য পেয়েছে। ফলে টাকার অভাবে ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না, এটি মিথ্যা।’

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘ডিএ-র দাবি মিটিয়ে দিতে যে টাকার প্রয়োজন, তা আছে। কিন্তু পুজো কমিটিগুলিতে এই ধরনের অনুদান দিচ্ছেন। আসলে পশ্চিমবঙ্গকে সস্তা শ্রমের বাজার তৈরি করা এবং কিছু মানুষকে অনুদান পাইয়ে দিয়ে চুপ রাখাই হল এই সরকারের গৃহীত রীতি। আমরা পুজো কমিটিকে টাকা দেওয়ার বিরুদ্ধে নই। সেটা দিচ্ছে দিক। কিন্তু আমাদের ন্যায্য পাওনা দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে অর্থাভাব কোনও যুক্তি নয়।’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘পুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ইমাম-মোয়াজ্জেমদের বৈঠক করেছেন। সেখানে ৫০০ টাকা করে ভাতা বাড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আসলে ব্যালেন্সের খেলা খেলছেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আরও বেশি বাড়াতে পারতেন। অসুবিধা কী! ডিএ দেওয়ার দরকার নেই, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ হওয়ার দরকার নেই। রাস্তায় বসে রয়েছে ছেলেমেয়েরা। নিয়োগ নেই। ওগুলো সব চুলোয় যাক।’

বিজেপি নেতা সজল ঘোষ কলকাতার সন্তোষমিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজোর আয়োজকদের অন্যতম প্রধান মুখ। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সজল ঘোষ বলছেন, ‘আমাদের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ভাগের ৭০ হাজার টাকা রাজ্যের সাহায্যের খাতে দান করে দিলাম। এই টাকা আমরা নেব না। যাঁরা চাকরির জন্য বসে আছে, এই টাকায় তাঁদের দুই মাসের মাইনে হত। যাঁরা ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের পাঁচ মাসের ডিএ হত। আমার অনুরোধ আমাদের এই টাকা এরকম কোনও একটা ভাল কাজে লাগিয়ে দেওয়া হোক।’

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল অর্থনীতির অধ্যাপক দেবাশিস সরকারের সঙ্গেও। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের রাজ্যের যদি ২০১১ সালের বাজেট ঘাটতি দেখা হয়, এবং ২০২৩ সালের বাজেট ঘাটতি দেখা যায়… তাহলে গত এক দশকের সময়কালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতির মধ্যে রাজ্য চলছে। এই পরিস্থিতিতে আয় ও ব্যয়ের বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যকে আরও নজর দেওয়া দরকার। সেখানে সরকারি তহবিল থেকে এভাবে পুজো কমিটিকে টাকা দেওয়া একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে একবারেই কাঙ্ক্ষিত নয় বলেই মনে করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাওরিটি এক্সপেনডিচার, ডেভেলপমেন্ট এক্সপেনডিচার, ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচারের মতো জায়গাগুলিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। এমন একটি বাজেট পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এ রাজ্যে বাস করছি, যেখানে খেয়াল রাখতে হবে স্কুল থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারি পদগুলি গড়ে ৫০ শতাংশ ফাঁকা রয়েছে। পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ এ রাজ্যে কর্মসংস্থান করতে পারছে না। কারণ, কর্পোরেট সেক্টর বিনিয়োগ করছে না। এমন রাজ্য, যেখানে অর্থনৈতিক সঙ্কট তুঙ্গে, সেখানে পুজো কমিটিতে টাকা পেলে কার না ভাল লাগে। কিন্তু এটি অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশের বিচারে কখনও কাঙ্ক্ষিত নয়।’