Garden Reach: ‘ব্যান্ডেজ মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেই সিগন্যাল দিয়েছিলেন, কী বলছেন বুঝে যাওয়া উচিত ছিল’, ববি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন

Garden Reach: বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠেছিল এলাকার কাউন্সিলরকে নিয়ে। কিন্তু কাউন্সিলরকে ক্লিনচিট দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এভাবে কি দায় এড়ানো যায়? সে প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলেছেন কলকাতা পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Garden Reach: 'ব্যান্ডেজ মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেই সিগন্যাল দিয়েছিলেন, কী বলছেন বুঝে যাওয়া উচিত ছিল', ববি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন
গার্ডেনরিচ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন মেয়রImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 23, 2024 | 1:32 PM

কলকাতা:  গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় তোলপাড় বাংলা। ১১ জনের মৃত্যু! আর তাতে টনক নড়ে প্রশাসনের।  বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠেছিল এলাকার কাউন্সিলরকে নিয়ে। কিন্তু কাউন্সিলরকে ক্লিনচিট দিয়ে ইঞ্জিনিয়রদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু প্রশ্ন তো সেখানেও। এভাবে কি আদৌ দায় এড়ানো যায়? সে প্রশ্নের উত্তরে মুখ খুলেছেন কলকাতা পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য,  গার্ডেনরিচের এই ঘটনা কলকাতা কর্পোরেশনের উপলব্ধি করার বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী নাকি এ বিষয়ে আগেই সিগন্যাল দিয়েছেন, দাবি প্রাক্তন মেয়রের।  তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো আগেই সিগন্যাল দিয়েছিলেন, তাঁর পাশে সেদিন আমি থাকলে আগেই বুঝে যেতাম।”

শোভন মুখ খুলেছেন কলকাতার বেআইনি নির্মাণ ও তার বিরুদ্ধে পুরনিগমের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে। তিনি বলেন.   “যা আমিও সেখানে গিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আর সেটা একজন ইঞ্জিনিয়র, সাব ইঞ্জিনিয়রদের পক্ষে কার্যকর সম্ভব নয়। কোনও প্ল্যান ছাড়া, সরু গলির মধ্যে পাঁচ তলা ছ’তলা বাড়ি হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনারা খুঁজছেন কাউন্সিলর জানেন কিনা, বিধায়ক জানেন কিনা, মেয়র জানেন কিনা। এগুলোর তোয়াক্কা তারা করে না। কলকাতায় এরকম পার্টিকুলার কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে কলকাতা পৌরসভার কোনও ইঞ্জিনিয়র বা সুস্থ নাগরিক প্রতিবাদ করলে নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে।”

প্রসঙ্গত,  শনিবার মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পরই রবিবার ভোরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র। সেখানে এলাকার কাউন্সিলর শামসকে পাশে দাঁড় করিয়েই ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য ছিল, “কোন বাড়ি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা তো কাউন্সিলরের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তিনি জনপ্রতিনিধি। ইঞ্জিনিয়রদের দেখার কথা কোনটা বেআইনিভাবে নির্মীত হচ্ছে।” কিন্তু এই বিষয়টিতে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন মেয়র। তিনি বলেন, “দায়িত্ব নিতে হবে কলকাতার মেয়রকেই। কর্মীর ঘাড়ে দোষ নিশ্চই, তা দেখতে হবে, অপরাধ থাকলে সাসপেনশন হবে। কিন্তু আমি মেয়র হিসাবে এমন কিছু মন্তব্য করব না, যাতে অন্য মানে হয়। দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াটা প্রশাসকের কাজ নয়। মেয়রের এলাকা বলে অবশ্যই হেডলাইন হবে। সেই দায়িত্ব নিতেই হবে।” আর কাউন্সিলর প্রসঙ্গেও তাঁর সাফ বক্তব্য, “কাউন্সিলরের যদি বেআইনি নির্মাণ প্রসঙ্গে জানা না থাকে, তাহলে তাঁর যোগ্যতাই নেই।”

পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন প্রাক্তন মেয়র। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেই সিগন্যাল দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সিগন্যাল কিন্তু ঘটনার পরই দুর্ঘটনাস্থলে এসে ব্যান্ডেজ মাথায় নিয়ে এসে দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন এটা বেআইনি। আমার পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী একথা বললে আমি কিন্তু বুঝে যেতাম, তিনি কী বলতে চাইছেন। বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার জন্য যা করার দরকার, তা করতে হবে। ”

বেআইনি নির্মাণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার কথাও TV9 বাংলায় শেয়ার করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বেহালার একটি বাড়িতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তারপর সে বলল আমি বাড়ি তৈরি করতে পারছি না। আমি নিজে গিয়ে দেখি, সেখানে একটা পুকুর। সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুমোদন বাতিল করি। আমি নিজেই অনুমোদন দিয়েছিলাম, বুঝতে পেরে, সেই অনুমোদন বাতিলও করে দিই। ”  মেয়র থাকাকালীন তাঁর কর্মজীবনের এরকম একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন শোভন। আর সে রকম জটিল পরিস্থিতিতে তিনি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই দ্বারস্থ হতেন, সেটাও বললেন। তিনি বলেন,  “আমিও তো এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। চোখের সামনে দেখছি পুরনো বাড়ি ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ছে। সেখানে বাড়ির বাসিন্দার হঠাৎ মনে পড়ে, ভিতরে কিছু সোনার গয়না রেখেছিলেন। সেটা আনতে ভিতরে ঢোকেন, আর বের হতে পারেননি। আমি মহা বিপদ পড়েছিলাম। আমি তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাই। তিনি তখন অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় উপদেশ দিয়েছিলেন। এই ধরনের ঘটনার সময়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”

প্রাক্তন মেয়রের সাফ কথা, বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে নিশ্চিতভাবে কড়া পদক্ষেপ করা যায়। বাড়িগুলো ভেঙে ফেলতে হবে, সঙ্গে যাঁরা বেআইনিভাবে বাড়ি তৈরিতে অপরাধী, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।