Arpita Mukherjee: কতদূর ছড়িয়েছে দুর্নীতির জাল? অর্পিতার ই-মেলে বিশেষ নজর! তথ্য পেতে গুগলের দ্বারস্থ ইডি

ইডি আধিকারিকরা হদিশ পেয়েছেন ভিউ মোর হাইরাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামে আরও একটি কোম্পানির। এই কোম্পানিটি নথিভুক্ত ৮ নম্বর যামিনী রায় সরণি ঠিকানায়।

Arpita Mukherjee: কতদূর ছড়িয়েছে দুর্নীতির জাল? অর্পিতার ই-মেলে বিশেষ নজর! তথ্য পেতে গুগলের দ্বারস্থ ইডি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 31, 2022 | 5:40 PM

কলকাতা: ARP, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের(Arpita Mukherjee) নামের প্রথম তিনটি অক্ষর। সেই অক্ষর দিয়ে তৈরি একটি ইমেইল আইডি। এআরপিমাইমেইল অ্যাট gmail.com। অর্পিতার বিভিন্ন লেনদেনের সূত্রও কি লুকিয়ে রয়েছে এই ইমেল আইডিতেই? বর্তমানে এই ইমেল আইডি নিয়েই জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। প্রথম দফায় ইডির(ED) আধিকারিকরা অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ডিরেক্টর পদে রয়েছেন এরকম তিনটি কোম্পানির হদিস পান। তার মধ্যে দুটো কোম্পানি সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড এবং simbiosis মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে রয়েছে। এই দুটো কোম্পানিতেই অর্পিতার যোগাযোগের ইমেইল আইডি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে এআরপিমাইমেল অ্যাট জিমেল ডট কম। 

প্রথমে বিষয়টা ইডি আধিকারিকদের অতটা নজরে না এলেও পরবর্তীতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন হাইটসের ফ্ল্যাট এর ঠিকানায় থাকা জামিরা সাবস্ক্রাইনের নথি ঘাঁটতে গিয়ে নজরে আসে গোয়েন্দাদের। ওই কোম্পানির নথিতে অর্পিতার ইমেইল আইডি এআরপি মাইমেল অ্যাট জিমেল ডট কম। সেই সূত্র ধরেই হদিশ মেলে আরও একটি কোম্পানির। তার নাম অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড। ওই কোম্পানিতে নথি অনুযায়ী কোথাও সরাসরি অর্পিতা মুখোপাধ্যায় যুক্ত নন। অন্তত খাতায়-কলমে। কিন্তু সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে অর্পিতার ওই ইমেইল আইডি। 

নজরে ভিউ মোর হাইরাইজ প্রাইভেট লিমিটেড 

আর সেই সূত্র ধরেই ইডি আধিকারিকরা হদিশ পেয়েছেন ভিউ মোর হাইরাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামে আরও একটি কোম্পানির। এই কোম্পানিটি নথিভুক্ত ৮ নম্বর যামিনী রায় সরণি ঠিকানায়। সেই ঠিকানায় পৌঁছতেই দেখা যায় এই কোম্পানিতেও কোথাও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম নেই। কিন্তু যোগাযোগের ইমেইল আইডি হিসেবে অর্পিতার সেই ইমেইল আইডি ব্যবহার করা হয়েছে। বালিগঞ্জ প্লাস ইস্টে ৮ নম্বর যামিনী রায় সরণিতে গিয়ে দেখা গেল তিন তলা বাড়ি। লোহার গেট। ভেতর থেকে তালা ঝুলছে। বহু ডাকাডাকিতেও বাড়ির বাসিন্দারা কেউ সাড়া দিলেন না। প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেল বাড়ির মালিকের নাম মনোজ জৈন। 

এক নম্বর বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের বাসিন্দা যারা বা আশেপাশের দোকানদার তারাও কেউ বলতে পারলেন না বা তাদেরও অজানা ওই বাড়িতে ভিউ মোর হাইরাইজ বলে কোনও কোম্পানি আছে বলে। শুধু তাই নয় ওই কোম্পানির যারা ডিরেক্টর সেই নামেরও কেউ ওই বাড়িতে বসবাস করেন বলে জানেন না এলাকার বাসিন্দারা। তারা শুধু জানেন দুদিন আগেই এই বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

১/১২০ শ্রী কলোনি রিজেন্ট এস্টেটে যেতেই আরও ঘনাল রহস্য

খোঁজ শুরু হল ভিউ মোর হাইরাইজের অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবে নাম থাকা দেবাশীষ দেবনাথের। মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের খাতায় দেবাশীষের ঠিকানা ১/১২০ শ্রী কলোনি রিজেন্ট এস্টেট। তস্য গলির মধ্যে এস বেস্ট টসের ছাউনি দেওয়া দের কামরার প্রায় দিন আনা দিন খাওয়া নিম্নবিত্ত মানুষের বাড়ি। ঘরে স্বচ্ছলতার ছাপ তো নেই উল্টে রয়েছে অভাবের ছবি। সেখানেই দেখা মিলল পুতুল দেবনাথের। পুতুল জানালেন দেবাশীষ তার ছেলে। দেবাশীষ বাড়ি নেই। দেবাশিষ কোম্পানির ডিরেক্টর শুনে রীতিমত হক চকিয়ে গেলেন পুতুল। পুতুল বলেন তিনি বিভিন্ন বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। ছেলে একটা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে এটুকুই জানেন তিনি।

কোথায় কাজ করেন দেবাশিষ? 

তবে আক্ষেপের সুরে পুতুল জানান, ছেলে বাড়িতে টাকা-পয়সা কিছুই দেয় না। তাই একা সংসার চালাতে হয় তাঁকে। এদিকে পুতুলের কাছ থেকে দেবাশিষের নম্বর নিয়ে তাঁকে ফোন করতেই কথা ঘোরাতে থাকেন তিবি। তাঁর দাবি তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু, কী কাজ করেন বলতে গিয়ে বারবার তিনি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করেন। পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারেন না তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর কথা থেকেই জানা গেল তিনি মনোজ জৈনর কাছে কাজ করেন। অর্থাৎ বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল। খালি ভিউ মোর ফাই রাইস নয়, জামিরা সানসাইন কোম্পানিতেও ডিরেক্টর এই দেবাশিষ। এ যেন সেল কোম্পানির চক্রের পুরনো খেলা। সংস্থার পিয়ন ড্রাইভার বাড়ির পাচক এদেরকে ডিরেক্টর বানিয়ে দেওয়া। 

গুগলের দ্বারস্থ ইডি 

ইডির গোয়েন্দাদের দাবি এখান থেকেই স্পষ্ট, কালো টাকার একটা বড় অংশ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এভাবেই বিভিন্ন জায়গায় সরিয়েছে। সেই টাকার হদিস পেতে অর্পিতার এই ইমেইল আইডি তাদের কাছে একটা বড় হাতিয়ার। সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই গুগলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ইমেইল আইডি সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে। গুগলের সাহায্যে ওই ইমেইল আইডি আর কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে? সেখানে কী কী তথ্য এসেছে সেই সমস্ত জানতে চান গোয়েন্দারা।