Belur Math: আরও দেড় হাজার বছর পথ দেখাবে বেলুড় মঠ, সেদিন বলেছিলেন স্বামীজি

Belur Math:বিবেকানন্দ সবসময় ভাবতেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁর গুরু শ্রী রামকৃষ্ণদেবের চিন্তাকে, তাঁর উদার ভাবনাকে সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা। সেই উদ্দেশ্যেই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা।

Belur Math: আরও দেড় হাজার বছর পথ দেখাবে বেলুড় মঠ, সেদিন বলেছিলেন স্বামীজি
ছবি - বিশেষ সাক্ষাৎকারে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-নিবেদিতা সম্পর্কিত গবেষণা চর্চায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ শ্রী গোপেন্দ্র চৌধুরী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 01, 2022 | 9:15 PM

কলকাতা: রামকৃষ্ণ মিশনের ১২৫ বছর পূর্তি (125th Anniversary of Ramakrishna Mission) উপলক্ষে রবিবার উৎসবের মেজাজ ছিল গোটা বেলুড় মঠেই (Belur Math)। রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশব্যাপী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন গুলিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-নিবেদিতা সম্পর্কিত গবেষণা চর্চায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ শ্রী গোপেন্দ্র চৌধুরী টিভি-৯ বাংলাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিশনের আগামীর লক্ষ্য ও কর্মসূচির নানা বিষয়ে আলোকপাত করলেন।

রামকৃষ্ণ মিশন (Ramakrishna Mission) আসলে এমন একটি সংস্থা যার ১২৫ বছর পূর্তিতে আজ সাড়া বিশ্বের মানুষ কুর্নিশ জানাচ্ছে। একটি সংস্থা যে এত বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়ে এগিয়ে চলেছে, যা দেখে গোটা বিশ্ব আজ মুগ্ধ। এর কোনও বিনাশ নেই, ধ্বংস নেই, পতন নেই। স্বামী বিবেকানন্দ যখন পাশ্চাত্যে ছিলেন তখন তিনি এই ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরির ভাবনা প্রথম ভগিনী নিবেদিতাকে বলেন। একটি সংস্থার মধ্য দিয়ে যদি জনসেবার রাস্তা নতুন করে খুলে দেওয়া যেতে পারে, তার সুফল কীভাবে একটা গোটা জাতি পেতে পারে সেই দিশাও দেখান তিনি। তাঁর স্বপ্নের সংস্থার কথা শুনে ভগিনী নিবেদিতা বলেন, “আপনি মহান মানুষ। ধন্য আপনার ভাবনা। যে জাতিতে আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন সেই জাতি ধন্য । যাঁরা আপনার সান্নিধ্য পেয়েছেন তাঁরা আজ ধন্য। যে গুরুর চরণতলে বসে, যাঁকে সামনে রেখে আপনি এই সংস্থা খুলতে চলেছেন তিনিও ধন্য। যাঁরা আগামীতে আপনাকে নিয়ে চর্চা করবে তাঁরাও সমৃদ্ধ হবেন”।

আসলে বিবেকানন্দ সবসময় ভাবতেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁর গুরু শ্রী রামকৃষ্ণদেবের চিন্তাকে, তাঁর উদার ভাবনাকে সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা। কেউ পর নয়, সমস্ত ধর্ম জগতের মানুষ, তাঁদের সমস্ত লক্ষ্যই এক। ঈশ্বর আসলে এক। প্রতিটা ধর্মে তাঁকে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয় মাত্র। মুসলিমরা তাঁকে ‘আল্লাহ’ বলে ডাকছেন, খ্রিস্টানরা তাঁকে ‘গড’ বলে ডাকছেন, হিন্দুরা তাঁকে ‘ভগবান’ বলে ডাকছেন। আসলে প্রত্যেকের লক্ষ্য একই। শ্রী রামকৃষ্ণ এটা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর কাজ, তাঁর উদ্দেশ্যের মধ্য দিয়ে। ধর্ম মতে পার্থক্য থাকলেও তাই শ্রী রামকৃষ্ণ বারবার বলতেন, “তোমাদের প্রত্যেকের কথাই সত্য। সত্যে পৌঁছনোর পথটি খানিক ভিন্ন”। তাই তিনি সবসময়ই বিধর্মী মানুষদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন। প্রত্যেকেই যেন তাঁর সন্তান, এই ভাবই ফুটে উঠত তাঁর জীবন দর্শনের মধ্য দিয়ে। তাই শ্রীরামকৃষ্ণ দেব আজও এতটা প্রাসঙ্গিক।

১৮৯৭ সালের ১ মে স্বামী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতায় বলরাম বসুর বাড়িতে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। আজ সেই মিশন ১২৫ বছর পার করে ১২৬ বছরে পা দিতে চলেছে। কিন্তু যেদিন রামকৃষ্ণ মিশন তৈরি হয় সেদিন সন্ধ্যাতে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “আমি তিন পা এগিয়েছি। ৫ পা পিছিয়ে এসেছি। সম্প্রদায় যুক্ত পৃথিবীতে আরও একটি সম্প্রদায় তৈরি করার জন্য শ্রী রামকৃষ্ণের জন্ম হয়নি। তিনি প্রত্যেকটি ধর্মের সমৃদ্ধির জন্য তিনি তাঁর জীবন দিয়ে গিয়েছেন। এমনকী সর্বধর্ম সমন্বয়ের ব্রতও নিজের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যত মত তত পথের দিশারি হয়ে উঠেছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সার্থকতা এখানেই যে তাঁরা শুধু তাদের সদস্যেদের নিজেদের মুক্তির জন্য সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেননি। জগতের কল্যাণের মধ্য দিয়ে নিজের মুক্তি খোঁজা তাঁদের মূল উদ্দেশ্য”। সহজ কথায় রামকৃষ্ণ মিশন নামের মধ্যেই লুকিয়ে আসল রহস্য, আসল উদ্দেশ্য। যে সংস্থার মূল মিশনই হচ্ছে রামকৃষ্ণ। রামকৃষ্ণের ভাবদর্শের প্রচার তাদের মুখ্য কাজ। আজ শুধু রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দিরে রামকৃষ্ণ নেই। তাঁর বাগানে রয়েছেন ফুলের আকারে, গোশালায় রয়েছেন গরুর আকারে, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল সহ প্রতিটা সেবাস্থানে তিনি রয়েছেন। মনে রাখতে হবে, রামকৃষ্ণ মিশন শুধু ১২৫ বছরের কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। আধ্যাত্মিকতার পথে, ত্যাগের পথে দেড় হাজার বছর চলার জন্যই তার প্রতিষ্ঠা। বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার সময় যা নিজের মুখে বলে গিয়েছিলেন স্বয়ং বিবেকানন্দ।

আরও পড়ুন- ত্যাগের পথই ঈশ্বরের পথ! বেলুড় মঠে পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ দেবের ১৮৬তম জন্মতিথি