Subhaprasanna on Mamata’s award : মমতার একেকটা ছবি বিক্রি ১ লক্ষে, ২০ শতাংশ টাকা রাখলে না, বলেছিলেন শুভাপ্রসন্ন

Subhaprasanna on Mamata's award : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। এই নিয়ে সমালোচনার জন্য বিরোধীদের আক্রমণ করলেন শুভাপ্রসন্ন।

Subhaprasanna on Mamata's award : মমতার একেকটা ছবি বিক্রি ১ লক্ষে, ২০ শতাংশ টাকা রাখলে না, বলেছিলেন শুভাপ্রসন্ন
টিভি নাইন বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকার শুভাপ্রসন্নর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 7:02 PM

কলকাতা : কবিতা বিতান কাব্যগ্রন্থের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরস্কৃত করেছে বাংলা সাহিত্য আকাদেমি। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মমতার আঁকা ছবি বহু মূল্যে বিক্রি নিয়েও সরব বিরোধীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে একসময় ছবি আঁকার কিছু কাজ শিখিয়েছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন (Subhaprasanna)। মমতার ছবি বেশি দামে বিক্রি নিয়ে কী বলছেন তিনি? মমতাকে পুরস্কৃত করা নিয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। এই নিয়ে তাঁর বক্তব্য কী ? টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন শিল্পী।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি ‘নিরলস সাহিত্য সাধনার’ জন্য মমতাকে পুরস্কৃত করেছে বাংলা সাহিত্য আকাদেমি। এই নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর নিন্দুকদের আক্রমণ করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। মমতার পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের ঈর্ষাকাতর বলেন তোপ দাগেন। তারপরই তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ থাকলে নিজের হাতে মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন।”

তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে শোরগোল পড়ে। কিন্তু, কেন এমন মন্তব্য করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিলেন শুভাপ্রসন্ন। একান্তে সাক্ষাৎকারে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ মধ্যম মানের ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করতেন। কারণ, রবীন্দ্রনাথ জানতেন, তাতে তাঁর খ্যাতি কমবে না । গৌরব বাড়বে।”

তিনি বলেন, পুরস্কার নিয়ে প্রাপক এবং যাঁরা দিয়েছেন তাঁদের কোনও অস্বস্তি নেই। কয়েকজন শিল্পী কেন প্রতিবাদ করছেন, তা বুঝতে পারছেন না শুভাপ্রসন্ন। তিনি বলেন, “শিল্পীদের কেন এই ধরনের অহংকার থাকবে। আমার থেকে অযোগ্য লোক পুরস্কার পেয়েছে ধরে নিয়ে কেন নিজের শংসাপত্র ফেরত দেব। হয়তো এমনও একদিন আসবে, যেদিন বলা হবে, তিনি যে পুরস্কার পেয়েছেন, সেই পুরস্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন বিশ্ববন্দিত নেত্রী পেয়েছেন।”

যাঁরা মমতাকে পুরস্কৃত করেছেন, তাঁদের চাটুকারিতা করার কোনও প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন শুভাপ্রসন্ন। বলেন, “বাংলা সাহিত্য আকাদেমিতে থাকা ব্রাত্য বসুর চাটুকারিতা করার কোনও প্রয়োজন নেই। সুবোধ সরকার যেটুকু চাটুকারিতা যদি করে থাকে, করেছে। এখন এই পুরস্কার দেওয়ার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।” মমতার পুরস্কার প্রাপ্তিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে মমতার দশটা ভোট বাড়বেও না, কমবেও না।

শুধু কবিতা লেখা নয়, ছবিও আঁকেন মমতা। তাঁর সেই ছবি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। মমতার ছবি বেশি দামে বিক্রি হওয়া নিয়ে সমালোচনার জন্য বিরোধীদের আক্রমণ করলেন শুভাপ্রসন্ন। একান্তে সাক্ষাৎকারে স্মৃতিতে ডুব দিয়ে ফিরে গেলেন মমতার প্রথম ছবি প্রদর্শনীর দিনে।

শুভাপ্রসন্ন বলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতার সঙ্গে আমার পরিচয়। একদিন আমায় বললেন, আমি ছবি আঁকি। যদি আমার ছবির একটা প্রদর্শনী করে দেন।” সেইমতো মমতার বাড়িতে গিয়ে শুভাপ্রসন্ন দেখেছিলেন, চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে ছবি। মমতার ১৫০ ছবির মধ্যে ৪২ টা ছবি বেছে প্রদর্শের ব্যবস্থা করেন শুভাপ্রসন্ন। ১১ টি ছবি এক লাখ টাকা করে বিক্রি হয়।

এর পরের ঘটনায় অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শুভাপ্রসন্ন। নন্দীগ্রামের কৃষকদের ডেকে কাউকে ১০ হাজার, কাউকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন তৃণমূল নেত্রী। দেখা যায়, প্রদর্শনীর সব টাকাই তিনি নন্দীগ্রামের কৃষকদের দিয়ে দিয়েছেন। তখন শুভাপ্রসন্ন মমতাকে বলেছিলেন, পরের প্রদর্শনীর জন্য তো ২০ শতাংশ টাকা রাখতে পারতে।

স্মৃতির সরণি বেয়ে মমতাকে তাঁর ছবি আঁকা শেখানোর দিনগুলি মনে করলেন শুভাপ্রসন্ন। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পরিচয়ের পর একাধিকবার আমার বাড়িতে এসেছেন মমতা। প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার মিটিং হত। তখন চারকোল দিয়ে কিছু কাজ শিখিয়েছিলাম।” তবে স্বীকার করলেন, মমতার ছবি আঁকায় তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি।

শিল্পী মমতাকে তিনি কীভাবে দেখেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “মমতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছবি আঁকেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও উনি নিজের একটা ধরন তৈরি করেছেন, সেটা সহজ নয়। মমতা এককালে প্রচুর ডিজাইন তৈরি করতেন। এখন তো পটপট করে ডিজাইন করেন।” মমতা একবার তাঁর আঁকা ছবিতে পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, সেটা মেনে নেন বলে জানান শুভাপ্রসন্ন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতার ছবি বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ নিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “মমতার ছবির দাম নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বহু লোককে জবাবদিহি করতে হয়েছে। আমার তো একসময় ছবির দাম ছিল ৫ হাজার। এখন ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়।” তিনি বলেন, তাঁরা ছবির দাম নির্ধারণ করেন না। তাঁদের ছবির মূল্যায়ন করে গ্যালারি।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংকে ছবি আঁকা শিখিয়েছিলাম। পরে তাঁর ছবি আমার ছবির ১০-১৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এতে আমার খারাপ লাগেনি।”

মমতার ছবি বেশি দামে বিক্রি নিয়ে সমালোচনার জন্য বিরোধীদের আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, “বিশ্বের কোথাও এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ বিরোধী পক্ষ দেখিনি। তারাই নানা রকম ভাবে মমতাকে দমানোর চেষ্টা করেছে ।”