TV9 Bangla Explained: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ২০১৪ বনাম ২০১৭? টেট উত্তীর্ণদের দ্বন্দ্ব কোথায়?

TET 2014 and TET 2017: ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের অবস্থানের পাল্টা অবস্থান ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের। জমায়েতের পাল্টা জমায়েত। কিন্তু, কেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধল ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের?

TV9 Bangla Explained: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ২০১৪ বনাম ২০১৭? টেট উত্তীর্ণদের দ্বন্দ্ব কোথায়?
বাম দিকে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীরা এবং ডান দিকে ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীরা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 22, 2022 | 5:25 PM

কলকাতা: চাকরির দাবি। দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আচমকা নতুন মোড়। আন্দোলন শুরু হয়েছিল টেট চাকরিপ্রার্থী (TET Agitation) বনাম রাজ্যের শিক্ষা দফতরের। আরও স্পষ্ট করে বললে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের (TET 2014)। কিন্তু আন্দোলন ৪ দিনে পড়তে না পড়তেই তা বদলে যায় দুই ব্যাচের টেট পাশদের লড়াইয়ে। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের অবস্থানের পাল্টা অবস্থান ২০১৭ সালের (TET 2017) টেট উত্তীর্ণদের। জমায়েতের পাল্টা জমায়েত। কিন্তু, কেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধল ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের?

ঠিক কী দাবি ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের?

২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীদের দু-দফায় নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা একবার নিয়োগ পেয়েছেন ২০১৬ সালে। আরেকবার ২০২১ সালে। দু-দফায় চাকরি পেয়েছেন প্রায় ৫৯ হাজার টেট উত্তীর্ণ। তারপরও বহু চাকিরপ্রার্থী ‘নট ইনক্লুডেড ইন দ্য মেরিট লিস্ট’ অবস্থায় রয়ে গিয়েছেন। চাকরির দাবিতে আন্দোলনে মূলত তাঁরাই। তাঁদের দাবি, মানিক ভট্টাচার্য পর্ষদ সভাপতি থাকাকালীন নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, তার জেরেই বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। তাই ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রত্যেককে নিয়োগ দিতে হবে। সেই দাবিতে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে একশোরও বেশি দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সোমবার থেকে সেই আন্দোলন এসে পড়ে একেবারে পর্ষদের সামনে। অবস্থান মঞ্চ ২৪ ঘণ্টা পরে পরিণত হয় অনশন মঞ্চে।

ঠিক কী দাবি ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের?

২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তিতে যাঁরা টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন, তাঁরা ফল পান ২০২১ সালে। টেট উত্তীর্ণ হন ৯৮৯৬ জন। তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে। তাই দ্রুত নিয়োগ চান তাঁরা। পাশাপাশি পর্ষদের কাছে তাঁদের আবেদন নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি দেওয়া হোক শুধু তাঁদেরই। যে ১১ হাজার ৭৬৫ শূন্য়পদ ঘোষণা করেছে পর্ষদ, তার যোগ্য দাবিদার তাঁরাই। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া হোক তাঁদের। সেই দাবিতে বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামেন তাঁরা। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থানে বসেন।

কেন ২০১৪ বনাম ২০১৭?

রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা জেলে। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার করা হয়েছে মানিক ভট্টাচার্যকে। নিয়োগ দুর্নীতিতে বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য সরকার। তারপর ধার বেড়েছে আন্দোলনের। নিয়োগের দাবিতে ধর্মতলা পরিণত হয়েছে ‘ধর্নাতলা’য়। ৬টি মঞ্চ ধর্মতলা জুড়ে আন্দোলনে রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই দাবি, শিক্ষা দফতর যেন দ্রুত চাকরি দেয়। তবে চাকরি চাইতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা। ২০১৪-এর চাকরিপ্রার্থীরা চাইছেন শূন্যপদে নিয়োগ হোক শুধু তাঁদের। আবার ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা চান তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ না করে ২০১৪ সালের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

নিজেদের দাবির সপক্ষে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের যুক্তি-

১. তাঁরা ২ বার ইন্টারভিউ দিয়েও চাকরি পাননি। ২. নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে তাঁরা ফের বঞ্চিত হবেন। কারণ, অ্যাকাডেমিক স্কোরে এগিয়ে ২০১৭ সালের চাকরিপ্রার্থীরা। ৩. তাঁরা ৮ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন তাঁদের চাকরি হবে, তাই তাঁদের চাকরি দেওয়া হোক। ৪. তাঁদের অনেকের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁরা নতুন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণই করতে পারবেন না। তাই বিনা শর্তে তাঁদের চাকরি দেওয়া হোক।

অন্যদিকে ২০১৭ সালের চাকরিপ্রার্থীদের যুক্তি-

১. এনসিটিই নির্দেশিকা মেনে প্রশিক্ষণ নিয়ে টেটে বসেছিলেন তাঁরাই। ২. তাঁদের জন্য ঘোষিত শূন্য়পদে কেন ভাগ বসাবেন ২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীরা? ৩. তাঁদের টেটর প্রশ্ন কঠিন হয়েছিল, পাশ করেছেন মাত্র ৫ শতাংশ। তাই তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এসএলএসটি উত্তীর্ণরা। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের মেধা তালিকায় অঙ্কিতা অধিকারীর ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে এটা স্পষ্ট, নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। মেধা তালিকায় নিচের দিকে নাম থাকা অনেকে দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছেন। ফলে তাঁরা চাকরি পাননি। তাঁদের দাবি, এসএলএসটি-তে ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা প্রত্যেককে চাকরি দিতে হবে। এই নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। সরকার আদালতে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে। এক, ‘ব্যতিক্রমীদের’ বহাল রেখেই ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া। আর দ্বিতীয় হল, ‘ব্যতিক্রমীদের’ সরিয়ে ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে বলে সরকারের বক্তব্য। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের দ্রুত চাকরি দেওয়া হোক।

মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির নীচে আন্দোলন করছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বক্তব্য, আট বছর ধরে বঞ্চনার শিকার তাঁরা। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে আপার প্রাইমারিতে ১৫৮৫ জনকে চাকরিপ্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকছে এসএসসি। আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধু ১৫৮৫ জনকে ডাকলে হবে না। তাঁদের সবাইকে ডাকতে হবে।

রাজ্য গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। তাঁদের অভিযোগ, নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। অনেক নিয়োগ আটকে রয়েছে। তাঁদের চাকরি দেওয়া হোক। আবার এসএসসি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা পথে নেমেছেন। বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এসএসসি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, এতে স্পষ্ট যে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে।