সোমবারই বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব পেশের সম্ভাবনা, কোন অবস্থান নেবে বিজেপি?
West Bengal Assembly: সোমবার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাবের আলোচনায় বিজেপি বিধায়কদের অবস্থান কী হয়, তার হিসাবনিকাশ করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
কলকাতা: ইতিহাসের পাতায় এতদিন পরিচয় ছিল বঙ্গভঙ্গের (BangaVanga) সঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, এবার কি বঙ্গ রাজনীতির হাত ধরে আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে এই শব্দ? গত কয়েকদিনে কখনও আলাদা রাঢ়বঙ্গের দাবি, কখনও আবার উত্তরের জেলা ভাগ করে পৃথক রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবির কথা শোনা গিয়েছে। কখনও সরব হয়েছেন বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের একাংশ, কখনও আবার কোনও সংগঠন। আর এবার এই ‘বঙ্গভঙ্গ’-এর ‘প্রস্তাব’-এর বিরোধিতায় বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে চলেছে রাজ্যের সরকারপক্ষ। ১৮৫ ধারায় সেই প্রস্তাব আনবে তারা। ঘটনাচক্রে, এদিন দলের সমস্ত বিধায়ককে বিধানসভায় হাজির থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল পরিষদীয় নেতৃত্ব। রাজনীতির কারবারিদের মতে, বাংলা ভাগের ‘প্রস্তাব’-এর বিরুদ্ধে দলীয় অবস্থানের জোরাল প্রমাণ দিতেই বিধায়কদের হাজিরার বিষয়ে নির্দেশ জারি করেছে রাজ্যের শাসকদল। অতীতে বা সম্প্রতি, বারবার বাংলার ভাগের চর্চার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এমনকী এ কথাও তাঁরা বলেছেন, এখানে কোনও উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গ নয়। একটাই বঙ্গ। তা হল পশ্চিমবঙ্গ। অন্যদিকে বিজেপির শিবিরে এই বিষয় নিয়ে নানা মতই শোনা গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা, বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার মতো কেউ কেউ সরাসরি বাংলা ভাগের দাবি করেছেন। আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক প্রশাসনিকভাবে এই দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগের কথা বলেছেন। পাশাপাশি সরাসরি বাংলা ভাগের কথা না বললেও বারবার উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদাররা। অন্যদিকে বাংলা ভাগ নিয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ, জন বার্লাদের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত বলেও মন্তব্য করেছেন বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এমনকী রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল বা জঙ্গলমহল আলাদা করার দাবিও কখনও কখনও করেছেন এ রাজ্যের বিজেপির কোনও কোনও জন প্রতিনিধি। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এহেন অবস্থায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব এনে বিজেপিকে নিশানা করাই নয়, বাংলা বিভাজনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ঐক্যের চেহারা তুলে পাল্টা আবেগের রাজনীতিতে শান দিতে চাইছে শাসক দল।
সোমবার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাবের আলোচনায় বিজেপি বিধায়কদের অবস্থান কী হয়, তার হিসাবনিকাশ করছেন রাজনীতির কারবারিরা। বিরোধী শিবিরের বিধায়করা আবেগের কথা বলবেন না কি দলীয় অবস্থানেই সুর মেলাবেন, সেদিকেই নজর রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের। সোমবারের প্রস্তাব-আলোচনায় অংশ নিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীরা।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব সর্বদলীয়ভাবে পাশ হবে বিধানসভায়? নাকি শাসক ও বিরোধীদের আলাদা অবস্থান হবে? নাকি উত্তরবঙ্গ বা জঙ্গলমহলের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে সায় দেবে বিজেপি? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সোমবার বিধানসভায়। এ বিষয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য,এই প্রস্তাব পাশ হলে তা তাঁরা দিল্লিকে জানিয়ে দেবেন। জানিয়ে দেবেন, তাঁরা বাংলা ভাগের বিরোধী।