এই প্রথম ব্রিগেডে কংগ্রেসকে নিয়ে সভা বামেদের, কী কী বললেন সিপিএম নেতারা?
‘শান্তিনিকেতন’ হলেও নিলাম করব, বললেন সেলিম, সূর্যকান্তের কথায়, মানুষ কিছু বললে তা মাথা পেতে নিতে হবে
কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটকে সামনে রাখে রবিবারের দুপুরে এই প্রথম কংগ্রেসের হাত ধরে ব্রিগেডের ময়দানে সভা করল বামেরা। ছিলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)-এর নেতা আব্বাস সিদ্দিকি। কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফের জোটের জট কাটেনি। তা সরিয়ে রেখেই বাম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ব্রিগেডের মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন সিদ্দিকি। ব্রিগেড মঞ্চ থেকে কী বললেন সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা।
সীতারাম ইয়েচুরি:
একুশের ভোট ত্রিশঙ্কু হলে তৃণমূল নেত্রী বিজেপির সঙ্গে জোট গড়বে বলে কটাক্ষ করে এসেছেন সূর্যকান্ত মিশ্ররা। এবার সেই একই দাবি করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকও। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে তাঁর কটাক্ষ, ” আমাকে এক জন জিজ্ঞাসা করলেন ত্রিশঙ্কু হলে কী করবেন? আমি বললাম, আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। উনিই তো বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করেন। কারণ এটাই ওঁর চরিত্র।” অধীর চৌধুরী, ভূপেশ বাঘেল, আব্বাস সিদ্দিকিদের পাশে দাঁড়িয়ে ইয়েচুরির ঘোষণা, ব্রিগেডের সমাবেশ বোঝাচ্ছে বাংলায় পরিবর্তন আনবে এই সংযুক্ত মোর্চা।
কেন্দ্রীয় সরকাররকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন চলছে, অনেকে শহিদ হয়েছেন, কিন্তু মোদীর ভ্রূক্ষেপ নেই। তবে মোদী সরকার না সরলে এই আন্দোলন চলবে। সেই সময়েই এই সংযুক্ত মোর্চার জন্ম, দাবি সীতারামের। ভোটের সময় অর্থ ছড়ানো নিয়েও বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন তিনি। বলেন, বিজেপিকে কারা এত অর্থসাহায্য করে তা জানা যায়না। এ রাজ্যে সারদা, নারদা হয়েছে। আসলে বিজেপি ও তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে তোপ দাগেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, দেশ জুড়ে বেকারত্ব সমস্যা, মোদী সরকার তার কোনও প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। বিজেপি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করছে, কিন্তু এই লুঠপাটের সরকার বা জাতপাতের সরকার দরকার নেই। আমাদের দরকার জনহিতের সরকার। বলেন সীতারাম।
সূর্যকান্ত মিশ্র:
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, এই ব্রিগেড সমাবেশ যাতে প্রচার না পায় তার চেষ্টা হয়েছিল। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘তরজা গান’ আসলে তৈরি করা বলে তোপ সূর্যের। তাঁর কথায়, এ সব তরজা চালিয়ে মানুষকে শোষণ করা হচ্ছে। বেকারদের কাজ নেই। তাঁর দাবি সব শূন্যপদে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ চাই। মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা চাই। সেই সঙ্গে দলের নেতাকর্মিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “আমাদের কথা সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।” সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, আমাদের কথা নয়, মানুষের সঙ্গে কথা হবে, জানতে হবে তাঁরা কী চান তাঁরা। মানুষ কিছু বললে তা মাথা পেতে নিতে হবে।” পাশাপাশি তৃণমূলের দলত্যাগীদের নিয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এমন করেছেন পুরো দলটাই বিজেপি হয়ে গিয়েছে।
তবে সূর্যর মন্তব্য, জোট নয়, শেষ কথা বলবে মানুষের ঐক্য। তাই মানুষকে এই লড়াইয়ে পাশে পেতেই হবে। বিকল্পের জন্য সংগ্রাম জরুরি, বার্তা সূর্যকান্তের।
মহম্মদ সেলিম:
সিপিএমের বক্তা হিসেবে পরিচিত মহম্মদ সেলিম এদিন কার্যত আগুনে ভাষণ করেছেন। বলেন, “আমরা এমন তাপ বাড়াব যে তৃণমূল গলে জল হয়ে গেলেও বিজেপি বাষ্প হয়ে যাবে।” সেলিমের তোপ, এক দশক ধরে দিদি-মোদীর খেলা চলছে। এ বার ওদের মাঠ থেকে নকআউট করতে হবে। সেলিমের কথায়, এক দিকে দলবদলের লড়াই, আর এক দিলে চলছে দিনবদলের লড়াই। দলবদলুদের নিয়ে কটাক্ষ শানিয়ে তিনি বলেন, কাকের বাসায় কোকিলের ডিম ফুটে আবার (তারা) ফিরে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফের রাজ্যের চিটফান্ড মামলার কথা তুলে ধরেন। মমতার সরকারকে খোঁচা দিয়ে তাঁর মন্তব্য, নীল-সাদা রঙ করলেই উন্নয়ন হয় না। সেলিমের কথায়, “রাজ্যে দিদির লুঠ, কেন্দ্রে মোদীর লুঠ। লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তাই একসঙ্গে লড়তে হবে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর বার্তা, “আমরা ক্ষমতায় এলে যারা লুঠ করেছে তাদের বাড়ি, সে ‘শান্তিনিকেতন’ হলেও নিলাম করব। সমস্ত শূন্যপদ পূরণ করব। নিয়মিত এসএসসি হবে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হবে।”
দেবলীনা হেমব্রম:
সুবক্তা হিসেবে পরিচিত সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম এদিন ব্রিগেড থেকে ঘোষণা করেন, সব সম্প্রদায়ে দু’টো ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। তাদের মারতে গেলে ভ্যাকসিন প্রয়োজন নেই। আমরাই যথেষ্ট। তাঁর আরও কটাক্ষ, বিজেপি বলছে সোনার বাংলা গড়বে। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপি আর বিজেপি থেকে তৃণমূল হচ্ছে। তৃণমূলকে ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে তাঁর কটাক্ষ, ভোটে জিতলে আবার ওরা কাটমানি খাবে। তাই তৃণমূল ও বিজেপির ধর্মের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দেন দেবলীনা।