Attack on TV9 Bangla: ‘ফেসবুক লাইভে বল বিভাস অধিকারী ভাল মানুষ’, আক্রান্ত সুজয়ের কলমেই রইল ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা

Birbhum: বিভাস অধিকারীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার টিভিনাইন বাংলার সাংবাদিকরা। মৌচাকে ঢিল পড়তেই বুঝি রাগ হল?

Attack on TV9 Bangla: 'ফেসবুক লাইভে বল বিভাস অধিকারী ভাল মানুষ', আক্রান্ত সুজয়ের কলমেই রইল ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা
টিভি নাইন বাংলার সাংবাদিক সুজয় পাল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 27, 2023 | 11:09 PM

সুজয় পাল

নিয়োগ দুর্নীতিতে বিভাস অধিকারীর নামে নানা অভিযোগ ওঠে। এরপরই আমাদের অফিস থেকে পাঠানো হয় বিভাস অধিকারীর প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য। প্রয়োজনে তাঁকে লাইভে বসানোরও কথা বলা হয়। উনি তাঁর বক্তব্য বলবেন। রবিবারই বীরভূম পৌঁছে যাই। সোমবার গিয়েছিলাম নলহাটিতে ওনার গ্রামের বাড়িতে। বাড়ি নয়, সাম্রাজ্য বলা চলে। প্রথমে ওনার আশ্রমের মেন গেটে পৌঁছই। কারণ আমার কাছে খবর ছিল উনি আশ্রমেই থাকেন। ওখানে যেতেই দ্বাররক্ষী আমাদের পরিচয় জেনে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুতেই ঢুকতে দেননি। দারোয়ান জানান, এখানে বিভাস অধিকারী নেই। কোথায় আছেন, জানেন না। জানতাম আশ্রমের পাশেই তাঁর বি.এড কলেজ-সহ একাধিক কলেজ আছে। আমরা সেগুলি ঘুরে দেখি। সেখান থেকে আমরা খবর করে অফিসে পাঠাই।

এরপর আবার আশ্রমের সামনে যাই। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খোলেননি। এরপর ওনার বাড়ির দিকে এগোই। দেখি ১০-১২ ফুটের উঁচু একটা পাঁচিলে ঘেরা চারতলা বাড়ি। সিসি ক্যামেরায় ঘেরা। লোহার গ্রিল এমনভাবে তৈরি, মাছিও গলতে পারবে না। গেট থেকে ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া পাইনি। এরপর ওনার বাড়ির সামনে থেকে একটা ওয়াক থ্রু করে বেরিয়ে আসি।

বেরোনোর সময় দেখি নীচের একটা ঘরের জানলা খোলা। একজন ভদ্রমহিলা নিজেকে আড়াল করছেন। জানলার বাইরে থেকেই নিজের পরিচয় দিই। উনিও বলেন, উনি বিভাস অধিকারীর মা। ক্যামেরা অন রেখেই ওনার সঙ্গে কথা হয়। উনি বলেন, ছেলের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছে মিথ্যা। সব কথা রেকর্ডও হয়।

সেখান থেকে বেরোচ্ছি যখন, দেখি কয়েকটা ছেলে বাইক নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন। আমরা বলিও, ফলো করছেন? ক্যামেরার সামনে বিভাস অধিকারী কেমন সেটা বলুন না। ওনারা বলতে রাজি হননি। এরপর আবার আশ্রমের দিকে যেতে যাই। একেবারে কাছে চলে গিয়েছি, তখন ২টো বাইক এসে থামে।

দেখি বাইকের সামনে ‘অন ডিউটি’ লেখা। সরকারি কাজে যুক্ত থাকলে যেমন লেখা থাকে। বিভাস অধিকারীর ছেলের ছবি দেখেছি। বাইকে বসে থাকা একজনের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। আমি গাড়ি থেকে নামতে যাব, তার আগেই টেনে হিঁচড়ে আমাকে নামানো হল গাড়ি থেকে। আমি কোনও কথা বলার আগেই কলার ধরে পেটে, হাতে, বুকে ঘুষি চালাতে থাকে। পুরোটা নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভাস অধিকারীর ছেলেরা। আশ্রমের দারোয়ান থেকে শুরু করে সব চলে এসেছে ততক্ষণে। গণপ্রহার চলল আমার উপর।

আমি একটু দূরে ছিটকে যেতেই, একজন বলে মোবাইলটা কেড়ে নে। আবার এসে আমাকে ধাক্কা মারে। আমি গিয়ে রাস্তার ধারে পড়ি। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়। বলে মোবাইল ভেঙে ফেলবে। জলে ফেলে নষ্ট করে দেবে। আমি হাতেপায়ে ধরি। মায়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি কাগজপত্র রয়েছে, ওটা করবেন না। অনেক বোঝানোর পর মোবাইল ফোনটা নষ্ট করেনি।

এরপর নিয়ে গেল আশ্রমের ভিতর। সেখানে ঠান্ডা জল খেতে দিল। এরপর আবার শুরু হয় জুলুমবাজি। ওদের বক্তব্য, কেন বিভাস অধিকারীর খবর হচ্ছে? আমরা বোঝাতে চাই, আমরা নিরপেক্ষ। কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। ওরা বলছে মানহানির মামলা করব। ভিতরে শুনছি কয়েকজন বলছে, খুন করে ফেলে রেখে দেব, কেউ টের পাবে না। আমার সঙ্গে আমার সহকর্মী রজত শিকদার ছিল, আমাদের গাড়ির চালক রাজীব নাগ ছিলেন। তাঁকেও নানাভাবে হেনস্থার চেষ্টা করা হয়।

ঘণ্টাখানেক আশ্রমে বন্দি। ততক্ষণে ক্যামেরা ভেঙে চুরমার। অফিসের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না। এরপর ওরা শর্ত দেয়, বিভাস অধিকারীর বিরুদ্ধে আমরা যা খবর সকাল থেকে দেখিয়েছি সব ভুল বলে ভিডিয়ো করতে হবে। আশ্রমের বাইরে বের করে এনে বলে ভিডিয়ো করে অফিসকে পাঠাতে। অফিস তা সম্প্রচার করলে তারপর ছাড়বে। চলছে তুই তোকারি। ফেসবুক লাইভ কে বিভাস অধিকারীর সব ভাল বলতে বলা হল। অফিসে যোগাযোগ করে টিভি নাইন বাংলার ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন হই।

রিপোর্টার সুজয় পাল ও চিত্র সাংবাদিক রজত শিকদার

তবে অফিসকে আমি কিছুই জানাতে পারছি না তখন। কারণ আমার ফোন স্পিকারে। ওরা সব শুনছে। এরপর ফেসবুক লাইভে আমাকে ওদের শেখানো মতো বলতে হয় বিভাস অধিকারী ভাল মানুষ, পরোপকারী। তবে আমার কথায় অফিসের সন্দেহ হয়। এরপরই থানায় যোগাযোগ করা হয়। স্থানীয় থানায় সবটা জানায়। এরপর জাতীয় সড়কের কাছে এসে পুলিশ আমাদের সঙ্গে দেখা করে। রামপুরহাট হাসপাতালে মেডিক্যাল করায়। তারপর নলহাটি থানায় গোটা ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করি। পেনকিলার খেয়েছি। তবে একসঙ্গে এতজনের এভাবে মার, ব্যথাটা রয়েছে।