Madan Mitra: মমতার কাছে অনুরোধ, ব্যাপারটাকে প্রতিহিংসায় নিয়ে যাবেন না: মদন

Madan Mitra: মদন বলেন, "আমি আপনার ভবানীপুরের ভোটার। আমার পরিবার তৃণমূলকে‌ই ভোট দিয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে যাব না। বিজেপি-সিপিএম করব না।"

Madan Mitra: মমতার কাছে অনুরোধ, ব্যাপারটাকে প্রতিহিংসায় নিয়ে যাবেন না: মদন
মদন মিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 20, 2023 | 6:44 PM

কলকাতা: ‘কালারফুল বয়’ এবার আর বেলাগাম নন, বরং বিদ্রোহের সাদা-কালো সরণিতেই হাঁটলেন। একদা এসএসকেএম-এর বেতাজ বাদশা মদন মিত্র যে সহসা এই ‘বেইজ্জত’ মেনে নিতে পারছেন না, তা সুস্পষ্ট এদিনের বেপরোয়া বোল-চালে। সশরীরে রোগী ভর্তি করাতে গিয়ে চরম বিফল মদন যে প্রয়োজনে বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করতেও পিছপা হবেন না তা এদিন টিভি নাইন বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন।

কোন ঘটনায় এত প্রতিক্রিয়া?

শুক্রবার রাতে এসএসকেএম (SSKM)-এ রোগী ভর্তি করাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন মদন মিত্র (Madan Mitra)। তিনি কাঠগড়ায় তুলেছিলেন হাসপাতালের পরিষেবাকে। এরপর শনিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে পাল্টা কড়া বার্তা দেন এস‌এসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “সব রোগীকে ভর্তি করতে পারব তা নয়। ভর্তি করতে না পারলে আমরা দালাল, আমাদের ডাক্তার, সিস্টার সকলে খারাপ, তাঁদের বংশপরম্পরা নিয়ে নানা মন্তব্য , এটা সহ্য করার মতো জায়গায় আমরা নেই।” হাসপাতালে ‘হুলিগানিজম’ অর্থাৎ গুন্ডামি চলেছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন এস‌এসকেএমের ডিরেক্টর। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “সে যেই হোক না কেন, হাসপাতালের ভিতরে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা বরদাস্ত করব না।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে জানান, শুক্রবার যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে সবটা দেখেছেন। তারপরও যে হেনস্থার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

মদন-বাণ

গতরাতে রোগী ভর্তি করাতে না পারা মদন তৃণমূল সরকার পরিচালিত রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটির করুণ পরিষেবা এবং অকর্মণ্যতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, এদিন এসএসকেএম-এর ডিরেক্টরের সাংবাদিক বৈঠকের পর সেই ক্ষোভ পরিণত হয় সোজাসুজি বিদ্রোহে। দল এবং দলনেত্রীর নাম উল্লেখ করে মুহুর্মুহু অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করতে দেখা যায় মদনকে। এসএসকেএম-এর ডিরেক্টরের প্রসঙ্গ উঠতেই মদন সটান বলেন, “এসব চাকর বাকরের কথা আমাকে বলবেন না। এই ডিরেক্টরের আমলে পিজিতে সবথেকে বেশি দালালি চলছে। ৫০ হাজার, ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।” এর পরই মদন-সংযোজন, “অনেকে বলছিলেন, আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মুখ ফুটে বলবেন গত ৫ বছরে তিনি ৫ মিনিট কথা বলেছেন কি না? উনি তো নিশ্চয়ই আমাকে সে জায়গায় রাখেননি, যেখানে ওনার সঙ্গে আলোচনা করব।”

এখানেই শেষ নয়। মদন মিত্র আরও বলেন, “আমি ২৩ মাস কাস্টডিতে থেকেছি। তবে বলব, দয়া করে আমার পরিবারের উপর কিছু করবেন না। আমি বলব, যা করার আমার উপর করুন। পরিবারকে করবেন না। আমি তো আপনারই কেন্দ্রের ভোটার। প্রথম দিন থেকে তৃণমূল করছি। খালি আমার পরিবারের উপর যেন কিছু না হয়।” তবে দল ছাড়বেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মদন। কিন্তু, মদন মিত্রকে তো তৃণমূলের তরফে কেউ প্রকাশ্যে কোনও বার্তা দেননি। তাহলে তিনি কেন পরিবারের উপর আক্রমণের আশঙ্কা করছেন? জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলী মদন মিত্র কি তাহলে বুঝতে পারছেন যে তাঁর কৃত কর্মের ফলে প্রলয় ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে?

দল তুমি কার?

এদিনের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রীকে উল্লেখ করে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেও আবার তাঁকেই নেত্রী বলে মেনে নিয়েছেন মদন। আবার সেই মদন মিত্রকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়তে শোনা গিয়েছে যখন তিনি বলেন, “এ দলটা কার? এ দলটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল নাকি? এই দলটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল নাকি? এ দলটা আমাদের সবার দল। এটা বাংলার মা-মাটি-মানুষের দল। না হলে তো লেখা থাকত ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল কংগ্রেস প্রাইভেট লিমিটেড। লেখা তো নেই। এটা আমারও পার্টি। আমি ছাড়তে যাব কেন? এই দলে অন্যদের যা অবদান আছে, তার কম অবদান আমারও নেই। কারও শরীরে যেমন আঘাতের চিহ্ন আছে, তেমন আমার শরীরে ২৩ মাস জেল খাটার চিহ্ন আছে।” উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়শই বলতে শোনা যায়, বাম আমলে তাঁকে একাধিকবার শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরে তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই অথবা বিকল। ফলে, ‘কারও শরীরে যেমন আঘাতের চিহ্ন’ বলে কি মদন এদিন সরাসরি মমতাকেই কটাক্ষ করলেন, উঠছে সঙ্গত প্রশ্ন।

বলা যাবে না

এসএসকেএম-র ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে যথেষ্ট কড়া বার্তা দেন। তিনি জানান, সকালে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন এ নিয়ে। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মদন মিত্রের কাছে জানতে চান, তিনি কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন না? তিনি তো দলীয় বিধায়ক! মদন মিত্র তখন বলেন, “আমি শুনেছি উনি নাকি কথা বলতে চেয়েছিলেন। এটা শোনার পর ফোন করি। ফিরহাদ হাকিম আমাকে বললেন…। যাই হোক, যা বললেন সেটা আমাদের মধ্যেই থাক।” যে মদনের মুখে এদিন কার্যত কোনও বাঁধই ছিল না, সেই মদন হঠাৎ ফিরহাদ হাকিমের নাম বলেও কী কথা হয়েছে তা কেন বলতে পারলেন না, এই সংযম নিয়েও বিস্তর জল্পনা তৈরির সম্ভবনা রয়েছে।

প্রতিহিংসা তত্ত্ব

সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ প্রসঙ্গ তুলে মদন মিত্র এদিন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে আমার এমএলএ পদ খারিজ করে দিতে পারেন। তাও রাজি আমি। এমনিই ছেড়ে দেবো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার অনুরোধ, আপনি যা করবেন করুন। আমার উপর করুন। বুক পেতে নিচ্ছি। যদি বলেন ভবানীপুর থানায় রোজ হাজিরা দিতে হবে, তাতেও রাজি। তবে আমার পরিবারের উপর কিছু করবেন না। আমরা ভবানীপুরের দেড়শো বছরের বাসিন্দা। এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন না, যাতে আমার মতো লক্ষ লক্ষ কর্মীর মনে হয় এটা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জায়গায় চলে যাচ্ছে।” কোন প্রতিহিংসার কথা বলছেন মদন? কোন হিংসার প্রেক্ষিতে প্রতিহিংসা? তাহলে কি মদন শুক্রবার রাতে এসএসকেএম-এ হিংসাত্মক কাজ করেছেন? ডিরেক্টরের ‘হুলিগান’ শব্দ প্রয়োগ কি তাহলে যথার্থ? কিন্তু মদন তো বলেছেন, তিনি গুন্ডামি করেননি। তাহলে কি অন্য কোনও হিংসা এবং প্রতিহিংসার গন্ধ পাচ্ছেন মদন?

মদন কো গুসসা কিউ আতা হ্যায়?

‘সামান্য’ একটি রোগীকে ভর্তি করা নিয়ে জল এক দূর গড়াতে দিলেন কেন মদন? তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এটা নেহাতই একটা উপলক্ষ। আসলে দীর্ঘদিন ধরে দলে ও প্রশাসনে গুরুত্ব না পাওয়া মদন অনেক দিন ধরেই হতাশ। মমতা তাঁর সঙ্গে বিগত ৫ বছরে ৫ মিনিটও কথা বলেননি, দাবি মদনের। তিনি এর আগেও সে কথা ঠারে ঠোরে বুঝিয়েছেন। কিন্তু যে পিজি হাসপাতালে বাম আমলেও কার্যত তাঁর শাসন চলত, সেই খাস তালুকে এমনভাবে অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি মদন মিত্র। আর সেখান থেকেই এদিনের উদ্গীরণ। তবে আরেকটি মহলের মতে, হাই ভোল্টেজ আইনি লড়াইয়ের মাঝে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেদিন সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করছে, মমতা যেদিন তাঁর সরকারের এক যুগ পার করার কথা স্মরণ করিয়ে টুইট করছেন, ঠিক সেদিনই মদনের এমন বিদ্রোহ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।  এখন দেখার তৃণমূল-মদনের এই সংঘাত কি আরও বাড়বে নাকি ওহ্ লাভলি বলে রণে ভঙ্গ দেবেন মিত্র মদন।