Sagardighi: কেন মুখ ফেরাল সংখ্যালঘুরা? কোন কোন ভুলগুলো খুঁজে বার করল তৃণমূল

Sagardighi: তবে সবথেকে বেশি যে তত্ত্ব উঠে এসেছে, তা হল প্রার্থী নির্বাচন। একটা বড় অংশের মানুষের অপছন্দ ছিল শাসকদলের প্রার্থী। সূত্রের খবর, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা একটা বড়সড় ভুল হয়েছে বলেই নেতারা স্বীকার করেন পর্যালোচনা বৈঠকে।

Sagardighi: কেন মুখ ফেরাল সংখ্যালঘুরা? কোন কোন ভুলগুলো খুঁজে বার করল তৃণমূল
জয়ের আবীরের রংবদল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 04, 2023 | 2:43 PM

কলকাতা: সাগরদিঘির (Sagardighi) উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার এবং সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত কেন্দ্রে শাসকদলের এই হারকে গভীর ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনেকেই বলছেন, সংখ্যালঘু ভোট সরছে শাসকদলের কাছ থেকে। এই আলোচনা সমালোচনার মাঝখানেই সাগরদিঘি নিয়ে শুক্রবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিল তৃণমূল মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব। পর্যালোচনায় উঠে এসেছে বহুদিক। এই হারের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দিকও উঠে এসেছে বলে সূত্রের খবর।

সূত্রের খবর, এই উপনির্বাচনকে কার্যত স্থানীয় ভোট হিসাবে ধরে নিয়েছিলেন শাসকদলের একাংশ। সাগরদিঘির ভোট সরকার গড়ার ভোট ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী গড়ারও ভোট ছিল না। ফলে রাজ্য রাজনীতির মূল লড়াই বা দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিত ছিল অনুপস্থিত। সাগরদিঘির নির্বাচন হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় ভোট। আর প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক সমীকরণ।

আরও একটি বিষয় উঠে আসছে। জেলা তৃণমূলের পর্যালোচনা বৈঠকে এদিন পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করা হয়েছে, শতাংশের বিচারে তৃণমূলের ভোট কমেনি। বৈঠকে যে পরিসংখ্যান পরিবেশিত হয়, তা এই রকম- ২০১১ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট পায় ৩৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে একলা লড়ে তৃণমূল পায় ২৮ শতাংশ ভোট। ২০২১ সালে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট দাঁড়ায় ৫১ শতাংশে। ২০২৩ সালে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে হেরে গেলেও তৃণমূল পেয়েছে ৩৫ শতাংশ ভোট। সূত্রের খবর, পর্যালোচনা বৈঠকে উঠে এসেছে, তৃণমূলের ভোট কমেনি। বিরোধী দলগুলির জোট হয়েছে। যার সুফল পেয়েছে কংগ্রেস।

তবে সবথেকে বেশি যে তত্ত্ব উঠে এসেছে, তা হল প্রার্থী নির্বাচন। একটা বড় অংশের মানুষের অপছন্দ ছিল শাসকদলের প্রার্থী। সূত্রের খবর, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা একটা বড়সড় ভুল হয়েছে বলেই নেতারা স্বীকার করেন পর্যালোচনা বৈঠকে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দেবাশিস ঘোষিতভাবেই এলাকায় সুব্রত সাহার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোটের হয়ে এবং ২০২১ সালে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে তিনি কাজ করেছেন বলে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের দাবি। ফলে এহেন এক ব্যক্তিকে প্রার্থী করায় এলাকায় সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় বিধায়ক-মন্ত্রীর পরিবার এবং অনুগামীরা কার্যত বেঁকে বসেন।

শুক্রবারের পর্যালোচনা বৈঠকে ছিলেন নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল। তিনি আবার জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানও। তিনি বলেন, “সাগরদিঘিতে আমাদের ফলাফল কেন খারাপ হল তা নিয়ে পর্যালোচনা করলাম। প্রতি ব্লক থেকে অবজার্ভার এসেছিলেন। তাতে বেশ কিছু রিপোর্টও উঠে এসেছে। তবে সবটা আমরা মেনে নিতে পারিনি। এটা নিয়ে আবারও রিভিউ মিটিংয়ে বসব। তারপর সংবাদমাধ্যমের সামনে সব বলব। ঘাটতি ছিল না আমাদের কোথাও। তারপর পরাজয়। তাই পর্যালোচনা করা হল।”

অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোটের ভাঁড়ারে হাত পড়া নিয়ে লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি বলেন, “এমন অনেক বুথ আছে, যেখানে সম্পূর্ণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার। তৃণমূল সেখানেও লিড পেয়েছে। আমাদের দলের সমর্থনটাই ৩৫ শতাংশ সাগরদিঘিতে। ২০১১ থেকে ফলাফল দেখলেই বোঝা যাবে। এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন লক্ষ্য। কর্মী-নেতা সকলেই ভাল কাজ করেছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কোঅর্ডিনেশনের অভাব এসব কথা কোনও দল সফল না হলেই বলা হয়।”

একইসঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও এই ‘বিপর্যয়’-এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক যেকোনও মূল্যেই তৃণমূলের সঙ্গে থাকবে, এই আত্মবিশ্বাস প্রথম থেকেই শাসকদলের। এমনও অভিযোগ, অতি প্রত্যয়ের কারণে স্থানীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যা এত বছরের জেতা আসন ছিনিয়ে নিল তৃণমূলের কাছ থেকে।

যদিও এ বিষয়ে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে। একটা উপনির্বাচনের ফল দেখে গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। সংখ্যালঘুরা এ রাজ্যে সুরক্ষিত। সাগরদিঘিতে কী হয়েছে জানি। এখানে বলার কিছু নেই।” অন্যদিকে আরেক তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ও বলেন, “আমি কোনও সরলীকরণে বিশ্বাসী নই। আমি আত্মবিশ্বাসী, সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। একটি আসনের ফলাফল নিয়ে এইভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা যায় না।”